ভূমিকা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাইপে ও বেইজিং-এ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও বক্তব্য আবারও ইতিহাস নিয়ে দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছে। জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কে নেতৃত্ব দিয়েছিল, কাদের ভূমিকা ছিল মুখ্য—এই প্রশ্ন ঘিরেই দুই পক্ষের মধ্যে ক্রমেই তিক্ততা বাড়ছে।
প্রবীণ যোদ্ধার স্মৃতিচারণ
৯৯ বছর বয়সী প্যান চেং-ফা স্মরণ করেন, কিভাবে তিনি জাপানিদের বিরুদ্ধে চীনের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি জানান, তখন কমিউনিস্ট বাহিনীর সঙ্গে তাদের সরকারের অস্বস্তিকর জোট ছিল।
প্যান বলেন, “আমরাই তাদের অস্ত্র-সরঞ্জাম দিয়েছি, আমরা তাদের শক্তিশালী করেছি।” তাঁর মতে, জাপান পরাজিত হওয়ার পর কমিউনিস্টদের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল ‘রিপাবলিক অব চায়না’। সেখান থেকেই শুরু হয় গৃহযুদ্ধ, যার ফলে ১৯৪৯ সালে মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসে এবং রিপাবলিক অব চায়নার সরকার তাইওয়ানে সরে যায়।
/https%3A%2F%2Fengelsbergideas.com%2Fwp-content%2Fuploads%2F2022%2F11%2FMy-Post-5-1-6-p9h0qyfqsgkxwzhdcjah395v501fspo10fu88db9nc.jpg)
চিয়াং কাই-শেকের বাহিনীর ভূমিকা
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বারবার দাবি করে, জাপানবিরোধী সংগ্রামে তাদের ভূমিকা ছিল নির্ণায়ক। কিন্তু ইতিহাস বলছে, প্রকৃত যুদ্ধের বড় অংশ পরিচালনা করেছিল চিয়াং কাই-শেকের রিপাবলিক অব চায়নার সেনারা।
তাইওয়ানও বারবার মনে করিয়ে দেয়—জাপানের আত্মসমর্পণের সময় শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ছিল রিপাবলিক অব চায়না, আর তখন পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার অস্তিত্বই ছিল না।
তাইওয়ানের চীন নীতি প্রধান চিউ চুই-চেং বলেন, “রিপাবলিক অব চায়নার যুদ্ধ চলাকালে পিপলস রিপাবলিক অব চায়না প্রতিষ্ঠিতই হয়নি। অথচ বর্তমানে কমিউনিস্ট সরকার ইতিহাস বিকৃত করছে।”
তাইওয়ানের মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের দাবি—তৎকালীন কমিউনিস্টদের কৌশল ছিল মূলত নিজেদের শক্তিশালী করা (৭০%), রিপাবলিক অব চায়নাকে দুর্বল করা (২০%), আর জাপানবিরোধী কার্যক্রমে মাত্র (১০%) মনোযোগ দেওয়া।

তাইওয়ানের সংযত অনুষ্ঠান
তাইওয়ান অপেক্ষাকৃত ছোট পরিসরে যুদ্ধজয়ের স্মরণ অনুষ্ঠান করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক কনসার্টে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন রিপাবলিক বাহিনীর পোশাক পরিহিত শিল্পী, আমেরিকান ফ্লাইং টাইগারসের ছবি এবং স্থানীয় হিপ-হপ দলের পরিবেশনা ছিল।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্তা ছিল স্পষ্ট—“ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জাপানবিরোধী যুদ্ধ পরিচালনা ও জয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিল রিপাবলিক অব চায়না।”
বেইজিংয়ের পাল্টা প্রতিক্রিয়া
চীন পাল্টা অভিযোগ করেছে, তাইওয়ান ইতিহাস বিকৃত করছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সরকারি মুখপত্র পিপলস ডেইলি সতর্ক করে বলেছে, পার্টির ভূমিকা হ্রাস বা বিকৃত করার যে কোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।
চীন বলছে, এই জয় সব চীনা জনগণের, তাইওয়ানেরও। একই সঙ্গে তারা দাবি করছে—১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষে তাইওয়ানকে জাপানি শাসন থেকে চীনা শাসনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে তাইওয়ান সরকারের অবস্থান—কোনো চুক্তিতেই তাইওয়ানকে কমিউনিস্ট পার্টি-নিয়ন্ত্রিত চীনের হাতে হস্তান্তরের কথা ছিল না, কারণ সে সময় পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার জন্মই হয়নি।

সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে ১৫ আগস্টের স্মরণ দিবসে এক ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন, আগ্রাসন শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়। তাঁর এই মন্তব্যকে বেইজিংয়ের সামরিক হুমকির প্রতি ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
চীন দাবি করছে—তাইওয়ান তাদের ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কারণ পিপলস রিপাবলিক অব চায়না হলো রিপাবলিক অব চায়নার উত্তরাধিকারী রাষ্ট্র। কিন্তু তাইওয়ানের সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই অবস্থান মানে না এবং জনগণকে চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
প্রবীণ যোদ্ধার ক্ষোভ
প্যান চেং-ফা, যিনি গৃহযুদ্ধের পর তাইওয়ানে চলে আসেন, জানান—চীনে ফেলে আসা তাঁর পরিবারকে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। তাই বেইজিংয়ের কুচকাওয়াজ তাঁর কাছে অর্থহীন।
তিনি বলেন, “কমিউনিস্টদের সম্পর্কে ভালো কিছু বলার নেই আমার।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















