০৪:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
আদানিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সিদ্ধান্ত ইসলামাবাদ আদালতের বাইরে আত্মঘাতী হামলায় নিহত ১২, আহত ২৭ গ্লোবাল ফাইন্যান্সের মূল্যায়নে ‘সি’ গ্রেড পেলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর পাকিস্তান ২৭তম সংশোধনী বিল অনুমোদিত, বাড়বে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাও বিচার বিভাগে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ মোহাম্মদপুরে ছাত্রদল নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের জামিয়াতে উলেমা-ই-ইসলাম প্রধান মৌলানা ফজলুর রহমান মুদ্রাস্ফীতির সময় টিআইপিএস বন্ডের সীমাবদ্ধতা  আফগান-পাকিস্তান আলোচনায় অচলাবস্থা: সীমান্তে আবারও সংঘাতের আশঙ্কা দুবাই মেট্রোর ব্লু লাইন নির্মাণে নতুন ১০টির বেশি সড়ক পরিবর্তন ‘ঠান্ডায় খাও, জ্বরে উপোস’—প্রচলিত ধারণার পেছনের আসল সত্য

তুর্কি ফুটবল: নতুন অর্থ ও প্রতিভার জোয়ার

ইউরোপ থেকে শীর্ষ খেলোয়াড় দলে ভিড়ানো

এই গ্রীষ্মে ইউরোপের পাঁচটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফুটবল ট্রান্সফারের মধ্যে চারটি ঘটেছে ইংল্যান্ডের ধনী প্রিমিয়ার লিগে। তবে পঞ্চমটি ঘটেছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ভিক্টর ওসিমেন ইতালির চ্যাম্পিয়ন নাপোলি ছেড়ে তুরস্কের সুপার লিগের দল গালাতাসারাইয়ে যোগ দিয়েছেন।
এই ট্রান্সফারের অঙ্ক ছিল ৭৫ মিলিয়ন ইউরো—যা তুর্কি ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রেকর্ড, আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডের তিন গুণ। কর বাদ দিয়ে বছরে ওসিমেনের আয় হবে ১৫ মিলিয়ন ইউরো, যা ইংল্যান্ড ও স্পেনের শীর্ষ খেলোয়াড়দের সমান।
এটিই একক ঘটনা নয়। গালাতাসারাইয়ের পাশাপাশি ইস্তাম্বুলের অন্য দুই ক্লাব ফেনেরবাহচে ও বেসিকতাশও ইউরোপ এবং এমনকি সৌদি আরব থেকে নামকরা খেলোয়াড়দের ঋণ চুক্তিতে দলে ভিড়িয়েছে।

বয়সে তরুণ, নীতিতে বদল

তুরস্কের ফুটবলপ্রেমী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আগে থেকেই ইউরোপীয় খেলোয়াড়দের টেনেছেন একটি কর ছাড় দিয়ে—যেখানে সাধারণ ‘প্রগ্রেসিভ’ হারের বদলে কেবল ২০% কর দিতে হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অবসরের দ্বারপ্রান্তে থাকা খেলোয়াড়রাই সুপার লিগে যোগ দিতেন।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গালাতাসারাই, ফেনেরবাহচে ও বেসিকতাশের এই গ্রীষ্মে সই করানো খেলোয়াড়দের গড় বয়স মাত্র ২৬ বছর। অর্থাৎ ক্লাবগুলো এখন তরুণ ও ক্যারিয়ারের শীর্ষ পর্যায়ে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়েই বড় বাজি ধরছে।

অর্থনৈতিক সংকটের সুযোগ

অর্থনৈতিক সংকটও বিস্ময়করভাবে ক্লাবগুলোকে শক্তিশালী করেছে। এরদোয়ান দীর্ঘদিন ধরে সুদের হার কম রেখেছিলেন, যদিও মুদ্রাস্ফীতি ৮৫%-এ পৌঁছে গিয়েছিল। এতে তুর্কি লিরার মান ধসে পড়ে—২০২১ সালে এক ইউরোর বিপরীতে ১০ লিরা থাকলেও ২০২৪ সালে তা প্রায় ৪০ লিরায় পৌঁছে যায়।
তবে ইস্তাম্বুলের বড় দলগুলো ইউরোতে বিপুল আয় করছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে কেবল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে গালাতাসারাই আয় করেছে প্রায় ৩২ মিলিয়ন ইউরো। ইউরোপা লিগ থেকেও তিনটি ইস্তাম্বুল ক্লাব মিলে ৪৫ মিলিয়ন ইউরো উপার্জন করেছে। এছাড়া বায়ার্ন মিউনিখ ফরাসি ডিফেন্ডার সাশা বোয়েকে কিনতে গালাতাসারাইকে দিয়েছে ৩০ মিলিয়ন ইউরো।

ঋণ কমানো ও স্মার্ট বিনিয়োগ

লিরার দুর্বলতা দেশীয় ঋণ শোধ করায় সহায়ক হয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইউরো অনুযায়ী হিসাব করলে তুর্কি ক্লাবগুলোর ঋণ কমেছে ১৯%, অথচ ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর গড় ঋণ বেড়েছে ৪০%। অর্থনৈতিক নীতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পরও ইস্তাম্বুলের ক্লাবগুলো হাতে রাখা ইউরো দিয়ে বিনিয়োগ করছে।

এক বছরের জন্য উচ্চ বেতনে এলিট খেলোয়াড় দলে নেওয়া কৌশলগতভাবে বুদ্ধিমানের কাজ। এতে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় অগ্রগতি সম্ভব, যা আবার বেশি ইউরো এনে দেবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বাড়াবে না। লিরা আরও পড়লে এ ধরনের ব্যয়বহুল খেলোয়াড়দের ছেড়ে দেওয়াও সহজ হবে।

ব্যতিক্রম ওসিমেন

তবে ভিক্টর ওসিমেনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। গালাতাসারাই তাকে চার বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেছে। কারণ দলটি আগেই তাকে পরীক্ষা করেছে।
২০২৪-২৫ মৌসুমে এক বছরের ঋণ চুক্তিতে গালাতাসারাইয়ে খেলে ওসিমেন ৩০ ম্যাচে ২৬ গোল করেছিলেন। সেই মৌসুমেই গালাতাসারাই সুপার লিগের শিরোপা জেতে। এই পারফরম্যান্সই তাকে স্থায়ীভাবে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে নিশ্চিত করেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

আদানিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সিদ্ধান্ত

তুর্কি ফুটবল: নতুন অর্থ ও প্রতিভার জোয়ার

০৭:২১:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫

ইউরোপ থেকে শীর্ষ খেলোয়াড় দলে ভিড়ানো

এই গ্রীষ্মে ইউরোপের পাঁচটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফুটবল ট্রান্সফারের মধ্যে চারটি ঘটেছে ইংল্যান্ডের ধনী প্রিমিয়ার লিগে। তবে পঞ্চমটি ঘটেছে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ভিক্টর ওসিমেন ইতালির চ্যাম্পিয়ন নাপোলি ছেড়ে তুরস্কের সুপার লিগের দল গালাতাসারাইয়ে যোগ দিয়েছেন।
এই ট্রান্সফারের অঙ্ক ছিল ৭৫ মিলিয়ন ইউরো—যা তুর্কি ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রেকর্ড, আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডের তিন গুণ। কর বাদ দিয়ে বছরে ওসিমেনের আয় হবে ১৫ মিলিয়ন ইউরো, যা ইংল্যান্ড ও স্পেনের শীর্ষ খেলোয়াড়দের সমান।
এটিই একক ঘটনা নয়। গালাতাসারাইয়ের পাশাপাশি ইস্তাম্বুলের অন্য দুই ক্লাব ফেনেরবাহচে ও বেসিকতাশও ইউরোপ এবং এমনকি সৌদি আরব থেকে নামকরা খেলোয়াড়দের ঋণ চুক্তিতে দলে ভিড়িয়েছে।

বয়সে তরুণ, নীতিতে বদল

তুরস্কের ফুটবলপ্রেমী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আগে থেকেই ইউরোপীয় খেলোয়াড়দের টেনেছেন একটি কর ছাড় দিয়ে—যেখানে সাধারণ ‘প্রগ্রেসিভ’ হারের বদলে কেবল ২০% কর দিতে হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অবসরের দ্বারপ্রান্তে থাকা খেলোয়াড়রাই সুপার লিগে যোগ দিতেন।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গালাতাসারাই, ফেনেরবাহচে ও বেসিকতাশের এই গ্রীষ্মে সই করানো খেলোয়াড়দের গড় বয়স মাত্র ২৬ বছর। অর্থাৎ ক্লাবগুলো এখন তরুণ ও ক্যারিয়ারের শীর্ষ পর্যায়ে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়েই বড় বাজি ধরছে।

অর্থনৈতিক সংকটের সুযোগ

অর্থনৈতিক সংকটও বিস্ময়করভাবে ক্লাবগুলোকে শক্তিশালী করেছে। এরদোয়ান দীর্ঘদিন ধরে সুদের হার কম রেখেছিলেন, যদিও মুদ্রাস্ফীতি ৮৫%-এ পৌঁছে গিয়েছিল। এতে তুর্কি লিরার মান ধসে পড়ে—২০২১ সালে এক ইউরোর বিপরীতে ১০ লিরা থাকলেও ২০২৪ সালে তা প্রায় ৪০ লিরায় পৌঁছে যায়।
তবে ইস্তাম্বুলের বড় দলগুলো ইউরোতে বিপুল আয় করছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে কেবল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে গালাতাসারাই আয় করেছে প্রায় ৩২ মিলিয়ন ইউরো। ইউরোপা লিগ থেকেও তিনটি ইস্তাম্বুল ক্লাব মিলে ৪৫ মিলিয়ন ইউরো উপার্জন করেছে। এছাড়া বায়ার্ন মিউনিখ ফরাসি ডিফেন্ডার সাশা বোয়েকে কিনতে গালাতাসারাইকে দিয়েছে ৩০ মিলিয়ন ইউরো।

ঋণ কমানো ও স্মার্ট বিনিয়োগ

লিরার দুর্বলতা দেশীয় ঋণ শোধ করায় সহায়ক হয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইউরো অনুযায়ী হিসাব করলে তুর্কি ক্লাবগুলোর ঋণ কমেছে ১৯%, অথচ ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর গড় ঋণ বেড়েছে ৪০%। অর্থনৈতিক নীতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পরও ইস্তাম্বুলের ক্লাবগুলো হাতে রাখা ইউরো দিয়ে বিনিয়োগ করছে।

এক বছরের জন্য উচ্চ বেতনে এলিট খেলোয়াড় দলে নেওয়া কৌশলগতভাবে বুদ্ধিমানের কাজ। এতে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় অগ্রগতি সম্ভব, যা আবার বেশি ইউরো এনে দেবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বাড়াবে না। লিরা আরও পড়লে এ ধরনের ব্যয়বহুল খেলোয়াড়দের ছেড়ে দেওয়াও সহজ হবে।

ব্যতিক্রম ওসিমেন

তবে ভিক্টর ওসিমেনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। গালাতাসারাই তাকে চার বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেছে। কারণ দলটি আগেই তাকে পরীক্ষা করেছে।
২০২৪-২৫ মৌসুমে এক বছরের ঋণ চুক্তিতে গালাতাসারাইয়ে খেলে ওসিমেন ৩০ ম্যাচে ২৬ গোল করেছিলেন। সেই মৌসুমেই গালাতাসারাই সুপার লিগের শিরোপা জেতে। এই পারফরম্যান্সই তাকে স্থায়ীভাবে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে নিশ্চিত করেছে।