০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
১৫শ শতকের চিত্রশিল্পী কীভাবে এক সংশয়ীকে বিশ্বাস খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন? জাপানে সিচুয়ান ক্লাসিকের উমামি স্বাদ তেরো ভাষায় রোসালিয়ার ‘লাক্স’: নারীত্ব, বিশ্বাস ও প্রেমের নির্মমতার এক সঙ্গীতযাত্রা সিওরাক পর্বতের পাদদেশে ৫০০ বছরের পুরনো সাঙডোমুন গ্রাম , ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের মিলনস্থল ডোপামিন ডিটক্স: অতিরিক্ত চিন্তা থামানোর এক বিজ্ঞানভিত্তিক উপায় এরি ক্যানাল: একটি মানবসৃষ্ট জলপথ যা আমেরিকাকে রূপান্তরিত করেছে বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ: নির্বাচন ঘিরে কোন অশনি সংকেত? দুর্যোগ পরবর্তী সহায়তা: একত্রিত হয়ে নতুন জীবন গড়ার সংগ্রাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জকসু নির্বাচন নিয়ে তীব্র বিতর্ক মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৩)

থাই আদালত থেকে প্রধানমন্ত্রী পেটংটার্ন শিনাওয়াত্রার পদচ্যুতি

থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী পেটংটার্ন শিনাওয়াত্রাকে নৈতিক অসদাচরণের দায়ে পদচ্যুত করেছে। কাম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে তার এক বিতর্কিত ফোনালাপকে কেন্দ্র করেই আদালত এ রায় দেয়।

আদালতের রায় ও রাজনৈতিক অস্থিরতা

শুক্রবার ঘোষিত রায়ে পেটংটার্ন থাইল্যান্ডের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হলেন যাকে আদালতের রায়ে পদচ্যুত হতে হলো। ২০০৮ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিচার বিভাগ এভাবে একের পর এক প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করছে। এই পদক্ষেপে দেশ আবারও দীর্ঘ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে এবং হঠাৎ নির্বাচনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

নয় বিচারকের এ আদালত, যাদের সাধারণত থাইল্যান্ডের রক্ষণশীল রাজতান্ত্রিক শক্তির ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা হয়, জানিয়েছে—৩৯ বছর বয়সী পেটংটার্ন নৈতিক মানদণ্ড “গুরুতরভাবে লঙ্ঘন” করেছেন। জুন মাসে হুন সেনকে করা ফোনকলে তিনি সীমান্তে সংঘাত এড়াতে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন।

আদালত বলেছে, ওই আলাপে তিনি দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ে তাকে হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ সম্বোধন করতে শোনা যায় এবং একই সঙ্গে এক জ্যেষ্ঠ থাই সেনা কর্মকর্তাকে ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে বর্ণনা করতে দেখা যায়।

Blow for Thailand's government as court suspends PM from duty | Reuters

সীমান্ত সংঘাত ও যুদ্ধবিরতি

১ জুলাই আদালত তাকে বিচার চলাকালীন স্থগিত করেছিল। সেই সময়ের মধ্যেই সীমান্ত বিরোধ দ্রুত সহিংস রূপ নেয়। গোলাগুলিতে কয়েক ডজন নিহত হয় এবং কয়েক দশক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।

অবশেষে ২৯ জুলাই মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়া

রায়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে পেটংটার্ন বলেন, তিনি দেশের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেছেন এবং সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

তার ভাষায়, “আমার উদ্দেশ্য ছিল দেশের কল্যাণ, ব্যক্তিগত লাভ নয়। সাধারণ মানুষ ও সেনাদের জীবন রক্ষা করা আমার লক্ষ্য ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “আজকের রায় থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। আমাদের সবাইকে—সরকার, বিরোধী দল এবং জনগণ—একসঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে আর কোনো নতুন রাজনৈতিক মোড় তৈরি না হয়।”

Thai prime minister suspended by the Constitutional Court

শিনাওয়াত্রা পরিবারের জন্য আঘাত

এ রায় পেটংটার্ন ও তার বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাকসিন শিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার মধ্যে দ্বিতীয়।

৭৬ বছর বয়সী তাকসিন সম্প্রতি রাজতন্ত্র অবমাননার অভিযোগ থেকে খালাস পেলেও এখনো আরেকটি মামলার মুখোমুখি। ২০২৩ সালে ১৬ বছর নির্বাসনের পর দেশে ফিরে দুর্নীতির সাজা কমানোর পর তাকে জেলখানার বদলে হাসপাতালের বিশেষ কক্ষে রাখা হয়েছিল। আদালত এখন সেটি তদন্ত করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রক্ষণশীল শক্তিগুলো তাকসিনের এ মামলা কাজে লাগিয়ে তার দল ফিউ থাইকে (যাদের নিম্নকক্ষে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসন রয়েছে) সেনা-ঘনিষ্ঠ দলগুলোর সঙ্গে জোটে যেতে বাধ্য করতে পারে। তবে সেখানে ফিউ থাইকে ছোট অংশীদার হিসেবে থাকতে হতে পারে।

এক গবেষকের মতে, “সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে তাকসিনকে আবার জেলে পাঠানো হতে পারে। সেটি ব্যবহার করে ফিউ থাইকে অসম জোটে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হতে পারে।”

Thailand’s Pheu Thai allies with military rivals to form new government

সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী

থাইল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে যাদের দল প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে, কেবল তারাই সরকার গঠন করতে পারবেন।

ফিউ থাইয়ের কাছে এখনো একজন প্রার্থী রয়েছেন—৭৭ বছর বয়সী চাইকাসেম নিটিসিরি, যিনি তাকসিনের ঘনিষ্ঠ এবং সাবেক বিচারমন্ত্রী।

অন্যদিকে রক্ষণশীল দলে আছেন ভুমজাইথাই পার্টির আনুতিন চারণভিরাকুল এবং সাবেক সেনাপ্রধান প্রয়ুথ চান-ও-চা। প্রয়ুথ ২০১৪ সালের সেনা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন এবং টানা নয় বছর থাইল্যান্ড শাসন করেন। বর্তমানে তিনি প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য, আবার রাজনীতিতে ফিরতে হলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক থিতিনান পংসুধিরাক বলেছেন, আনুতিনই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী। তার মতে, ভুমজাইথাই তুলনামূলক ছোট দল হলেও তাদের প্রভাবশালী মহলের সমর্থন রয়েছে।

তিনি বলেন, “আনুতিন এমন চুক্তি করতে পারেন যেখানে ফিউ থাই সরকারে থাকলেও ভুমজাইথাই মূল নিয়ন্ত্রণ নেবে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ভাগাভাগি করে জোট সরকার চালিয়ে যেতে পারে এবং সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে টিকে থাকতে পারে।”

স্ন্যাপ নির্বাচনের সম্ভাবনা

তবে যদি সংসদ নতুন সরকার নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে হঠাৎ করে নতুন নির্বাচন ডাকতে হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

১৫শ শতকের চিত্রশিল্পী কীভাবে এক সংশয়ীকে বিশ্বাস খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন?

থাই আদালত থেকে প্রধানমন্ত্রী পেটংটার্ন শিনাওয়াত্রার পদচ্যুতি

০৬:৫৭:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী পেটংটার্ন শিনাওয়াত্রাকে নৈতিক অসদাচরণের দায়ে পদচ্যুত করেছে। কাম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে তার এক বিতর্কিত ফোনালাপকে কেন্দ্র করেই আদালত এ রায় দেয়।

আদালতের রায় ও রাজনৈতিক অস্থিরতা

শুক্রবার ঘোষিত রায়ে পেটংটার্ন থাইল্যান্ডের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হলেন যাকে আদালতের রায়ে পদচ্যুত হতে হলো। ২০০৮ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিচার বিভাগ এভাবে একের পর এক প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করছে। এই পদক্ষেপে দেশ আবারও দীর্ঘ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে এবং হঠাৎ নির্বাচনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

নয় বিচারকের এ আদালত, যাদের সাধারণত থাইল্যান্ডের রক্ষণশীল রাজতান্ত্রিক শক্তির ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা হয়, জানিয়েছে—৩৯ বছর বয়সী পেটংটার্ন নৈতিক মানদণ্ড “গুরুতরভাবে লঙ্ঘন” করেছেন। জুন মাসে হুন সেনকে করা ফোনকলে তিনি সীমান্তে সংঘাত এড়াতে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন।

আদালত বলেছে, ওই আলাপে তিনি দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ে তাকে হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ সম্বোধন করতে শোনা যায় এবং একই সঙ্গে এক জ্যেষ্ঠ থাই সেনা কর্মকর্তাকে ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে বর্ণনা করতে দেখা যায়।

Blow for Thailand's government as court suspends PM from duty | Reuters

সীমান্ত সংঘাত ও যুদ্ধবিরতি

১ জুলাই আদালত তাকে বিচার চলাকালীন স্থগিত করেছিল। সেই সময়ের মধ্যেই সীমান্ত বিরোধ দ্রুত সহিংস রূপ নেয়। গোলাগুলিতে কয়েক ডজন নিহত হয় এবং কয়েক দশক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।

অবশেষে ২৯ জুলাই মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়া

রায়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে পেটংটার্ন বলেন, তিনি দেশের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেছেন এবং সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

তার ভাষায়, “আমার উদ্দেশ্য ছিল দেশের কল্যাণ, ব্যক্তিগত লাভ নয়। সাধারণ মানুষ ও সেনাদের জীবন রক্ষা করা আমার লক্ষ্য ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “আজকের রায় থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। আমাদের সবাইকে—সরকার, বিরোধী দল এবং জনগণ—একসঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে আর কোনো নতুন রাজনৈতিক মোড় তৈরি না হয়।”

Thai prime minister suspended by the Constitutional Court

শিনাওয়াত্রা পরিবারের জন্য আঘাত

এ রায় পেটংটার্ন ও তার বাবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাকসিন শিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার মধ্যে দ্বিতীয়।

৭৬ বছর বয়সী তাকসিন সম্প্রতি রাজতন্ত্র অবমাননার অভিযোগ থেকে খালাস পেলেও এখনো আরেকটি মামলার মুখোমুখি। ২০২৩ সালে ১৬ বছর নির্বাসনের পর দেশে ফিরে দুর্নীতির সাজা কমানোর পর তাকে জেলখানার বদলে হাসপাতালের বিশেষ কক্ষে রাখা হয়েছিল। আদালত এখন সেটি তদন্ত করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রক্ষণশীল শক্তিগুলো তাকসিনের এ মামলা কাজে লাগিয়ে তার দল ফিউ থাইকে (যাদের নিম্নকক্ষে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসন রয়েছে) সেনা-ঘনিষ্ঠ দলগুলোর সঙ্গে জোটে যেতে বাধ্য করতে পারে। তবে সেখানে ফিউ থাইকে ছোট অংশীদার হিসেবে থাকতে হতে পারে।

এক গবেষকের মতে, “সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে তাকসিনকে আবার জেলে পাঠানো হতে পারে। সেটি ব্যবহার করে ফিউ থাইকে অসম জোটে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হতে পারে।”

Thailand’s Pheu Thai allies with military rivals to form new government

সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী

থাইল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে যাদের দল প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে, কেবল তারাই সরকার গঠন করতে পারবেন।

ফিউ থাইয়ের কাছে এখনো একজন প্রার্থী রয়েছেন—৭৭ বছর বয়সী চাইকাসেম নিটিসিরি, যিনি তাকসিনের ঘনিষ্ঠ এবং সাবেক বিচারমন্ত্রী।

অন্যদিকে রক্ষণশীল দলে আছেন ভুমজাইথাই পার্টির আনুতিন চারণভিরাকুল এবং সাবেক সেনাপ্রধান প্রয়ুথ চান-ও-চা। প্রয়ুথ ২০১৪ সালের সেনা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন এবং টানা নয় বছর থাইল্যান্ড শাসন করেন। বর্তমানে তিনি প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য, আবার রাজনীতিতে ফিরতে হলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক থিতিনান পংসুধিরাক বলেছেন, আনুতিনই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী। তার মতে, ভুমজাইথাই তুলনামূলক ছোট দল হলেও তাদের প্রভাবশালী মহলের সমর্থন রয়েছে।

তিনি বলেন, “আনুতিন এমন চুক্তি করতে পারেন যেখানে ফিউ থাই সরকারে থাকলেও ভুমজাইথাই মূল নিয়ন্ত্রণ নেবে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ভাগাভাগি করে জোট সরকার চালিয়ে যেতে পারে এবং সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে টিকে থাকতে পারে।”

স্ন্যাপ নির্বাচনের সম্ভাবনা

তবে যদি সংসদ নতুন সরকার নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে হঠাৎ করে নতুন নির্বাচন ডাকতে হতে পারে।