স্মরণসভায় পরিবার ও সম্পর্কের শক্তি
সম্প্রতি স্বামীর দাদীর স্মরণসভায় অংশ নিয়েছিলাম। তিনি ছিলেন অসাধারণ, দৃঢ় এবং মেধাবী একজন নারী, যিনি গত জুনে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সন্তান ও নাতি-নাতনিরা বক্তৃতা করেন এবং জীবনের বাস্তবচিত্র তুলে ধরেন—মধুরতা আড়াল না করেই।
১৯ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে বিয়ে করলেও চল্লিশের কোঠায় আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে সেরা ফল করেন। তিনি কখনও কারও কাছে তাসের খেলায় হার মানেননি, প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন এবং আশির দশকেও প্রতিযোগিতামূলকভাবে সাঁতার কেটেছেন। তাঁর স্বামী মারা যান ২০০৮ সালে, তবে তিনি পরিবারকে একত্রে ধরে রেখেছিলেন।
ছোটবেলায় আমি বড় পরিবারের আনন্দ কল্পনায় পড়তাম, কিন্তু বাস্তবে তা পাইনি। বড় হয়ে স্বামীর পরিবারে যোগ দিয়ে সেটাই পেলাম। আমার আর স্বামীর দাম্পত্যের অন্যতম ভিত্তি এই পারিবারিক বন্ধনকে লালন করা।
সমুদ্রযাত্রা ও দাম্পত্যের দৃঢ়তা
এই প্রসঙ্গে নতুন বই “এ ম্যারেজ অ্যাট সি” আলোচিত হয়। সোফি এলমহির্স্টের লেখা বইটি ব্রিটিশ দম্পতি মরিস ও মারালিন বেইলির সত্য কাহিনি। ১৯৭৩ সালে তাঁদের নৌকা এক স্পার্ম হোয়েলের আঘাতে ডুবে যায়, আর তাঁরা ১১৮ দিন প্রশান্ত মহাসাগরে ভেসে ছিলেন একটি রাফট ও ডিঙিতে।
কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁদের পারস্পরিক ভিন্নতা হয়ে ওঠে শক্তি। মারালিনের অদম্য ইতিবাচক মনোভাব মরিসের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে ভারসাম্য দেয়। ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা—এমনকি আবারও নৌকায় থাকার কল্পনা করা—তাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল।
বর্তমান সংস্কৃতির বিপরীতে এক শিক্ষা
বইটি আজকের চরম সাংস্কৃতিক বিভাজনের বিপরীতে একটি শিক্ষা দেয়। একদিকে রক্ষণশীল গোষ্ঠী যারা আগেভাগে বিয়ে ও নারীদের কর্মজীবন ত্যাগকে উৎসাহিত করে। অন্যদিকে আছেন হেটেরোপেসিমিজমে বিশ্বাসী নারীরা, যারা মনে করেন পুরুষেরা গৃহকর্ম ও সন্তান লালন-পালনে সমান দায়িত্ব নেয় না।
আমি যখন এসব বৈষম্য নিয়ে লিখি, তখন পুরুষদের প্রতি ঘৃণা নয় বরং পরিবর্তনের সম্ভাবনায় আস্থা থেকেই লিখি। সময়ের সঙ্গে সামাজিক মানদণ্ড বদলাচ্ছে এবং আরও পরিবর্তন সম্ভব।
প্রচলিত ধারা ভেঙে বেইলিদের জীবন
বেইলিরা শুরু থেকেই সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন—যা ষাটের দশকের ব্রিটেনে বিরল ও সমালোচিত ছিল। তাঁরা চার্চে বিয়ের পরিবর্তে অন্য পথে যান। নিরাপদ জীবন ও সন্তানসম্ভাবনাময় ঘরের প্রচলিত স্বপ্নের বাইরে তাঁরা বেছে নেন অ্যাডভেঞ্চার।
উদ্ধারের পর মরিস প্রকাশ্যে স্বীকার করেন, শেষ পর্যন্ত মারালিনই ছিলেন তাঁদের বেঁচে থাকার প্রধান চালিকা শক্তি। তিনি বলেন, “আমি বুঝলাম ও আমার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ও সক্ষম, আর আমি তাকে নেতৃত্ব নিতে দিলাম।” এর ফলে তাঁদের সম্পর্ক আরও সমতার ভিত্তিতে দাঁড়ায়।
দাম্পত্যের বাস্তবতা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
অনেক সমালোচক মারালিনকে বেশি পছন্দ করেছেন, তবে আমি মরিসের দিকেও সহানুভূতিশীল। আমিও দাম্পত্যে অন্তর্মুখী, অনেক সময় খিটখিটে স্বভাবের। তবে আমার স্বামীর স্থির স্বভাবের সঙ্গে আমার এই ভিন্নতা ভারসাম্য আনে।
আমাদের সম্পর্কের মূল হলো সমান অংশীদারিত্ব, একে অপরকে কেবল সামাজিক বা মানসিক দায় হিসেবে না দেখা। স্বামীর দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব ও আনুগত্য আমি বিশেষভাবে মূল্য দিই।
সমুদ্রযাত্রার শিক্ষা
স্বামীর দাদীও ছিলেন কঠোর মনের মানুষ। তিনি যেমন ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা এড়িয়ে গেছেন, তেমনি আমিও জানি—আমরা কেউই হয়তো জাহাজডুবির মতো বিপদে টিকে থাকতে পারতাম না। কিন্তু আবেগী ঝড় সামলাতে আমরা পেরেছি।
বেইলিদের অভিজ্ঞতা আমাকে বিশ্বাস করিয়েছে, জীবনে যত ঝড়ই আসুক, তা সামলানো সম্ভব। মূল শিক্ষা হলো—একসঙ্গে থাকতে হলে ভাগ্য অবশ্যই তাদের নৌকাকে দোলাবে, কিন্তু টিকে থাকা সম্ভব যদি দুজন মিলে চালনা করা যায়।