সংক্ষিপ্তসার
হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসা ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার নতুন বাজার খুঁজছে
শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে ব্যবসায়ীরা আগেভাগে রপ্তানি সম্পন্ন করেছে
সরকার এখনো আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেনি, বরং বিকল্প বাজার খুঁজতে বলছে
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ভারতের জিডিপির প্রায় ২.২ শতাংশ
ভারতের ক্ষুদ্র ব্যবসার হাহাকার
বুধবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে ভারতের লাখো ক্ষুদ্র ব্যবসা মরিয়া হয়ে নতুন ক্রেতা খুঁজছে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।
আগস্টের শেষ সময়সীমার আগে অনেক প্রতিষ্ঠান দ্রুত রপ্তানি সম্পন্ন করে ফেলেছে। জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২৫ শতাংশ আমদানি কর চালু করেছিলেন, তা দ্বিগুণ হয়ে ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসার সংকট ও সরকারের অবস্থান
ভারতে প্রায় ৬ কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসার মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্কবৃদ্ধির ধাক্কায় পড়েছে। এদের মধ্যে টেক্সটাইল, গহনা ও রাসায়নিক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
সরকার এখনো কোনো আর্থিক বা ঋণ সহায়তা ঘোষণা করেনি। বরং প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন বাজার খুঁজতে পরামর্শ দিয়েছে।
ইন্ডিয়া এসএমই ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৭ শতাংশ ব্যবসায়ী উপসাগরীয় অঞ্চল, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও ব্রিটেনকে লক্ষ্য করে নতুন রপ্তানির পথ খুঁজছে। কেউ কেউ পণ্য অন্য দেশে প্রক্রিয়াজাত বা পুনঃউৎপাদন করিয়ে নতুন “উৎপত্তি দেশ” লেবেল দিয়ে আবার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির চিন্তা করছে।
আরও ২৭ শতাংশ রপ্তানিকারক নন-ইউএস বাজারে পুরনো সম্পর্ক জাগিয়ে তুলছে, আর ১৬ শতাংশ তাদের অর্ডারের অংশ অন্য দেশে আউটসোর্স করার উদ্যোগ নিচ্ছে।
ফোরামের সভাপতি বিনোদ কুমার বলেন, “আমরা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করতে চাই কারণ দাম ভালো পাওয়া যায়। তবে এখন অন্য বাজারও সামনে আসবে। ছোট, মাঝারি বা বড় – সবাই এখন অবহেলিত ক্রেতাদের সঙ্গে আবার কথা বলছে।”
অর্থনীতিতে প্রভাব
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা ভারতের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। তারা দেশের জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ এবং মোট রপ্তানির প্রায় ৪৫ শতাংশ অবদান রাখে।
রপ্তানি আগেভাগে পাঠানো
শুল্ক বৃদ্ধির ধাক্কা সামলাতে আগস্টে অনেক প্রতিষ্ঠান আগেভাগে যুক্তরাষ্ট্রে অর্ডার পাঠিয়েছে।
আহমেদাবাদভিত্তিক ফেরোমন কেমিক্যালসের পরিচালক সংকেত গান্ধী বলেন, “আমরা আগস্টে স্বাভাবিকের দ্বিগুণ রপ্তানি করেছি। এমনকি ইউরোপের কিছু অর্ডার যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছি।”
তাদের প্রতিষ্ঠান ইউরোপ, রাশিয়া ও আফ্রিকায় নতুন বাজার খুঁজছে। গান্ধীর আশা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কবিষয়ক অচলাবস্থা কোনোভাবে মিটবে।
তিরুপুরের পোশাক প্রস্তুতকারক এস্টি এক্সপোর্টসের মালিক এন. থিরুকুমারন বলেন, “২৫ শতাংশ শুল্কে আমরা ও ক্রেতারা ভাগাভাগি করে ব্যবসা চালাতাম। কিন্তু ৫০ শতাংশে তা সম্ভব নয়। তাই আমরা আগস্টের শেষ সপ্তাহেই সব চালান পাঠিয়ে দিয়েছি।”
অর্থনৈতিক চাপ ও ব্যাংক খাত
আগস্টের রপ্তানি তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি। তবে এই মাসে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে বলে এইচএসবিসির তথ্য বলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ভারতের জিডিপির ২.২ শতাংশ। এ খাতে পতন হলে বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ০.৬ থেকে ০.৮ শতাংশ পয়েন্ট কমতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশে ধরে রাখার পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে রপ্তানি আয় হ্রাস পেলে ক্ষুদ্র ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোও বড় ঝুঁকিতে পড়বে।
এক রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্ষুদ্র ব্যবসায় ঋণ প্রবাহ শ্লথ হয়ে গেছে। “এখন সবাই সতর্ক। আমরা নতুন কোনো ক্ষুদ্র রপ্তানিমুখী ব্যবসাকে সহজে ঋণ দিচ্ছি না,” তিনি বলেন।
যদিও সরকার ছোট ব্যবসা ও রপ্তানিকারকদের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে শোনা গেছে, এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। জুন ২০২৫ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ঋণ দাঁড়িয়েছে ১২.৩ ট্রিলিয়ন রুপি, যা ভারতের মোট ব্যাংক ঋণের প্রায় ৭ শতাংশ।
ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম ভারতের ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০৩:২৮:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
- 27
জনপ্রিয় সংবাদ



















