আব্বার গানভিত্তিক জুকবক্স মিউজিক্যাল ‘মামা মিয়া!’ আবার ব্রডওয়েতে ফিরেছে। এটিকে পুনর্জাগরণ বলা হচ্ছে না; প্রযোজকদের ভাষায় এটি মূল নিউইয়র্ক মঞ্চায়নেরই পুনরাগমন। প্রযোজকেরা নতুন সংস্করণ তৈরি না করে দর্শকদের নস্টালজিয়াকে ভরসা করছেন, যা মূল প্রদর্শনীর সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে।
সময়ের বৃত্তে আব্বা ও ‘মামা মিয়া!’
প্রতি প্রজন্মে যেন নতুন করে আব্বার গান আবিষ্কৃত হয়। ব্যান্ডের নাম নিজেই একধরনের চক্রাকার প্রতীক, আর ‘মামা মিয়া!’ও ঠিক সেই রকম—বারবার ফিরে আসে। ১৯৯৯ সালে লন্ডনে প্রথম মঞ্চস্থ হওয়ার পর থেকে এটি পপ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
জুকবক্স মিউজিক্যালের নতুন যুগ
‘মামা মিয়া!’ কেবল জনপ্রিয় হয়নি, এটি বাণিজ্যিক থিয়েটারে জুকবক্স মিউজিক্যালের আধুনিক যুগও শুরু করে। আগে এসব মিউজিক্যাল কেবল সংগীতশিল্পী বা ধারার ওপর ভিত্তি করে হত, কিন্তু এখানে গানের সঙ্গে কাহিনির নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ‘হেল’স কিচেন’ বা ‘অ্যান্ড জুলিয়েট’-এর মতো প্রযোজনাও সফল হয়।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ও সিনেমার সাফল্য
মঞ্চ ছাড়াও ‘মামা মিয়া!’ নানা রূপে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে। ব্রিটেনে ‘মামা মিয়া! দ্য পার্টি’ বিশেষ জনপ্রিয়। ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছিল সর্বাধিক আয়কারী ব্রডওয়ে মিউজিক্যালের চলচ্চিত্র রূপ, আর ২০১৮ সালের সিক্যুয়েল ব্যর্থ হলেও ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা অটুট থাকে।
ব্রডওয়েতে প্রত্যাবর্তন
এখন এটি নিউইয়র্কের উইন্টার গার্ডেন থিয়েটারে ফিরে এসেছে, যেখানে ২০০১ সালে প্রথম ব্রডওয়ে মঞ্চায়ন হয়েছিল। ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে উত্তর আমেরিকান ট্যুরের অংশ হিসেবেই এটি আবার প্রদর্শিত হচ্ছে। যদিও ভ্রমণ সংস্করণ হিসেবে সেট কিছুটা সাধারণ, তবুও সংগীত ও অভিনয়ের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা দর্শকদের আকর্ষণ করছে।
কাহিনি সংক্ষেপ
কাহিনি আবর্তিত হয় সোফিকে ঘিরে, যে বিয়ের আগে নিজের বাবাকে খুঁজতে গ্রীক দ্বীপে তিন পুরুষকে আমন্ত্রণ জানায়। তার মা ডোনা অতীতের এই মানুষদের দেখে বিস্মিত হলেও বন্ধু রোজি ও টানিয়ার সহায়তায় সাহস খুঁজে পান। গান ও কৌতুক মিলিয়ে কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
সঙ্গীত ও আবেগের দ্বৈত রং
আব্বার গানগুলোতে আনন্দের সঙ্গে মিশে থাকে বিষণ্নতার আবেশ। ‘দ্য উইনার টেকস ইট অল’-এর মতো গানগুলোতে বেদনার গভীরতা অনুভূত হয়। প্রদর্শনী শুরু হয় সোফির কণ্ঠে ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ দিয়ে এবং একই গানে সমাপ্তি ঘটে, যদিও এর পরও থাকে এক অনির্ধারিত ‘এনকোর’—যা ইঙ্গিত দেয়, আব্বার জগতে কিছুই সত্যিকারের শেষ নয়।
আব্বার স্থায়ী প্রভাব
১৯৮২ সালে ব্যান্ড ভেঙে গেলেও তাদের জনপ্রিয়তা কমেনি। ‘আব্বা গোল্ড’, নানা চলচ্চিত্রে ব্যবহার, কাভার সংস্করণ এবং ‘মামা মিয়া!’ তাদের খ্যাতিকে টিকিয়ে রেখেছে। ২০২১ সালে নতুন অ্যালবাম ‘ভয়েজ’ প্রকাশ হয়, আর ২০২২ সালে ডিজিটাল ‘আব্বাটার’-এর মাধ্যমে তারা আবারও সময়ের সীমানা ভেঙেছে।
আব্বা কিংবা ‘মামা মিয়া!’—এদের গল্প এখনো শেষ হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা নতুন আকারে ফিরে আসছে। যারা মনে করেন এই কাহিনির সমাপ্তি হয়েছে, তাদের হয়তো মেনে নিতে হবে—আব্বার জগতে কোনো কিছুই শেষ হয় না।