রেকর্ড গড়া গরম ও খরায় চাপে খামার
২০২৫ সালের গ্রীষ্ম ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া দপ্তর। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়কে ১৯২৯ সালের পর সবচেয়ে শুষ্ক হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে পশ্চিম ইংল্যান্ডের মনোরম কটসওল্ডস অঞ্চলের খামারগুলোর মাঠে ঘাস নেই বললেই চলে।
খামারি ডেভিড বার্টন তার পারিবারিক খামার ‘ম্যানর ফার্ম’-এ প্রায় ২০০টি সালেয়ার, হেয়ারেফোর্ড ও সাসেক্স জাতের গরু পালেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘মাটিতে ঘাস নেই, শুধু ধুলো। এটা আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো জায়গায় দেখা যায়, ইংল্যান্ডে নয়।’’
শীতে রাখার খাদ্য এখনই খরচ করতে হচ্ছে
গ্রীষ্মের ঘাস না থাকায় খামারিদের আগেভাগেই গরুকে শীতের জন্য মজুত খাদ্য দিতে হচ্ছে। বার্টনও দুই মাস আগে থেকে গরুগুলোকে দিনে দুবার সাইলেজ, খড় ও শস্য খাওয়াচ্ছেন। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণ। গরুরা খাওয়ার পরও ক্ষুধার্ত থেকে যাচ্ছে এবং বার্টনের ট্রাক্টরের পিছু পিছু খাবারের জন্য ছুটছে।
শুধু তিনি নন, পুরো ইংল্যান্ড জুড়ে গবাদি পশুর খামারিরা একই সংকটে পড়েছেন। গরুর সুরক্ষা ও নিজের আর্থিক টিকে থাকা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ব্রিটেনে গরুর মাংস উৎপাদনের বাজারমূল্য ছিল ৪ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি।
খরচ বাড়ছে, লাভ কমছে
বার্টন জানাচ্ছেন, এখন তিনি প্রতি সপ্তাহে বাড়তি প্রায় এক হাজার পাউন্ড (প্রায় ১ হাজার ৩৫১ ডলার) খরচ করছেন শুধু খাদ্যের পেছনে। তবে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজারদর সে তুলনায় বাড়ছে না। তাই আসছে শীত তার জন্য আরও ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত এ খরচ আমাকে বহন করতেই হবে।’’
খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি
এই সংকট শুধু খামারিদের নয়, পুরো ব্রিটেনের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যপণ্যের দামও চাপে পড়েছে। চলতি মাসের সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় ব্রিটেনে খাদ্যের দাম ৪.৯ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে গরুর মাংস অন্যতম বড় কারণ।
যেখানে রোদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া কিছু ফল ও বেরি উৎপাদনে সহায়ক হয়েছে, সেখানে বাঁধাকপি, ব্রকোলি ও ফুলকপির মতো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারের প্রতি অভিযোগ
বার্টন, যিনি ন্যাশনাল ফার্মারস ইউনিয়নের জাতীয় লাইভস্টক বোর্ডের চেয়ারম্যান, মনে করেন—সরকার খামারিদের সহায়তায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারত। তিনি বলেন, সরকার চাইলে কিছু পরিবেশগত নিয়ম সাময়িকভাবে শিথিল করে আগে থেকেই জমিকে পশুর চারণের জন্য উন্মুক্ত করতে পারত।
এ ছাড়া উত্তরাধিকার করের প্রস্তাবিত পরিবর্তন খামারিদের জন্য আরও চাপ সৃষ্টি করছে। বার্টনের আশঙ্কা, আর্থিক সংকটে পড়ে অনেক খামারি হয়তো বাধ্য হয়ে তাদের প্রজননকারী গাভীর সংখ্যা কমাতে পারে।
তিনি বলেন, ‘‘আমি সত্যিই চিন্তিত অনেক খামারি হয়তো প্রজননকারী গাভীর সংখ্যা কমিয়ে দেবে। অথচ এটাই এখন সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত হচ্ছে।’
খরায় বিপর্যস্ত ব্রিটেনের গরুর খামারিরা, বাড়ছে খাদ্য খরচ
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০৩:২১:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
- 37
জনপ্রিয় সংবাদ



















