হোটেল বন্ধের আদেশ
যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের এক রায়ে সরকারের আশ্রয় নীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেল। আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে এসেক্সের এপিং এলাকার বেল হোটেল আর আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল অভিবাসীকে হোটেলটি ছেড়ে যেতে হবে।
এপিং ফরেস্ট জেলা কাউন্সিল আদালতে জানায়, হোটেলটি আর হোটেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে না; এটি সরাসরি পরিকল্পনা অনুমতির লঙ্ঘন। আদালত তাদের পক্ষে রায় দেয় এবং হোটেলটি বন্ধের নির্দেশ জারি করে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও নতুন মামলা
রায়ের পরপরই কনজারভেটিভ ও রিফর্ম ইউকে দল নেতারা বলছেন, অন্যান্য স্থানীয় কাউন্সিলও এখন একই পথে মামলা করতে পারে। হোম অফিস শেষ মুহূর্তে মামলায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। তাদের আইনজীবীরা সতর্ক করেছিলেন যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত আশ্রয়প্রার্থী থাকার জায়গার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে এবং সহিংস প্রতিবাদের ঝুঁকি বাড়াবে।
রিফর্ম ইউকে দল নেতা নাইজেল ফারাজ লিখেছেন, তার দলের নিয়ন্ত্রণাধীন ১২টি কাউন্সিল একই ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেবে। তিনি জনগণকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মাধ্যমে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আদালতে যেতে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান।
সম্ভাব্য প্রভাব
অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের ছায়ামন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ বলেছেন, অনেক কাউন্সিল এখন একই ধরনের পদক্ষেপ নেবে, যা সরকারের আশ্রয়নীতি ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তিনি সতর্ক করেছেন যে এ কারণে স্থানীয় এলাকায় অপরাধের ঝুঁকি, বিশেষ করে যৌন হামলার মতো অপরাধ, আরও বাড়ছে।
হর্টফোর্ডশায়ারের ব্রক্সবোর্ন কাউন্সিল জানিয়েছে, তারাও নিজ এলাকায় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ব্যবহৃত একটি চারতারা হোটেল বন্ধের পদক্ষেপ নিতে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে।
বাড়তি উত্তেজনা
আগামী ব্যাংক হলিডে সপ্তাহান্তে ওয়েকফিল্ড, গ্লস্টার, স্টিভেনেজ, নিউক্যাসল ও ব্রিস্টলসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিবাসী হোটেলের সামনে প্রতিবাদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। অন্তত এক ডজন সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে, যার মধ্যে কিছু ডানপন্থী ও পাল্টা আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত।
হোম অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ২০০টি হোটেল এখনো আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার জন্য ব্যবহার হচ্ছে। এ সংখ্যা গত বছরের সমান। এদিকে চলতি বছরই প্রায় ২৮ হাজার অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে।
বিতর্কিত ইতিহাস
বেল হোটেল প্রথমে ২০২০ সালে কনজারভেটিভ সরকারের সময় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য খোলা হয়। তবে গত বসন্তে তখনকার অভিবাসনমন্ত্রী রবার্ট জেনরিক এটি বন্ধ করেন। পরে লেবার সরকার নির্বাচনের পর চ্যানেল পাড়ি দেওয়া অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আবার এটি চালু করে।
কিন্তু গত মাসে হোটেলের এক ইথিওপীয় বাসিন্দা হাদুশ কেবাতু (৪১) একাধিক যৌন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সরকারের অবস্থান
সীমান্ত নিরাপত্তামন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা ইগল বলেছেন, সরকার ভাঙা আশ্রয় ব্যবস্থা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। তিনি জানান, একসময় ৪০০টিরও বেশি হোটেল আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য খোলা ছিল। লক্ষ্য হলো এই সংসদীয় মেয়াদের মধ্যেই সব হোটেল বন্ধ করা।
তিনি বলেন, আদালতের এই রায় খতিয়ে দেখা হবে। তবে বিষয়টি এখনো বিচারাধীন থাকায় বিস্তারিত মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
এক লেবার সূত্র অভিযোগ করেছে, কনজারভেটিভ নিয়ন্ত্রিত এপিং কাউন্সিল আগে এ সিদ্ধান্ত নেয়নি, এখন তারা রাজনৈতিকভাবে রিফর্ম ইউকের মতো অবস্থান নিচ্ছে। তাদের মতে, কনজারভেটিভ ও রিফর্ম নেতারা প্রতিবাদকে উসকে দিচ্ছেন।
আদালতের যুক্তি ও পরবর্তী পদক্ষেপ
বিচারপতি আইয়ার জানান, হোটেলের সামনে আইনসম্মত বিক্ষোভ হয়েছে এবং স্থানীয়দের জীবনে কিছুটা বিঘ্ন ঘটিয়েছে। তাই ভারসাম্যের দিক বিবেচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এপিং ফরেস্ট কাউন্সিলের নেতা ক্রিস হুইটব্রেড বলেছেন, অন্যান্য কাউন্সিলও তাদের এলাকায় একই ধরনের পরিকল্পনা অনুমতি ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে পারে। তিনি হোম অফিসকে দোষারোপ করে বলেন, তারা শুরু থেকেই স্থানীয় কাউন্সিলের মতামত শোনেনি।
সরকার এখন হোটেলের বিকল্প হিসেবে খালি বাড়ি, অব্যবহৃত টাওয়ার ব্লক, ছাত্রাবাস ও পুরনো কলেজগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে।
হাইকোর্টের রায়ে এপিং-এর বেল হোটেল ছাড়তে হবে অভিবাসীদের
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১২:২৬:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
- 74
জনপ্রিয় সংবাদ




















