১০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে অসুস্থ হয়ে পুলিশের মৃত্যু রবিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা ভিয়েতনামী ঔপন্যাসিক ড. ফান কুয়ে মাই শারজাহ বইমেলায় পাঠকদের মুগ্ধ করলেন মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু শাহবাগে শিক্ষকদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গে পুলিশের পদক্ষেপের পক্ষে ডিএমপি গণভোটের জন্যে সাত দিনের আলটিমেটাম অগ্রহণযোগ্য: সরকারের সমালোচনায় সালাহউদ্দিন

ধানমন্ডির ব্লক: শহরের এক আদ্যতন আবাসিক কাহিনি

ধানমন্ডি ঢাকার এক পুরনো ও মর্যাদাপূর্ণ আবাসিক এলাকা, যার জন্মকথা ও পরিবর্তন শহরের আধুনিকায়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। ১৯৫০-এর দশকে পরিকল্পিত আবাসিক কলোনি হিসেবে গড়ে ওঠা এই অঞ্চল শুরু থেকেই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির নগর জীবনধারার প্রতীক হয়ে ওঠে — একই সঙ্গে এখানে গড়ে উঠেছিল শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক স্মৃতির কেন্দ্রও।

১৯৫০-এর দশকে ঢাকা দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছিল। পুরান ঢাকার কোলাহলে থাকা থেকে বেরিয়ে মধ্যবিত্তদের জন্য প্রশস্ত রাস্তাঘাট, খোলা আকাশ ও পরিকল্পিত ব্লক ব্যবস্থার আবাসন প্রয়োজন পড়েছিল — সেই চাহিদাই ধানমন্ডিকে জন্ম দিয়েছে। এলাকার জমির প্রাচুর্য এবং শহরের কেন্দ্রের কাছে হওয়ায় এটি দ্রুত আকর্ষণীয় আবাসিক অঞ্চলে পরিণত হয়।

ধানমন্ডি নামের উৎপত্তি কৃষিভিত্তিক: একসময় এখানে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, খাল ও পুকুর ছিল। স্থানীয়রা ধান উৎপাদনের জায়গাটিকে ধানমণ্ডল বা ধানের মণ্ডি বলত; সময়ের সঙ্গে নামটি সংকুচিত হয়ে ধানমন্ডিতে রূপ নেয়। ইতিহাসে এই নামটি এলাকার গ্রাম্য অতীতের স্মৃতি ধরে রেখেছে।

প্রতিটি ব্লক নম্বরকৃত ছিল—ধানমন্ডি ২৭, ৩২ ইত্যাদি—এবং বাড়িগুলোতে ছিল বাগান, ফলগাছ ও প্রশস্ত উঠোন। ট্রাফিকও তখন তুলনামূলক কম: সাইকেল, রিকশা ও অল্পসংখ্যক গাড়ি চলত। সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের আড্ডা, খেলার চঞ্চলতা ও নীরব শান্তি ধানমন্ডিকে স্বপ্নের আবাসিক এলাকার মর্যাদা দিয়েছিল।

ধানমন্ডি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সংহত কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানে গড়ে ওঠে পাঠাগার, নাটক-সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান — যা ঢাকার সাংস্কৃতিক জীবনকে নতুন ঘনত্ব দিয়েছে। বহু সাংস্কৃতিক আড্ডা, কবিতা পাঠ ও নাটক-অনুষ্ঠানের স্মৃতি এখনও বাঙালি সাহিত্যচর্চায় মনে রাখা হয়।

অতীতের খাল ও পুকুরগুলো ধানমন্ডিকে একটি প্রাকৃতিক গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছিল; ধানমন্ডি লেক আজও এলাকার প্রধান প্রাকৃতিক আকর্ষণ। লেক-শত্বরের ধারে মানুষের মিলন, মাছ ধরা ও শিশুর খেলা একসময় এলাকার জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। আধুনিকায়নের পরও লেকটি ধানমন্ডির পরিচয় রক্ষার কাজ করেছে।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে স্বতন্ত্র অবস্থান পায়। মুক্তিযুদ্ধকালে ও স্বাধীনতার পর ধানমন্ডি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সভা ও স্মরণীয় ঘটনাপ্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল — ফলে এটি জাতীয় ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায় হয়ে ওঠে।

ওই শান্ত, সবুজ ও প্রশস্ত ধানমন্ডি আজ বেশী জনাকীর্ণ, বাণিজ্যিক ও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। আবাসিকতার সঙ্গে কমার্শিয়াল রূপ ছড়িয়েছে—ক্যাফে, শপিং, অফিস ও উচ্চসংখ্যক যানজট। তবু পুরনো বাড়ি, স্থাপত্য ও লেকের স্মৃতি এলাকা এখনও একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে।

ধানমন্ডি কেবল একটি এলাকা নয়—এটি ঢাকার আধুনিক নগর জীবনের ইতিহাস, নকশা ও রাজনৈতিক স্মৃতির সংগমস্থল। শৈল্পিক ও সামাজিক গুরুত্ব সংরক্ষণ করে, পরিকল্পিত নগর নীতির সঙ্গে মিলিয়ে ধানমন্ডির শিকড় ও স্মৃতি রক্ষা করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই শহরের গল্প পড়তে পারে — না কেবল স্মৃতিতে, বরং সরাসরি অনুভব করে।

জনপ্রিয় সংবাদ

কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে অসুস্থ হয়ে পুলিশের মৃত্যু

ধানমন্ডির ব্লক: শহরের এক আদ্যতন আবাসিক কাহিনি

০৭:০০:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

ধানমন্ডি ঢাকার এক পুরনো ও মর্যাদাপূর্ণ আবাসিক এলাকা, যার জন্মকথা ও পরিবর্তন শহরের আধুনিকায়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। ১৯৫০-এর দশকে পরিকল্পিত আবাসিক কলোনি হিসেবে গড়ে ওঠা এই অঞ্চল শুরু থেকেই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির নগর জীবনধারার প্রতীক হয়ে ওঠে — একই সঙ্গে এখানে গড়ে উঠেছিল শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক স্মৃতির কেন্দ্রও।

১৯৫০-এর দশকে ঢাকা দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছিল। পুরান ঢাকার কোলাহলে থাকা থেকে বেরিয়ে মধ্যবিত্তদের জন্য প্রশস্ত রাস্তাঘাট, খোলা আকাশ ও পরিকল্পিত ব্লক ব্যবস্থার আবাসন প্রয়োজন পড়েছিল — সেই চাহিদাই ধানমন্ডিকে জন্ম দিয়েছে। এলাকার জমির প্রাচুর্য এবং শহরের কেন্দ্রের কাছে হওয়ায় এটি দ্রুত আকর্ষণীয় আবাসিক অঞ্চলে পরিণত হয়।

ধানমন্ডি নামের উৎপত্তি কৃষিভিত্তিক: একসময় এখানে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, খাল ও পুকুর ছিল। স্থানীয়রা ধান উৎপাদনের জায়গাটিকে ধানমণ্ডল বা ধানের মণ্ডি বলত; সময়ের সঙ্গে নামটি সংকুচিত হয়ে ধানমন্ডিতে রূপ নেয়। ইতিহাসে এই নামটি এলাকার গ্রাম্য অতীতের স্মৃতি ধরে রেখেছে।

প্রতিটি ব্লক নম্বরকৃত ছিল—ধানমন্ডি ২৭, ৩২ ইত্যাদি—এবং বাড়িগুলোতে ছিল বাগান, ফলগাছ ও প্রশস্ত উঠোন। ট্রাফিকও তখন তুলনামূলক কম: সাইকেল, রিকশা ও অল্পসংখ্যক গাড়ি চলত। সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের আড্ডা, খেলার চঞ্চলতা ও নীরব শান্তি ধানমন্ডিকে স্বপ্নের আবাসিক এলাকার মর্যাদা দিয়েছিল।

ধানমন্ডি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সংহত কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানে গড়ে ওঠে পাঠাগার, নাটক-সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান — যা ঢাকার সাংস্কৃতিক জীবনকে নতুন ঘনত্ব দিয়েছে। বহু সাংস্কৃতিক আড্ডা, কবিতা পাঠ ও নাটক-অনুষ্ঠানের স্মৃতি এখনও বাঙালি সাহিত্যচর্চায় মনে রাখা হয়।

অতীতের খাল ও পুকুরগুলো ধানমন্ডিকে একটি প্রাকৃতিক গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছিল; ধানমন্ডি লেক আজও এলাকার প্রধান প্রাকৃতিক আকর্ষণ। লেক-শত্বরের ধারে মানুষের মিলন, মাছ ধরা ও শিশুর খেলা একসময় এলাকার জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। আধুনিকায়নের পরও লেকটি ধানমন্ডির পরিচয় রক্ষার কাজ করেছে।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে স্বতন্ত্র অবস্থান পায়। মুক্তিযুদ্ধকালে ও স্বাধীনতার পর ধানমন্ডি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সভা ও স্মরণীয় ঘটনাপ্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল — ফলে এটি জাতীয় ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায় হয়ে ওঠে।

ওই শান্ত, সবুজ ও প্রশস্ত ধানমন্ডি আজ বেশী জনাকীর্ণ, বাণিজ্যিক ও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। আবাসিকতার সঙ্গে কমার্শিয়াল রূপ ছড়িয়েছে—ক্যাফে, শপিং, অফিস ও উচ্চসংখ্যক যানজট। তবু পুরনো বাড়ি, স্থাপত্য ও লেকের স্মৃতি এলাকা এখনও একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে।

ধানমন্ডি কেবল একটি এলাকা নয়—এটি ঢাকার আধুনিক নগর জীবনের ইতিহাস, নকশা ও রাজনৈতিক স্মৃতির সংগমস্থল। শৈল্পিক ও সামাজিক গুরুত্ব সংরক্ষণ করে, পরিকল্পিত নগর নীতির সঙ্গে মিলিয়ে ধানমন্ডির শিকড় ও স্মৃতি রক্ষা করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই শহরের গল্প পড়তে পারে — না কেবল স্মৃতিতে, বরং সরাসরি অনুভব করে।