০৫:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
লেবাননের শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ নিহত, নতুন সহিংসতার আশঙ্কা ‘আমার কোনও দোষ ছিল না, কিন্তু আমাকে সব কিছু হারাতে হয়েছে’ ‘সুইম শেডি’ নাম নিয়ে আইনি লড়াইয়ে এমিনেম দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের উপকূলীয় শহর ওওইতায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, পুড়ল শতাধিক ঘর বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুতে এগোচ্ছে জাপান গ্রাহকদের ভোগান্তি কমছে না, এবার রবির বিরুদ্ধে অভিযোগ — জিপি ও বাংলালিংকের আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে শিশু নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি ভারতের স্পষ্ট বার্তা: যেখানেই হোক, সন্ত্রাস দমনে অভিযান চালানোর পূর্ণ অধিকার আছে ইভি আর স্মার্ট গ্যাজেটের জোরে দ্বিগুণের বেশি মুনাফা দেখাল শাওমি ভারতের রেড ফোর্ট হামলার উদ্ধার হওয়া ভিডিও: আত্মঘাতী হামলার সাফাই দিচ্ছিলেন উমর উন-নবী

ভারত ৮০ টাকায় কাঁচা মরিচ দিলেও দেশের বাজারে ৩০০ টাকা

আমদানি স্বাভাবিক, তবু দাম চড়া

যশোরের শার্শার বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচের আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও খুচরা বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়েছে দাম। ভারত থেকে কেজি-প্রতি সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় আমদানি হওয়া মরিচ বর্তমানে বাজারে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চলতি আমদানির পরিসংখ্যান

গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) একদিনেই ১১টি ট্রাকে ১৬৫ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ দেশে প্রবেশ করেছে। এক মাসে শুধুমাত্র বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৫২১ মেট্রিক টন। প্রতিদিনই এখানে গড়ে ১৫০-২০০ মেট্রিক টন মরিচ আমদানি হচ্ছে।

উৎপাদন কমে যাওয়ার প্রভাব

দেশে অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে কাঁচা মরিচের উৎপাদন কমে গেছে। এ ঘাটতি পূরণে ভারত থেকে মরিচ আনা হলেও খুচরা বাজারে এর প্রতিফলন ঘটছে না। ক্রেতারা বলছেন, পর্যাপ্ত আমদানি সত্ত্বেও কার্যকর তদারকির অভাবে দাম কমছে না।

দাম বাড়ার কারণ

১৫ দিন আগেও বাজারে প্রতি কেজি মরিচের দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় চারগুণ হয়েছে। আমদানিকারকদের দাবি, তারা ন্যূনতম মুনাফা নিয়ে বিক্রি করলেও সরবরাহকারীদের হাতবদল হয়ে খুচরা বাজারে দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।

বেনাপোলের এক আমদানিকারক জানান, মরিচের বড় অংশ ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে আনতে হচ্ছে। বন্দরে সব খরচ মিটিয়েও দাম পড়ছে সর্বোচ্চ ৮০-৮৫ টাকা। খুচরা বাজারে এভাবে দাম বাড়াকে তারা অযৌক্তিক মনে করেন।

শুল্কের বিষয়টি

বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি মরিচ আমদানির ক্ষেত্রে সরকারকে ৩৬ টাকা শুল্ক দিতে হয়। শুল্ক কমানো গেলে আমদানির ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে। ফলে সাধারণ ক্রেতারা কম দামে মরিচ কিনতে পারবেন।

স্থানীয় বাজারের সংকট

বেনাপোল বাজারের ব্যবসায়ী আনন্দ বাণিজ্য ভাণ্ডারের মালিক আনন্দ জানান, অধিকাংশ মরিচ বিভাগীয় ও জেলা শহরে চলে যায়। স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। তবে আমদানির পরিমাণ আরও বাড়লে দাম কমতে পারে।

ক্রেতাদের ক্ষোভ

স্থানীয় ক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, বাজারে সঠিকভাবে তদারকি না হওয়ায় মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সাধারণ মানুষের জন্য এটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রশাসনিক ব্যাখ্যা

বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ জানান, বাজারের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে মরিচ আমদানি বেড়েছে। বন্দরে ট্রাক প্রবেশের পর দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়, যাতে সরবরাহে দেরি না হয়।

ভারতের কাঁচা মরিচ আমদানির পরও কেন দাম নিয়ন্ত্রণে নয়

যদিও ভারত থেকে নিয়মিত কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে, সরকার কার্যকরভাবে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। এর মূল কারণ হলো খুচরা বাজারে পর্যাপ্ত মনিটরিং না থাকা, ব্যবসায়ীদের একাধিক হাতবদলের সুযোগ পাওয়া এবং

 পাইকারি ও খুচরা স্তরে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি। ফলে আমদানির প্রকৃত সুফল সাধারণ ভোক্তারা পাচ্ছেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, শক্তিশালী বাজার নজরদারি ব্যবস্থা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো না গেলে দাম স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়।
আমদানি বনাম খুচরা দাম

প্রতিদিন আমদানিকৃত মরিচ: ১৫০–২০০ মেট্রিক টন
আমদানির দাম (ভারত থেকে): কেজি-প্রতি ৮০–৮৫ টাকা
খুচরা বাজারের দাম (বাংলাদেশে): কেজি-প্রতি ২৮০–৩০০ টাকা
ব্যবধান: প্রতি কেজিতে প্রায় ২০০ টাকার পার্থক্য
আমদানি বাড়লেও কাঁচা মরিচের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে না আসায় ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুল্ক হ্রাস এবং বাজারে কঠোর তদারকি থাকলে এই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

লেবাননের শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ নিহত, নতুন সহিংসতার আশঙ্কা

ভারত ৮০ টাকায় কাঁচা মরিচ দিলেও দেশের বাজারে ৩০০ টাকা

০১:১৬:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

আমদানি স্বাভাবিক, তবু দাম চড়া

যশোরের শার্শার বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচের আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও খুচরা বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়েছে দাম। ভারত থেকে কেজি-প্রতি সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় আমদানি হওয়া মরিচ বর্তমানে বাজারে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চলতি আমদানির পরিসংখ্যান

গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) একদিনেই ১১টি ট্রাকে ১৬৫ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ দেশে প্রবেশ করেছে। এক মাসে শুধুমাত্র বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৫২১ মেট্রিক টন। প্রতিদিনই এখানে গড়ে ১৫০-২০০ মেট্রিক টন মরিচ আমদানি হচ্ছে।

উৎপাদন কমে যাওয়ার প্রভাব

দেশে অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে কাঁচা মরিচের উৎপাদন কমে গেছে। এ ঘাটতি পূরণে ভারত থেকে মরিচ আনা হলেও খুচরা বাজারে এর প্রতিফলন ঘটছে না। ক্রেতারা বলছেন, পর্যাপ্ত আমদানি সত্ত্বেও কার্যকর তদারকির অভাবে দাম কমছে না।

দাম বাড়ার কারণ

১৫ দিন আগেও বাজারে প্রতি কেজি মরিচের দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় চারগুণ হয়েছে। আমদানিকারকদের দাবি, তারা ন্যূনতম মুনাফা নিয়ে বিক্রি করলেও সরবরাহকারীদের হাতবদল হয়ে খুচরা বাজারে দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।

বেনাপোলের এক আমদানিকারক জানান, মরিচের বড় অংশ ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে আনতে হচ্ছে। বন্দরে সব খরচ মিটিয়েও দাম পড়ছে সর্বোচ্চ ৮০-৮৫ টাকা। খুচরা বাজারে এভাবে দাম বাড়াকে তারা অযৌক্তিক মনে করেন।

শুল্কের বিষয়টি

বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি মরিচ আমদানির ক্ষেত্রে সরকারকে ৩৬ টাকা শুল্ক দিতে হয়। শুল্ক কমানো গেলে আমদানির ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে। ফলে সাধারণ ক্রেতারা কম দামে মরিচ কিনতে পারবেন।

স্থানীয় বাজারের সংকট

বেনাপোল বাজারের ব্যবসায়ী আনন্দ বাণিজ্য ভাণ্ডারের মালিক আনন্দ জানান, অধিকাংশ মরিচ বিভাগীয় ও জেলা শহরে চলে যায়। স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। তবে আমদানির পরিমাণ আরও বাড়লে দাম কমতে পারে।

ক্রেতাদের ক্ষোভ

স্থানীয় ক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, বাজারে সঠিকভাবে তদারকি না হওয়ায় মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সাধারণ মানুষের জন্য এটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রশাসনিক ব্যাখ্যা

বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ জানান, বাজারের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে মরিচ আমদানি বেড়েছে। বন্দরে ট্রাক প্রবেশের পর দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়, যাতে সরবরাহে দেরি না হয়।

ভারতের কাঁচা মরিচ আমদানির পরও কেন দাম নিয়ন্ত্রণে নয়

যদিও ভারত থেকে নিয়মিত কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে, সরকার কার্যকরভাবে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। এর মূল কারণ হলো খুচরা বাজারে পর্যাপ্ত মনিটরিং না থাকা, ব্যবসায়ীদের একাধিক হাতবদলের সুযোগ পাওয়া এবং

 পাইকারি ও খুচরা স্তরে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি। ফলে আমদানির প্রকৃত সুফল সাধারণ ভোক্তারা পাচ্ছেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, শক্তিশালী বাজার নজরদারি ব্যবস্থা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো না গেলে দাম স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়।
আমদানি বনাম খুচরা দাম

প্রতিদিন আমদানিকৃত মরিচ: ১৫০–২০০ মেট্রিক টন
আমদানির দাম (ভারত থেকে): কেজি-প্রতি ৮০–৮৫ টাকা
খুচরা বাজারের দাম (বাংলাদেশে): কেজি-প্রতি ২৮০–৩০০ টাকা
ব্যবধান: প্রতি কেজিতে প্রায় ২০০ টাকার পার্থক্য
আমদানি বাড়লেও কাঁচা মরিচের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে না আসায় ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, শুল্ক হ্রাস এবং বাজারে কঠোর তদারকি থাকলে এই পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।