ধারাবাহিক উত্থানের পটভূমি
টোকিওর শেয়ারবাজার সোমবার আবারও ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। মাত্র পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সর্বকালের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে বাজার। বিশ্ব অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমতে পারে—এমন আশায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও জোরদার হয়েছে। একই সঙ্গে ইউক্রেনে শান্তির সম্ভাবনা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সূচকের নতুন রেকর্ড
জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক সোমবার সকালে লেনদেন শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখী হয়। দিনের বেশিরভাগ সময় সূচক ইতিবাচক অবস্থানে ছিল। এক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৪৩,৮৩৫.১২ পয়েন্টে পৌঁছে যায় এবং শেষে ০.৭৭% বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩,৭১৪.৩১ পয়েন্টে বন্ধ হয়—যা একটি নতুন রেকর্ড।
এটি এক সপ্তাহের মধ্যে চতুর্থবারের মতো সর্বোচ্চ সমাপনী রেকর্ড। এদিন সুজুকি মোটরের শেয়ার মূল্য ১০.২% বেড়েছে, ইসেতান মিৎসুকোশি ৭.৭৯% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাজার মূলধনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় কোম্পানি টয়োটা মোটর ১.৭১% উঁচুতে দিন শেষ করেছে।

ইয়েনের দুর্বলতা
দিনের লেনদেনে ইয়েন সামান্য দুর্বল হয় এবং বিকেলের দিকে প্রায় ১৪৭.২ ইয়েনে স্থিতিশীল হয়। বিশ্লেষকদের মতে, বাজার এখন গতি ও আস্থার জোরে চলছে। কিছু দিন নির্দিষ্ট কোনো খবরে প্রভাবিত না হয়েও সূচক রেকর্ড ভাঙছে।
সপ্তাহজুড়ে ওঠানামা
গত সপ্তাহে মঙ্গলবার ও বুধবার টানা রেকর্ড ভাঙলেও বৃহস্পতিবার কিছুটা পতন হয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট মন্তব্য করেছিলেন যে জাপানের সুদের হার বাড়ানো উচিত। শুক্রবার আরেকটি সর্বকালের উচ্চতায় না পৌঁছালেও, জাপানের অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলাফল দেখানোর কারণে সূচক আবারও রেকর্ড সমাপনী উচ্চতায় পৌঁছে।
জিডিপি ও অর্থনৈতিক প্রবণতা
এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে জাপানের প্রকৃত জিডিপি বার্ষিক হিসাবে ১% বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি টিকে ছিল মূলত রপ্তানির ওপর, যা ২% বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং কর্পোরেট মূলধনী বিনিয়োগ ১.৩% বেড়েছে। তবে ভোক্তা ব্যয়, যা জিডিপির অর্ধেকের বেশি, মাত্র ০.২% বৃদ্ধি পেয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বাস্তব মজুরি কমিয়ে দিয়েছে এবং পরিবারের ব্যয় সংকুচিত করেছে।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস
দাইওয়া ইনস্টিটিউট অব রিসার্চের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রবৃদ্ধি বার্ষিক হিসাবে প্রায় ০.৬% হ্রাস পেতে পারে। এর মূল কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব ধীরে ধীরে রপ্তানিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সুদের হার নিয়ে সম্ভাবনা
রয়টার্সের জুলাই মাসের জরিপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ আশা করছেন, বছরের শেষ নাগাদ ব্যাংক অব জাপান অন্তত ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার বাড়াতে পারে। বর্তমানে সুদের হার ০.৫% রয়েছে, যা জানুয়ারির নীতিগত বৈঠকের পর থেকে অপরিবর্তিত আছে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
এই সপ্তাহের শেষে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইয়োমিং অঙ্গরাজ্যের জ্যাকসন হোলে বৈঠকে বসবেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বক্তৃতা দেবেন। তাঁর বক্তব্য বাজারে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















