০৩:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিশ্ব সঙ্গীতে এআই-এর সৃজনশীল ঢেউ আইএফএ বার্লিন ২০২৫: যে গ্যাজেটগুলো নিয়ে সবার আলোচনা এআই প্রশিক্ষণে আইনি নজির: লেখকদের সাথে Anthropic-এর $১.৫ বিলিয়ন সমঝোতা যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা লন্ডনের ডানপন্থী সমাবেশে সহিংসতা, রেকর্ড সমাগমে উত্তেজনা দোহায় হামাস নেতাদের ওপর হামলা, যুদ্ধবিরতির আলাপ জটিলতায় নতুন গবেষণা: আটলান্টিক প্রবাহ ভাঙার ঝুঁকি এখন অনেক বেশি” ডাকসু ও জাকসুতে বৈষম্যবিরোধীদের বিপর্যয়, চ্যালেঞ্জের মুখে এনসিপি? জাতীয় নির্বাচনকে ডাকসুর সঙ্গে মেলানো যাবে না, মডেল হিসেবে কাজ করবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার – আকাশ চোপড়া-অশ্বিনকেই ‘সঠিক’ প্রমাণ করছে বাংলাদেশ?

গ্ল্যাডিয়েটরদের জীবন

রোমানদের স্বপ্নে গ্ল্যাডিয়েটর

প্রাচীন রোমানরা গ্ল্যাডিয়েটরদের নিয়ে স্বপ্ন দেখত। অনেকেই কল্পনা করত যে তারা নিজেরাই বালুমাখা অঙ্গনে লড়ছে, চারপাশে তুমুল জনতার গর্জন আর তূরীর শব্দ। যুবক বয়সে এমন স্বপ্নকে ভবিষ্যৎ স্ত্রী সম্পর্কে ইঙ্গিত বলে ধরা হত। যেমন—যদি স্বপ্নে ‘প্রোভোকেটর’-এর (ঢাল আর ছোট তরবারি হাতে যোদ্ধা) সঙ্গে যুদ্ধ করতে দেখা যেত, তবে স্ত্রী হতো সুন্দরী কিন্তু চঞ্চল। আর যদি ‘রেটিয়ারিয়াস’-এর (ত্রিশূল ও জাল হাতে লড়াকু) সঙ্গে যুদ্ধের স্বপ্ন দেখা যেত, তবে স্ত্রী শহরময় ঘুরে বেড়ানো এক নারী হবে বলে মনে করা হত। আর গ্ল্যাডিয়েটররা নিজেরা নাকি স্বপ্ন দেখত ভাল্লুক আর লোহার টুকরার।

নতুন বইয়ে রোমের রক্তাক্ত খেলা

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসিক্যাল ইতিহাসের শিক্ষক হ্যারি সাইডবটম তার নতুন বই Those Who Are About To Die-এ তুলে ধরেছেন রোমান সমাজে গ্ল্যাডিয়েটরদের নানা অর্থ ও প্রতীক। সাধারণত বন্দী বর্বর কিংবা অপরাধীদের গ্ল্যাডিয়েটর বানানো হত। কিন্তু তারা শুধু নিষ্ঠুর খেলোয়াড়ই ছিল না—তাদের অনেকে যৌনতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এমনকি একজন সেনেটরের স্ত্রী এক গ্ল্যাডিয়েটরের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

Ancient Roman Gladiators: Types, Training, and Famous Fighters

রোমান জীবনের বাস্তব চিত্র

অনেকেই মনে করেন রোমানরা আমাদের মতো সভ্য জীবনযাপন করত। কিন্তু সাইডবটমের বই স্পষ্ট করে দেয় ভিন্ন এক বাস্তবতা। গ্ল্যাডিয়েটরদের জীবনে ছিল অমানবিকতা, তবে মৃত্যুর ঝুঁকি সবসময় ছিল না। হলিউডের চিত্রের বিপরীতে, গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াইয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল আট জনে একজনের। তবে অপরাধীদের দগ্ধ করে অঙ্গনে দৌড় করানো—রোমানরা তা ভীষণ মজার ব্যাপার বলে মনে করত।

কারা আয়োজন করত গ্ল্যাডিয়েটর খেলা

যে কেউ চাইলে গ্ল্যাডিয়েটর খেলার আয়োজন করতে পারত—যদি তার কাছে যথেষ্ট অর্থ আর জনপ্রিয়তার প্রয়োজন থাকত। তবে সব সম্রাটই আগ্রহ দেখাতেন না। যেমন মার্কাস অরেলিয়াস কোনো আয়োজন করেননি, আর অগাস্টাস বছরে মাত্র দুটি খেলা অনুমোদন করেছিলেন। অন্যদিকে ক্লডিয়াস একবার ব্রিটেন থেকে আনা যুদ্ধবন্দীদের দিয়ে কোলচেস্টার দখলের লড়াই পুনর্নির্মাণ করেছিলেন।

খেলা শুধু লড়াই নয়, ছিল বিশাল প্রদর্শনী। সংগীত, কসরত, আর বন্যপ্রাণীর লড়াই—হাতি, জলহস্তী, জিরাফ ও সিংহ পর্যন্ত হাজির থাকত। দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় ছিল বিনামূল্যে দেওয়া উপহার—রান্না করা মুরগি, খেজুর, গয়না, মিষ্টি, টাকা। এমনকি হলটি ঘ্রাণে ভারী হয়ে গেলে জাফরান ছিটানো হত।

A Day in the Life of a Gladiator in Ancient Rome

জনতার রায়ই ছিল চূড়ান্ত

যদিও লড়াইয়ে রেফারি থাকত, তবু আসল নিয়ন্ত্রণ ছিল দর্শকদের হাতে। ঠিক যেমন আজকের ফুটবল মাঠে দর্শকরা নিয়মকানুন ভালো জানে, তেমনি রোমানরাও জানত সব খুঁটিনাটি। সম্রাটের বিখ্যাত আঙুল ওঠা বা নামা আসলে জনতার ইচ্ছারই প্রতিফলন ছিল।

গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রস্তুতি ও শেষ রাত

খেলার আগের রাতে সাধারণ মানুষ ঢুকে পড়তে পারত গ্ল্যাডিয়েটরদের ব্যারাকে। সেখানে যোদ্ধাদের ‘শেষ ভোজ’ দেখতে পাওয়া যেত। সাধারণ দিনে তাদের আহার ছিল সাধারণ—ডাল, শস্য আর নিম্নমানের মদ। কিন্তু খেলার আগের রাতে পরিবেশন করা হত ভোজসভা—মাংসের পদ, পাই আর উন্নতমানের মদ। এ দৃশ্য দেখে দর্শকরা নীরবে অনুমান করত কে কতটা শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হবে।

A Day in the Life of a Roman Gladiator | TheCollector

কবরফলক থেকে জানা যায় তাদের অনুভূতি

গ্ল্যাডিয়েটরদের মনের অবস্থা সবচেয়ে ভাল বোঝা যায় তাদের সমাধিলিপি থেকে। অনেকেই নিজেদের মৃত্যুকে বর্ণনা করেছেন সামরিক শৈলীতে। কারও মৃত্যু হয়েছে রেফারির ভুলের কারণে। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক হলো এক গ্রীক গ্ল্যাডিয়েটরের লেখা, যেখানে তিনি তার প্রিয় সঙ্গী মাইলেটাসকে স্মরণ করছেন—যিনি আটবার জয়লাভ করেছিলেন, তারপর নিয়তির হাতে বলি হয়ে অঙ্গন থেকে বিদায় নেন।

গ্ল্যাডিয়েটররা শুধু রক্তক্ষয়ী খেলোয়াড় ছিলেন না, তারা রোমান সমাজে ছিল ভয়, বিনোদন, কামনা ও বীরত্বের এক জটিল প্রতীক। সাইডবটমের বই সেই অমানবিক অথচ রঙিন ইতিহাসের পর্দা উন্মোচন করে।

বিশ্ব সঙ্গীতে এআই-এর সৃজনশীল ঢেউ

গ্ল্যাডিয়েটরদের জীবন

১০:০০:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রোমানদের স্বপ্নে গ্ল্যাডিয়েটর

প্রাচীন রোমানরা গ্ল্যাডিয়েটরদের নিয়ে স্বপ্ন দেখত। অনেকেই কল্পনা করত যে তারা নিজেরাই বালুমাখা অঙ্গনে লড়ছে, চারপাশে তুমুল জনতার গর্জন আর তূরীর শব্দ। যুবক বয়সে এমন স্বপ্নকে ভবিষ্যৎ স্ত্রী সম্পর্কে ইঙ্গিত বলে ধরা হত। যেমন—যদি স্বপ্নে ‘প্রোভোকেটর’-এর (ঢাল আর ছোট তরবারি হাতে যোদ্ধা) সঙ্গে যুদ্ধ করতে দেখা যেত, তবে স্ত্রী হতো সুন্দরী কিন্তু চঞ্চল। আর যদি ‘রেটিয়ারিয়াস’-এর (ত্রিশূল ও জাল হাতে লড়াকু) সঙ্গে যুদ্ধের স্বপ্ন দেখা যেত, তবে স্ত্রী শহরময় ঘুরে বেড়ানো এক নারী হবে বলে মনে করা হত। আর গ্ল্যাডিয়েটররা নিজেরা নাকি স্বপ্ন দেখত ভাল্লুক আর লোহার টুকরার।

নতুন বইয়ে রোমের রক্তাক্ত খেলা

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসিক্যাল ইতিহাসের শিক্ষক হ্যারি সাইডবটম তার নতুন বই Those Who Are About To Die-এ তুলে ধরেছেন রোমান সমাজে গ্ল্যাডিয়েটরদের নানা অর্থ ও প্রতীক। সাধারণত বন্দী বর্বর কিংবা অপরাধীদের গ্ল্যাডিয়েটর বানানো হত। কিন্তু তারা শুধু নিষ্ঠুর খেলোয়াড়ই ছিল না—তাদের অনেকে যৌনতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এমনকি একজন সেনেটরের স্ত্রী এক গ্ল্যাডিয়েটরের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

Ancient Roman Gladiators: Types, Training, and Famous Fighters

রোমান জীবনের বাস্তব চিত্র

অনেকেই মনে করেন রোমানরা আমাদের মতো সভ্য জীবনযাপন করত। কিন্তু সাইডবটমের বই স্পষ্ট করে দেয় ভিন্ন এক বাস্তবতা। গ্ল্যাডিয়েটরদের জীবনে ছিল অমানবিকতা, তবে মৃত্যুর ঝুঁকি সবসময় ছিল না। হলিউডের চিত্রের বিপরীতে, গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াইয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল আট জনে একজনের। তবে অপরাধীদের দগ্ধ করে অঙ্গনে দৌড় করানো—রোমানরা তা ভীষণ মজার ব্যাপার বলে মনে করত।

কারা আয়োজন করত গ্ল্যাডিয়েটর খেলা

যে কেউ চাইলে গ্ল্যাডিয়েটর খেলার আয়োজন করতে পারত—যদি তার কাছে যথেষ্ট অর্থ আর জনপ্রিয়তার প্রয়োজন থাকত। তবে সব সম্রাটই আগ্রহ দেখাতেন না। যেমন মার্কাস অরেলিয়াস কোনো আয়োজন করেননি, আর অগাস্টাস বছরে মাত্র দুটি খেলা অনুমোদন করেছিলেন। অন্যদিকে ক্লডিয়াস একবার ব্রিটেন থেকে আনা যুদ্ধবন্দীদের দিয়ে কোলচেস্টার দখলের লড়াই পুনর্নির্মাণ করেছিলেন।

খেলা শুধু লড়াই নয়, ছিল বিশাল প্রদর্শনী। সংগীত, কসরত, আর বন্যপ্রাণীর লড়াই—হাতি, জলহস্তী, জিরাফ ও সিংহ পর্যন্ত হাজির থাকত। দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় ছিল বিনামূল্যে দেওয়া উপহার—রান্না করা মুরগি, খেজুর, গয়না, মিষ্টি, টাকা। এমনকি হলটি ঘ্রাণে ভারী হয়ে গেলে জাফরান ছিটানো হত।

A Day in the Life of a Gladiator in Ancient Rome

জনতার রায়ই ছিল চূড়ান্ত

যদিও লড়াইয়ে রেফারি থাকত, তবু আসল নিয়ন্ত্রণ ছিল দর্শকদের হাতে। ঠিক যেমন আজকের ফুটবল মাঠে দর্শকরা নিয়মকানুন ভালো জানে, তেমনি রোমানরাও জানত সব খুঁটিনাটি। সম্রাটের বিখ্যাত আঙুল ওঠা বা নামা আসলে জনতার ইচ্ছারই প্রতিফলন ছিল।

গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রস্তুতি ও শেষ রাত

খেলার আগের রাতে সাধারণ মানুষ ঢুকে পড়তে পারত গ্ল্যাডিয়েটরদের ব্যারাকে। সেখানে যোদ্ধাদের ‘শেষ ভোজ’ দেখতে পাওয়া যেত। সাধারণ দিনে তাদের আহার ছিল সাধারণ—ডাল, শস্য আর নিম্নমানের মদ। কিন্তু খেলার আগের রাতে পরিবেশন করা হত ভোজসভা—মাংসের পদ, পাই আর উন্নতমানের মদ। এ দৃশ্য দেখে দর্শকরা নীরবে অনুমান করত কে কতটা শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হবে।

A Day in the Life of a Roman Gladiator | TheCollector

কবরফলক থেকে জানা যায় তাদের অনুভূতি

গ্ল্যাডিয়েটরদের মনের অবস্থা সবচেয়ে ভাল বোঝা যায় তাদের সমাধিলিপি থেকে। অনেকেই নিজেদের মৃত্যুকে বর্ণনা করেছেন সামরিক শৈলীতে। কারও মৃত্যু হয়েছে রেফারির ভুলের কারণে। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক হলো এক গ্রীক গ্ল্যাডিয়েটরের লেখা, যেখানে তিনি তার প্রিয় সঙ্গী মাইলেটাসকে স্মরণ করছেন—যিনি আটবার জয়লাভ করেছিলেন, তারপর নিয়তির হাতে বলি হয়ে অঙ্গন থেকে বিদায় নেন।

গ্ল্যাডিয়েটররা শুধু রক্তক্ষয়ী খেলোয়াড় ছিলেন না, তারা রোমান সমাজে ছিল ভয়, বিনোদন, কামনা ও বীরত্বের এক জটিল প্রতীক। সাইডবটমের বই সেই অমানবিক অথচ রঙিন ইতিহাসের পর্দা উন্মোচন করে।