টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত করাচি
মঙ্গলবার সকাল থেকে করাচির বিভিন্ন এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বহু সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং বড় অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। করাচি ট্রাফিক পুলিশ নাগরিকদের সতর্ক হয়ে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট
করাচি ট্রাফিক পুলিশের বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিটের হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়, দক্ষিণ জেলার ক্যাপ্রি চক-নুমায়েশ চৌরঙ্গি, লিয়াকত হাইওয়ে, বাবা উর্দু চক, এমএ জিন্নাহ রোডসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট তৈরি হয়।
পূর্ব জেলায় বাহাদুরাবাদ, ইউনিভার্সিটি রোড, সেন্ট্রাল জেলায় লাসবেলা চক, গুরুমন্দির, জামশেদ রোড, পশ্চিম জেলায় গুলবাই চক, লাকড়িগোদি, ডাব্বা মোর, মালিরে জাতীয় মহাসড়ক ও জিন্নাহ এভিনিউতে ধীর গতিতে যান চলাচল হয়।
পুলিশ পরামর্শ দিয়েছে হঠাৎ ব্রেক না টানতে, ধীরে চলতে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে।

প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সতর্ক
সিন্ধ প্রদেশের প্রধান সচিব আসিফ হায়দার শাহ জেলা প্রশাসন, প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ), স্বাস্থ্য বিভাগ ও রেসকিউ ১১২২-কে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে বৃষ্টির পানি সরানোর ব্যবস্থা করতে এবং আবহাওয়া অফিস ও পিডিএমএ’র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতে বলেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, “সব ডেপুটি কমিশনারকে মাঠে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি সামলাতে হবে।”
আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও বৃষ্টির পরিমাণ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যে, মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে নাজিমাবাদে ৭৬.৯ মিমি। এরপর উত্তর করাচি ৫৬.৮ মিমি, সুরজানি টাউন ৩৬ মিমি, গুলশান-ই-হাদিদ ৩৫ মিমি, ওরাঙ্গি টাউন ৩১.২ মিমি, কিয়ামারি ৩০ মিমি, সাদী টাউন ২৪ মিমি, ডিএইচএ ফেজ-৭ এ ১৫ মিমি এবং করাচি বিমানবন্দর এলাকায় ১৩ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতা ৮৫ শতাংশ।

পরবর্তী কয়েক দিনের পূর্বাভাস
বিকেল ৪টার বুলেটিনে পিএমডি জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন সিন্ধ ও বেলুচিস্তানের বহু এলাকায় ভারী বর্ষণ হতে পারে। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর থেকে প্রবল মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করছে। ফলে করাচি, হায়দরাবাদ, মিরপুরখাস, থারপারকার, উমেরকোট, সুক্কুর, লারকানা এবং আশপাশের জেলাগুলোতে ১৯ থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বেলুচিস্তানের বারখান, লোরালাই, সিবি, খুজদার, গওয়াদরসহ একাধিক জেলায়ও একই সময়ে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করেছে যে, এতে নগর বন্যা ও আকস্মিক পাহাড়ি বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।
জরুরি বৈঠক ও প্রস্তুতি
একদিন আগে সিন্ধের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ জরুরি বৈঠক করেন। তিনি স্থানীয় সরকার, প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলেন এবং বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর নির্দেশ দেন।
.jpg)
করাচিতে বৃষ্টি জরুরি অবস্থা ঘোষণা
করাচি মেট্রোপলিটন করপোরেশনের (কেএমসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে মেয়র মুরতাজা ওয়াহাব শহরে বৃষ্টি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। সব সরকারি ছুটি বাতিল করে জরুরি সেবার কর্মীদের সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি কেএমসি’র অগ্নিনির্বাপণ, পৌরসভা ও উদ্ধার বিভাগকে রেইন ইমার্জেন্সি সেল খোলার নির্দেশ দেন।
পুলিশ ও রেসকিউর উদ্যোগ
করাচি পূর্ব জোন পুলিশ ডিআইজি ড. ফাররুখ আলির নির্দেশে পুলিশও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সব এসএইচও ও কর্মকর্তাদের এলাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে, যাতে জলাবদ্ধতা নিরসন, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা এবং জরুরি পরিস্থিতি সামলানো যায়।
পুলিশ জনগণকে অযথা চলাফেরা এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়েছে এবং জরুরি প্রয়োজনে ১৫ নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
ট্রাফিক পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নাজিমাবাদ আন্ডারপাসে পানি জমে যাওয়ায় যান চলাচল বিকল্প পথে চালানো হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “কোনো বড় সমস্যা নেই, পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।”
মৌসুমি বৃষ্টির প্রভাব
প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাত করাচিসহ গোটা অঞ্চলে হয়। এটি গরম কমাতে ও পানির উৎস পুনরায় ভরাতে সহায়ক হলেও একইসঙ্গে শহরে জলাবদ্ধতা, ভূমিধস, বন্যা এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 
















