তিয়ানশান পর্বতমালায় অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার
গাড়ির জানালা দিয়ে তাকালে দূর-দূরান্তে তিয়ানশান পর্বতমালা যেন রঙিন তেলের চিত্রকর্মের মতো চোখে ধরা দেয়। শিনজিয়াংয়ের ইলি কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের নিলকা কাউন্টির টাংবুলা তৃণভূমিতে যাত্রা করার সময় নীল আকাশ, সবুজ গাছ আর স্বচ্ছ ঝরনার সৌন্দর্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে বলে আশা করেছিলাম।
কিন্তু হঠাৎ পাহাড়ি বাঁক পেরোতেই চকচকে নীল জলাশয় চোখে পড়ল। সেখানে আধুনিক কারখানা ভবন দেখে কৌতূহল জাগল। গাইড জানালেন, এটি একটি স্যামন প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। সমুদ্র থেকে হাজার মাইল দূরে, পাহাড়ের ভেতরেই যে একটি স্যামন খামার থাকতে পারে, তা সত্যিই বিস্ময়কর।

পাহাড়ি পরিবেশে স্যামন চাষ
সাধারণত স্যামনের নাম শুনলেই গভীর সমুদ্রের কথা মনে আসে। অথচ তিয়ানশান পর্বতের পাদদেশে, কাশি নদীর তীরে, নিলকা কাউন্টিতে গড়ে উঠেছে বিশাল এক স্যামন খামার। হিমবাহের গলিত পানি থেকে পাওয়া ঠান্ডা ও স্বচ্ছ জলের কারণে স্যামন চাষের জন্য এ স্থানকে প্রায় আদর্শ মনে করা হয়।
এই পানির তাপমাত্রা সারা বছর ধরে ৮ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থিত থাকে। পানির অক্সিজেনসমৃদ্ধ গুণমান ও পরিচ্ছন্নতা স্যামনের দ্রুত বেড়ে ওঠার জন্য একে সত্যিকারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।
উৎপাদন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন
২০১৪ সালে শুরু হওয়া স্যামন চাষ এখন এক দশকে বড় শিল্পে পরিণত হয়েছে। অনলাইন তথ্য অনুযায়ী, নিলকা কাউন্টি বর্তমানে চীনের তৃতীয় বৃহত্তম স্যামন উৎপাদন কেন্দ্র। ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদন ৯ হাজার টনে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
একসময় দরিদ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নিলকা আজ “স্বচ্ছ পানি ও সবুজ পাহাড়ই অমূল্য সম্পদ”–এই ধারণার বাস্তব রূপ দিয়েছে। কাশি নদীর নিম্নপ্রবাহকে চীনের পরিবেশ মন্ত্রণালয় “দুই পাহাড়” ধারণার উদ্ভাবন ও অনুশীলনের কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

‘দুই পাহাড়’ ধারণার বাস্তবায়ন
চীনা প্রবাদে বলা হয়—“মাছ ও ভালুকের থাবা একসঙ্গে পাওয়া যায় না।” ইংরেজি প্রবাদেও আছে—“you can’t have your cake and eat it too।” কিন্তু শিনজিয়াং প্রমাণ করেছে যে পরিবেশ সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পাশাপাশি এগোতে পারে। এখানকার স্যামন শিল্প সেই বাস্তব উদাহরণ।
উন্নয়নের নতুন পথ
শিনজিয়াংয়ের গল্প আগে মূলত স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকেন্দ্রিক ছিল। এখন তা অতিক্রম করে নতুন উন্নয়ন মডেল তৈরির গল্প সামনে আসছে। অন্য অঞ্চলের মডেল অনুকরণ না করে শিনজিয়াং তার নিজস্ব প্রাকৃতিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়েছে।
প্রথমে প্রযুক্তি আমদানি, পরে স্থানীয় উদ্ভাবন এবং এখন পূর্ণাঙ্গ শিল্পশৃঙ্খল গড়ে তোলার মাধ্যমে স্যামন শিল্প স্থানীয় জনগণের আলাদা উন্নয়ন পথ তৈরি করেছে।

প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থান
সূর্যাস্তের সোনালি আলোয় তিয়ানশান পর্বতমালা ঢেকে যেতে যেতে গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে মনে হলো, এই ভূমি মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থানের এক জীবন্ত প্রতীক।
আজ নিলকার স্যামন শুধু স্থানীয় নয়, বিদেশের বাজারেও পৌঁছে গেছে। যে কেউ শিনজিয়াংকে বুঝতে চাইলে এখানকার স্যামন স্বাদ নিলেই সবুজ পাহাড় ও স্বচ্ছ জলের কল্পনা করতে পারবেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















