০৫:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাপান ভারতের সেমিকন্ডাক্টর ও এআই খাতে ৬৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে

বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে টোকিওতে স্বাগত জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাপান আগামী এক দশকে ভারতে ১০ ট্রিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৬৮ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ করবে।

ইশিবা বলেন, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ এবং তার দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি বৈশ্বিক পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। অন্যদিকে জাপানের আধুনিক প্রযুক্তি বিশ্ব অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। এই বিনিয়োগ মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর এবং নতুন প্রজন্মের পরিবহন খাতে সহযোগিতা জোরদার করবে। মোদী জানান, দুই দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

নিরাপত্তা চুক্তি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
দুই নেতা নতুন নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তিতেও পৌঁছান। এতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খলা রক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইশিবা জানান, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী এখন আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। ভারতীয় নৌবাহিনীতে জাহাজে স্থাপিত অ্যান্টেনা সিস্টেম ‘ইউনিকর্ন’ হস্তান্তরের কাজও এগোচ্ছে।

মোদী বলেন, ভারত ও জাপান শুধু নিজেদের জন্য নয়, বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তিনি দুই দেশের সম্পর্ককে “নতুন ও সোনালী অধ্যায়ের সূচনা” বলে আখ্যায়িত করেন।

পরবর্তী দশকের রোডম্যাপ
মোদী জানান, আগামী দশকের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, পরিবেশ, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, চলাচল, জনগণের মধ্যে বিনিময় এবং স্থানীয় প্রশাসনের অংশীদারিত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

জলবায়ু, প্রযুক্তি ও খনিজ সহযোগিতা
দুই দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্যে রয়েছে ভারতের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সহায়তা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য জাপানি বিনিয়োগ। এছাড়া ডিজিটাল অংশীদারিত্ব, মহাকাশ গবেষণা এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ শৃঙ্খলা শক্তিশালী করতেও সহযোগিতার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মোদী উল্লেখ করেন, উচ্চপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা উভয়ের জন্য অগ্রাধিকার। বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর ও বিরল মাটির খনিজ বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে।

বিশেষজ্ঞ মত
ভারতের ও.পি. জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক গীতাঞ্জলি সিনহা রায় বলেন, এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা উদ্যোগ সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখার জন্য বড় পদক্ষেপ। তিনি জানান, সেমিকন্ডাক্টর সৌরপ্যানেল, চিকিৎসা যন্ত্র এবং স্বয়ংক্রিয় সেন্সরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর ভারতের নিজস্ব সেমিকন্ডাক্টর মিশনের সঙ্গে এই উদ্যোগ সরাসরি সম্পর্কিত।

তিনি আরও বলেন, মোদীর জাপান সফরটি চীন সফরের আগে হওয়া প্রমাণ করে যে জাপান ভারতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ এবং স্থায়ী বন্ধু।

শ্রমবাজারে সহযোগিতা
ভারত ও জাপান আগামী পাঁচ বছরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ লাখ কর্মী বিনিময়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে পঞ্চাশ হাজার দক্ষ ও অদক্ষ ভারতীয় কর্মী জাপানে কাজ করবে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, জাপানে নির্দিষ্ট কিছু খাতে শ্রম সংকট রয়েছে এবং ভারত সেই শূন্যতা পূরণে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা
দুই প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি ও মার্কিন শুল্ক নিয়ে মতবিনিময় করেন। মিশ্রি জানান, এ ধরনের চ্যালেঞ্জ আসলে ভারত ও জাপানের ব্যবসা ও সরবরাহ শৃঙ্খলায় আরও নিবিড় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তাকে জোরালো করছে।

দিনের শুরুতে মোদী এক ব্যবসায়িক সভায় অংশ নেন এবং বলেন, যেমনভাবে ভারত ও জাপান একসাথে গাড়ি শিল্পে সফলতা অর্জন করেছে, তেমনি ব্যাটারি, রোবটিকস, সেমিকন্ডাক্টর, জাহাজ নির্মাণ এবং পারমাণবিক শক্তির মতো খাতেও নতুন অগ্রগতি সম্ভব।

সফরের তাৎপর্য
এটি মোদীর অষ্টম জাপান সফর হলেও প্রায় সাত বছর পর তাঁর একক দ্বিপাক্ষিক সফর। এর আগে অন্যান্য সফরগুলো মূলত বহুপাক্ষিক বৈঠক বা আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের জন্য ছিল। এবারের সফর নতুন নেতৃত্বাধীন জাপানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট করেছে

জাপান ভারতের সেমিকন্ডাক্টর ও এআই খাতে ৬৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে

১১:৫৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫

বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে টোকিওতে স্বাগত জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাপান আগামী এক দশকে ভারতে ১০ ট্রিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৬৮ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ করবে।

ইশিবা বলেন, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ এবং তার দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি বৈশ্বিক পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। অন্যদিকে জাপানের আধুনিক প্রযুক্তি বিশ্ব অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। এই বিনিয়োগ মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর এবং নতুন প্রজন্মের পরিবহন খাতে সহযোগিতা জোরদার করবে। মোদী জানান, দুই দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

নিরাপত্তা চুক্তি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
দুই নেতা নতুন নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তিতেও পৌঁছান। এতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খলা রক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইশিবা জানান, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী এখন আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। ভারতীয় নৌবাহিনীতে জাহাজে স্থাপিত অ্যান্টেনা সিস্টেম ‘ইউনিকর্ন’ হস্তান্তরের কাজও এগোচ্ছে।

মোদী বলেন, ভারত ও জাপান শুধু নিজেদের জন্য নয়, বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তিনি দুই দেশের সম্পর্ককে “নতুন ও সোনালী অধ্যায়ের সূচনা” বলে আখ্যায়িত করেন।

পরবর্তী দশকের রোডম্যাপ
মোদী জানান, আগামী দশকের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগ, উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, পরিবেশ, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, চলাচল, জনগণের মধ্যে বিনিময় এবং স্থানীয় প্রশাসনের অংশীদারিত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

জলবায়ু, প্রযুক্তি ও খনিজ সহযোগিতা
দুই দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্যে রয়েছে ভারতের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সহায়তা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য জাপানি বিনিয়োগ। এছাড়া ডিজিটাল অংশীদারিত্ব, মহাকাশ গবেষণা এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ শৃঙ্খলা শক্তিশালী করতেও সহযোগিতার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মোদী উল্লেখ করেন, উচ্চপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা উভয়ের জন্য অগ্রাধিকার। বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর ও বিরল মাটির খনিজ বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে।

বিশেষজ্ঞ মত
ভারতের ও.পি. জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক গীতাঞ্জলি সিনহা রায় বলেন, এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা উদ্যোগ সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখার জন্য বড় পদক্ষেপ। তিনি জানান, সেমিকন্ডাক্টর সৌরপ্যানেল, চিকিৎসা যন্ত্র এবং স্বয়ংক্রিয় সেন্সরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর ভারতের নিজস্ব সেমিকন্ডাক্টর মিশনের সঙ্গে এই উদ্যোগ সরাসরি সম্পর্কিত।

তিনি আরও বলেন, মোদীর জাপান সফরটি চীন সফরের আগে হওয়া প্রমাণ করে যে জাপান ভারতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ এবং স্থায়ী বন্ধু।

শ্রমবাজারে সহযোগিতা
ভারত ও জাপান আগামী পাঁচ বছরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ লাখ কর্মী বিনিময়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে পঞ্চাশ হাজার দক্ষ ও অদক্ষ ভারতীয় কর্মী জাপানে কাজ করবে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, জাপানে নির্দিষ্ট কিছু খাতে শ্রম সংকট রয়েছে এবং ভারত সেই শূন্যতা পূরণে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা
দুই প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি ও মার্কিন শুল্ক নিয়ে মতবিনিময় করেন। মিশ্রি জানান, এ ধরনের চ্যালেঞ্জ আসলে ভারত ও জাপানের ব্যবসা ও সরবরাহ শৃঙ্খলায় আরও নিবিড় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তাকে জোরালো করছে।

দিনের শুরুতে মোদী এক ব্যবসায়িক সভায় অংশ নেন এবং বলেন, যেমনভাবে ভারত ও জাপান একসাথে গাড়ি শিল্পে সফলতা অর্জন করেছে, তেমনি ব্যাটারি, রোবটিকস, সেমিকন্ডাক্টর, জাহাজ নির্মাণ এবং পারমাণবিক শক্তির মতো খাতেও নতুন অগ্রগতি সম্ভব।

সফরের তাৎপর্য
এটি মোদীর অষ্টম জাপান সফর হলেও প্রায় সাত বছর পর তাঁর একক দ্বিপাক্ষিক সফর। এর আগে অন্যান্য সফরগুলো মূলত বহুপাক্ষিক বৈঠক বা আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের জন্য ছিল। এবারের সফর নতুন নেতৃত্বাধীন জাপানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট করেছে