‘এমা’ সিরিজে লি হানির অভিজ্ঞতা
অভিনেত্রী লি হানি সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া সিরিজ ‘এমা’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান, এই প্রজেক্ট তার কাছে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি প্রজেক্ট আমার কাছে ভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ‘এমা’ আমাকে এক ধরনের নতুন উত্তেজনা দিয়েছে—এমন একটি কাজ যে এই সময়ে সম্ভব হয়েছে, সেটিই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।’’
সিরিজটি ২২ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে। এর কাহিনি গড়ে উঠেছে ১৯৮০-এর দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত বিতর্কিত কোরিয়ান চলচ্চিত্র ‘ম্যাডাম এমা’কে ঘিরে। সেখানে লি হানি অভিনয় করেছেন শীর্ষ তারকা জুং হি-রানের ভূমিকায়, যিনি এক নবীন অভিনেত্রীর সঙ্গে মিলে সিনেমা জগতের অন্ধকার বাস্তবতার মুখোমুখি হন।
লি বলেন, ‘‘ভালো লাগে এই ভেবে যে আজ এমন গল্প বলা যায় যেখানে সহিংসতার বদলে স্বাস্থ্যকর দৃষ্টিভঙ্গি, হাস্যরস এমনকি সামান্য কমেডির ছোঁয়াও থাকে। সেই আনন্দই আমাকে এই কাজে আকৃষ্ট করেছে।’’
১৯৮০-এর দশকের অন্ধকার চলচ্চিত্র জগত
কাহিনিতে দেখা যায়, হি-রান ঘোষণা দেন তিনি আর নগ্ন দৃশ্যে কাজ করবেন না। এরপর প্রযোজকরা তাকে পার্শ্বচরিত্রে ঠেলে দেন এবং নতুন মুখ খুঁজতে অডিশন শুরু করেন। সেখানে নবাগত অভিনেত্রী শিন জু-এ (অভিনয়ে: ব্যাং হিও-রিন) মূল চরিত্র পান।
সে সময় চুংমুরো চলচ্চিত্রশিল্পে নেপথ্যের বাস্তবতা ছিল কঠোর। নারীদের নগ্ন দৃশ্য করা ছিল সাধারণ ঘটনা, এমনকি ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সঙ্গে গোপনে যৌন ঘুষের বিনিময়ও হতো। বাস্তবে ‘ম্যাডাম এমা’ সিরিজ পরপর ১৩টি চলচ্চিত্র তৈরি করেছিল। একদিকে এসব চলচ্চিত্র নারী আকাঙ্ক্ষাকে সামনে আনার জন্য প্রশংসিত হলেও অন্যদিকে অভিনেত্রীদের পুরুষ দর্শকের কামনার বস্তুতে পরিণত করেছিল।
লি হানি বলেন, ‘‘১৯৮০-এর দশকে অভিনেত্রী হিসেবে টিকে থাকা ভীষণ কঠিন ছিল। আমি যদি সেই সময় জন্মাতাম, হয়তো অভিনয় চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতেও এমন অনেক প্রস্তাব এসেছিল যেখানে নারীদের কেবল পণ্য হিসেবে দেখানো হতো, যা আমাকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল।’’
চরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা
লি জানান, হি-রান চরিত্রটি তার কাছে অনুপ্রেরণামূলক। ‘‘পুরো চরিত্রের কাজ করতে গিয়ে আমি নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছি—আমি যদি ১৯৮০-এর দশকে বাঁচতাম, তার মতো সাহসী হতে পারতাম কি? এই প্রশ্নটা আমার ভেতরে গভীরভাবে রয়ে গেছে।’’
চরিত্রটিকে বাস্তব করে তুলতে তিনি ৭০ ও ৮০ দশকের অভিনেত্রীদের ভিডিও দেখেছেন, শিখেছেন সিউল উপভাষা। লি বলেন, ‘‘সেই সময়টা খুব সাম্প্রতিক হলেও মানুষের স্মৃতিতে ভীষণ তাজা। তাই সামান্যতম ভুলও খুব চোখে লাগে। পোশাক, মেকআপ, চুল, ভঙ্গিমা—সবকিছুতে পরিচালকের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি।’’
নারী ক্ষমতায়নের নতুন যুগ
লি মনে করেন, বর্তমান সময়ে তিনি অনেক বেশি সৌভাগ্যবান। ‘‘আজকের স্ক্রিপ্টগুলো এক দশক আগের থেকে একেবারেই ভিন্ন। আগে নারী চরিত্রগুলো সাধারণত খল চরিত্রে বা ঠাণ্ডা মনের চালাক রূপে সীমাবদ্ধ থাকত। নায়িকারা সাধারণত ‘উদ্ধারকর্তা’ পুরুষ চরিত্রের ওপর নির্ভরশীল হতো।’’
‘‘কিন্তু এখন নারী চরিত্র নিজের জীবন নিজে গড়ে নিচ্ছে, নতুন পথ দেখাচ্ছে। লিঙ্গ আর চরিত্র বাছাইয়ে সীমাবদ্ধতা আনছে না। এতে অভিনেত্রীদের জন্য সম্ভাবনা ও বিকল্প বেড়ে গেছে। আমি কৃতজ্ঞ যে এমন সময়ে অভিনয় করছি।’’
তিনি আরও বলেন, ১৯৮০-এর দশকে এরোটিক চলচ্চিত্রগুলো সেনা-শাসক চুন দু-হোয়ানের শাসনামলে রাজনৈতিক মনোযোগ সরাতে ‘৩এস নীতি’ (স্ক্রিন, স্পোর্টস, সেক্স)-এর অংশ হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছিল। অথচ এই সিরিজে দুই নারী নিজেদের শরীরের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে।
সংগ্রামের উত্তরাধিকার
লি জানান, নাটকের একটি সংলাপ তার মনে গভীর রেখাপাত করেছে—‘‘বলে ‘৮০-এর দশক এসেছে, কিন্তু পৃথিবী এখনো খারাপ। এই পৃথিবীতে বাঁচতে হলে আমাদের আসলেই কঠিন হতে হবে।’’ লি বলেন, ‘‘সেই সময় হয়তো লড়াই তীব্র ছিল, তবে আজও ভিন্ন কিছু ঘটছে না। এই লড়াই এখনো চলছে, এবং আমাদের ইতিহাসের সেই সংগ্রামই আজকের অবস্থান এনে দিয়েছে। আগামী প্রজন্মও এর প্রভাব অনুভব করবে।’’
তিনি যোগ করেন, ‘‘হয়তো এটি শুনতে বড় কোনো ‘ঐতিহাসিক চেতনা’র মতো মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা আজকের দিনে যদি কিছু ভাবতে পারি, কাজ করতে পারি, কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি বা আওয়াজ তুলতে পারি—তাহলেই পরিবর্তন আসবে। এ কারণেই আমি চাই মানুষ ‘এমা’ দেখুক।’’
অভিনয় মানেই ‘রিং’-এ লড়াই
সিরিজে শিন জু-এ চরিত্রটি এরোটিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করাকে বক্সিং রিংয়ে ওঠার সঙ্গে তুলনা করেছেন। লি হানি বলেন, ‘‘অভিনেত্রী হওয়া মানে অনেক ভালোবাসা পাওয়া, আবার একই সঙ্গে ভীষণ একাকিত্বও বয়ে আনা। এমন অনেক কঠিন দিক আছে যা পরিবারকেও বলা যায় না। অভিনয় একটি জনসমক্ষে পেশা বলেই হয়তো এটিকে রিংয়ে ওঠার সঙ্গে তুলনা করা হয়।’’
লি হানির মতে, এই লড়াই শুধু অভিনেত্রীদের নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ নিজস্বভাবে তা মোকাবিলা করে।