ভারত ও জাপান শুক্রবার প্রতিরক্ষা সহযোগিতার এক বড় পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। এই সহযোগিতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে পরস্পরের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো, ঝুঁকি মূল্যায়নে সমন্বয় তৈরি করা, বিশেষ বাহিনীর যৌথ কার্যক্রম এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যৌথ মহড়া জোরদার করা।
টোকিওতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা’র শীর্ষ বৈঠকের পর নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ে যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করা হয়। এটি ২০০৮ সালের যৌথ ঘোষণার হালনাগাদ সংস্করণ, যা দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। গত দুই দশকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা যেমন বেড়েছে, তেমনি কোয়াড কাঠামোর মাধ্যমেও ভারত-জাপান সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে।
মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিকের লক্ষ্যে
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও বলপ্রয়োগমুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক গঠনে ভারত ও জাপানের ভূমিকা অপরিহার্য। দুই দেশ শুধু জাতীয় নিরাপত্তা নয়, বরং অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখতেও পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াবে।
একই সঙ্গে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা ইস্যুতে আরও সমন্বয় তৈরি করবে এবং আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
চীনকে উদ্দেশ্য না করেও উদ্বেগ প্রকাশ
যদিও ঘোষণায় সরাসরি চীনের নাম বলা হয়নি, মোদি ও ইশিবা পূর্ব চীন সাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, কোনো একতরফা পদক্ষেপে নৌ ও আকাশপথে চলাচলের স্বাধীনতা ব্যাহত করা যাবে না। শক্তি বা জোরজবরদস্তি দিয়ে স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের যে কোনো প্রচেষ্টারও বিরোধিতা করা হয়েছে।
দুই প্রধানমন্ত্রী বিরোধপূর্ণ দ্বীপ ও স্থাপনায় সামরিকরণ নিয়েও উদ্বেগ জানান। স্পষ্টভাবে বলা হয়, সমুদ্রবিষয়ক বিরোধ অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে জাতিসংঘের সমুদ্র আইন কনভেনশন অনুসারে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে।
প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে গভীর সহযোগিতা
নতুন ঘোষণায় ভারত ও জাপানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট কার্যক্রমের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
উন্নতমানের দ্বিপাক্ষিক সামরিক মহড়া
উদীয়মান নিরাপত্তা ঝুঁকি বিষয়ে তথ্য ও মূল্যায়ন বিনিময়
বিশেষ বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা
লজিস্টিক্স ভাগাভাগির জন্য দ্বিপাক্ষিক সরবরাহ ও সেবা চুক্তির ব্যবহার
এছাড়া দুই দেশ যৌথ কর্মীদের মধ্যে নতুন সংলাপ কাঠামো তৈরি করবে, মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ত্রিসেনা মহড়া আয়োজন করবে এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম ও সাইবার প্রতিরক্ষায় একে অপরকে সহযোগিতা করবে।
সমুদ্র নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা
ঘোষণায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সমুদ্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
সমুদ্র পরিস্থিতি সম্পর্কে উন্নত সচেতনতা
জলদস্যু ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে আইন প্রয়োগকারী সহযোগিতা
তৃতীয় দেশের জন্য সমুদ্র আইন প্রয়োগে সহায়তা
প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্ষেত্রেও দুই দেশ যৌথভাবে সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ও উৎপাদনে কাজ করবে। উচ্চপ্রযুক্তি সরঞ্জাম সহযোগিতায় রপ্তানি নীতিও সহজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও সাইবার নিরাপত্তা
ভারত ও জাপান সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ মোকাবিলায় গোয়েন্দা তথ্য ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করবে। সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামো রক্ষায় কাজ করবে এবং মহাকাশ প্রযুক্তি জাতীয় নিরাপত্তা, ন্যাভিগেশন ও পৃথিবী পর্যবেক্ষণে ব্যবহার বাড়াবে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষা জাপানের তীব্র সমালোচনা কুড়ালেও পরবর্তীতে চীন ও উত্তর কোরিয়ার কারণে উভয়ের নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি পাকিস্তানের সহায়তায় এগোনোও এ সহযোগিতার পেছনে বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মোদির বৈঠক
টোকিও সফরে মোদি জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও ইয়োশিহিদে সুগা’র সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বাণিজ্য, সেমিকন্ডাক্টরসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অগ্রগতির পর্যালোচনা করা হয়।
দিল্লি-টোকিও প্রতিরক্ষা সম্পর্কে নতুন রূপ
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১১:২৬:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫
- 34
জনপ্রিয় সংবাদ




















