ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ও নতুন হামলা
কায়রো, ১ সেপ্টেম্বর (রয়টার্স): ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটির ভেতরে আরও গভীরে ট্যাংক নিয়ে প্রবেশ করেছে এবং শহরের এক উপশহরে বিস্ফোরকভর্তি যান উড়িয়ে দিয়েছে। সোমবারের বিমান হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
একই সময়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণহত্যা বিষয়ক গবেষক সংগঠনের সভাপতি জানিয়েছেন, তাদের সংগঠন এক প্রস্তাব পাস করেছে যেখানে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করার জন্য আইনগত মানদণ্ড পূর্ণ হয়েছে।
ইসরায়েল এখনো এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগে দেশটি বারবার অস্বীকার করেছে যে তারা গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে।

গাজা দখলের পরিকল্পনা
প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর শুরু গাজা সিটি থেকে, লক্ষ্য হামাসকে ধ্বংস করা এবং অবশিষ্ট ৪৮ জন জিম্মিকে উদ্ধার করা।
বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী পুরনো সাঁজোয়া যান নিয়ে অতিরিক্ত ভিড়ভাট্টায় থাকা শেখ রাদওয়ান মহল্লায় প্রবেশ করে এবং সেগুলো দূর থেকে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস হয় এবং আরও পরিবার ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
গাজা সিটির আকাশে ছোড়া লিফলেটে ইসরায়েলি সেনারা বাসিন্দাদের দ্রুত দক্ষিণ দিকে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। তারা জানায়, পশ্চিম অংশে অভিযান আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
শেখ রাদওয়ানের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু আবদাল্লাহ রয়টার্সকে বলেন, “মানুষ বিভ্রান্ত—থেকে মৃত্যুবরণ করবে নাকি কোথাও গন্তব্য ছাড়াই পালাবে।”
তিনি যোগ করেন, “ভয়ংকর এক রাত ছিল, বিস্ফোরণ থামেনি, ড্রোনও আকাশে ঘুরছিল অবিরামভাবে। অনেকেই জীবন বাঁচাতে ঘর ছেড়ে গেছে, আবার অনেকেই জানে না কোথায় যাবে।”

মৃত্যু ও দুর্ভিক্ষের খবর
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজা জুড়ে হামাসের বিরুদ্ধে লড়ছে এবং গত একদিনে বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনা ও পোস্টে আঘাত হেনেছে যেখান থেকে তাদের বাহিনীর ওপর হামলা চালানো হয়েছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৯৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া অপুষ্টি ও অনাহারে আরও ৯ জন, যাদের মধ্যে ৩ শিশু রয়েছে, মারা গেছে। এভাবে এ পর্যন্ত অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৮ জনে, যার মধ্যে ১২৭ শিশু।
তবে ইসরায়েল বলছে, এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা অতিরঞ্জিত এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণে এসব মৃত্যু ঘটেছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, গাজা সিটিতে বিমান হামলায় নিহত ১৯ জনের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
নীতিনির্ধারণী বৈঠক ও নতুন আক্রমণের প্রস্তুতি
রবিবার রাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ডেকে গাজা সিটি দখলের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি শহরটিকে হামাসের ঘাঁটি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তবে সেনাবাহিনী সতর্ক করেছে, এই অভিযানে এখনো হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে ইসরায়েলের ভেতরে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ বাড়ছে।

যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
এই যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার মধ্য দিয়ে। ওই ঘটনায় প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক, এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। বর্তমানে অবশিষ্ট ৪৮ জন জিম্মির মধ্যে ২০ জন জীবিত থাকার কথা বিশ্বাস করা হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসেবে, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৩,০০০-এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। এর ফলে গাজা ভয়াবহ মানবিক সংকটে ডুবে গেছে এবং অধিকাংশ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
চলতি বছরের জুলাইয়ে যুদ্ধবিরতি আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং এরপর থেকে নতুন করে কোনো সমাধান আসেনি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















