হোয়াইট হাউসে বৈঠক ও নতুন ঘোষণা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠকের ব্যবস্থা করছেন। এর পর ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে, যেখানে তিনি নিজেও অংশ নেবেন।
এই ঘোষণা আসে হোয়াইট হাউসে একাধিক বৈঠকের পর। ট্রাম্প আলাদাভাবে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং মার্কিন সেনাদের সহায়তার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন। পরে তিনি জেলেনস্কি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জসহ ইউরোপের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যৌথ বৈঠক করেন।
শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তির সম্ভাবনায় সবাই খুশি।” তিনি জানিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করে বৈঠকের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সেই বৈঠকের পর ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
এ ছাড়া বৈঠকে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নিশ্চয়তা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে মতবিরোধ
তবে যুদ্ধবিরতির সময়সূচি নিয়ে মতবিরোধ রয়ে গেছে। জার্মান চ্যান্সেলর মের্জ বলেছেন, বৈঠকের আগে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেন, তাঁর পূর্ববর্তী ছয়টি সংঘাত সমাধানে কোনো যুদ্ধবিরতি ছিল না; সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই অগ্রগতি হয়েছে।
ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার পক্ষ থেকেও বৈঠকের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ট্রাম্প ফোনালাপে সরাসরি রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনার পক্ষে মত দেন। পুতিনের সহকারী ইউরি উশাকভ জানান, আলোচনার পর্যায়কে আরও উচ্চস্তরে উন্নীত করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
জেলেনস্কির সমর্থন
ট্রাম্পের পাশে বসে জেলেনস্কি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ভূমিকার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাই। কূটনৈতিক উপায়ে এই যুদ্ধ শেষ করা সম্ভব।” তিনি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাবকে ইতিবাচক সংকেত হিসেবে উল্লেখ করেন।

ট্রাম্প-পুতিন সম্পর্ক ও সমালোচনা
এর আগে আলাস্কার অ্যানকোরেজে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক হয়, যা তুলনামূলক সৌহার্দপূর্ণ ছিল। তবে ট্রাম্প কঠোর পরিণতির হুমকি থেকে সরে আসায় সমালোচনা দেখা দেয়। পরবর্তী দিনগুলোতে ট্রাম্পকে পুতিনের অবস্থানের দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখা গেছে, যা ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বিগ্ন করেছে।
ইউক্রেনের ভূমি ছাড়ের শর্ত
ট্রাম্পের সর্বশেষ অবস্থান একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির দিকে, যেখানে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে। তবে জেলেনস্কি পূর্বেই জানিয়েছেন, এ ধরনের ছাড় তিনি মেনে নেবেন না। ট্রাম্প আরও বলেন, ক্রিমিয়া আর ফেরত পাওয়া যাবে না এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পথও বন্ধ।
ইউরোপীয় নেতাদের চাপ
ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে সাতজন ইউরোপীয় নেতা ওয়াশিংটনে যান। তাদের মধ্যে ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টার্মার এবং ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে।
তাদের উপস্থিতি মূলত ট্রাম্পকে পুতিনের কাছ থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
![]()
ন্যাটো অস্ত্র ক্রয় ও মার্কিন সেনাদের সম্ভাব্য ভূমিকা
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ন্যাটো ইউক্রেনের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র, বিশেষত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, কিনতে পারে। এছাড়া মার্কিন সেনারা অংশ নেবে কি না, সে বিষয়েও তিনি খোলাসা না করে বলেছেন, “এ বিষয়ে হয়তো পরে জানানো হবে।”
যুদ্ধবিরতি নিয়ে চূড়ান্ত মতভেদ
যদিও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছেন, তবু যুদ্ধবিরতি ছাড়া বৈঠক অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয় বলে মের্জ ও ম্যাক্রোঁ স্পষ্ট মত দেন। ম্যাক্রোঁ বলেন, যুদ্ধবিরতি ইউরোপের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য এবং পরবর্তী ধাপে একটি চতুর্পক্ষীয় বৈঠকের প্রয়োজন হবে।
এই ধারাবাহিক বৈঠক ও আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নতুন কূটনৈতিক মোড় নিচ্ছে। তবে যুদ্ধবিরতি ও ভূখণ্ড ছাড়ের প্রশ্নে মতভেদ কাটিয়ে ওঠা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

















