বেইজিংয়ে ঐতিহাসিক মিলন
ইউরোপে গত ৮০ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের আগ্রাসীদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক ঐতিহাসিক বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। এ বৈঠকে তাঁর সঙ্গে থাকছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। এটি তাঁদের প্রথম প্রকাশ্য একসঙ্গে উপস্থিতি, যেখানে পশ্চিমা নেতারা, বিশেষত ডোনাল্ড ট্রাম্প, দূর থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
সামরিক প্যারেড ও চীনের প্রভাব
পুতিন ও কিম জং উন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিতব্য বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিতে যাচ্ছেন। এই সফর প্রমাণ করছে যে স্বৈরশাসনমুখী দেশগুলোর ওপর শির প্রভাব আরও দৃঢ় হচ্ছে। তারা পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইছে। এদিকে ট্রাম্পের একাকীত্ববাদী নীতি দীর্ঘদিনের মার্কিন জোটগুলোকে টলিয়ে দিয়েছে।

নতুন সামরিক জোটের সম্ভাবনা
পশ্চিমা বিশ্লেষকরা এই সমাবেশকে ‘অশান্তির অক্ষ’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। ২০২৪ সালের জুনে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং চীন-উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠতাও এ বৈঠকের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। এসব সম্পর্ক এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্য পাল্টে দিতে পারে।
সফরসূচি ও কূটনৈতিক আলোচনায় অগ্রগতি
মঙ্গলবার কিম জং উন বিশেষ ট্রেনে করে চীনে প্রবেশ করেন। অন্যদিকে, শি ও পুতিন বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে মঙ্গোলিয়ার নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পসহ দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হয়।
পুতিন শিকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন রাশিয়া-চীন সম্পর্ক এখন অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে।
শির অবস্থান ও পশ্চিমবিরোধী বার্তা
সোমবার শি ২০টিরও বেশি অ-পশ্চিমা দেশের নেতাদের এক সম্মেলনে বলেন, আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। এ মন্তব্যকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পরোক্ষ বার্তা হিসেবে দেখছেন।
একই দিনে শি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বৈঠক করেন। এতে দুই দেশের টানাপোড়েন কিছুটা প্রশমিত হয়। এরই মধ্যে ট্রাম্প ভারতকে রাশিয়ার তেল কেনার কারণে চাপ দিচ্ছেন।

মার্কিন প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এই সম্মেলনকে ‘দেখনদারি’ বলে আখ্যা দেন এবং অভিযোগ করেন, চীন ও ভারত রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করছে।
সামরিক উদ্বেগ ও বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া-চীন-উত্তর কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া এখন প্রায় অবশ্যম্ভাবী। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ন্যাশনাল ব্যুরো অব এশিয়ান রিসার্চের বিশ্লেষক ইয়ংজুন কিম লিখেছেন, কয়েক বছর আগেও চীন ও রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু এখন তারা কোরীয় উপদ্বীপে সঙ্কটকালীন সময়ে উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য সামরিক সহযোগী হয়ে উঠছে।
উত্তর কোরিয়ার ভূমিকা
কিম জং উন ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনকে সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে ১৫ হাজারের বেশি সেনা পাঠিয়েছেন। ২০২৪ সালে তিনি পুতিনকে পিয়ংইয়ংয়ে স্বাগত জানান—যা ২৪ বছরে প্রথম। এই পদক্ষেপকে অনেকে শিকে পাশ কাটিয়ে উত্তর কোরিয়ার নির্ভরতা কমানোর কৌশল হিসেবে দেখেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে প্রায় ৬০০ উত্তর কোরিয়ান সেনা নিহত হয়েছে এবং আরও সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

পুতিনের বার্তা
শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলনে পুতিন বলেন, নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ন্যায্য ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। তাঁর মতে, ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণই ইউরোপের নিরাপত্তা অস্থিরতার মূল কারণ।
বেইজিং সফরে শি ও কিমের সঙ্গে বৈঠক পুতিনের ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে নতুন ইঙ্গিত দিতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















