সিটির অস্বাভাবিক খারাপ শুরু
গত সাত মৌসুমের ছয়টিতে প্রিমিয়ার লিগ জেতার পর, গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির শিরোপা হাতছাড়া হওয়াকে অনেকেই সাময়িক ব্যর্থতা হিসেবে দেখেছিলেন। তবে এবারের মৌসুমে আবারও বড় অঙ্কের খরচের পরও পরিস্থিতি ভালো হয়নি।
ব্রাইটনের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারের পর গার্দিওলার দল এখন প্রিমিয়ার লিগে ২০০৪-০৫ মৌসুমের পর সবচেয়ে খারাপ সূচনা করেছে। ৩৮ ম্যাচের মৌসুমে এরকম অবস্থান থেকে কোনো দলই এখন পর্যন্ত শিরোপা জিততে পারেনি।
খেলায় নিয়ন্ত্রণ হারানো
পেপ গার্দিওলার দলের মূল শক্তি সবসময় ছিল নিয়ন্ত্রণ, ছন্দময় আক্রমণ এবং সুপরিকল্পিত প্যাটার্ন। মৌসুমের শুরুতে উলভসকে ৪-০ গোলে হারানোয় মনে হয়েছিল সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে দল। কিন্তু ব্রাইটনের বিপক্ষে হার আবারও পুরনো অসঙ্গতিগুলো সামনে এনেছে।
প্রথমার্ধে সিটি ব্রাইটনকে প্রায় দম বন্ধ করে রেখেছিল। হলান্ড তার ১০০তম প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাইটনের কোচ একসঙ্গে চারজন খেলোয়াড় নামিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন। প্রথমে মিলনারের পেনাল্টি থেকে সমতা, এরপর শেষ মুহূর্তে গ্রোসের গোলে ব্রাইটনের জয় নিশ্চিত হয়।
গার্দিওলা ম্যাচ শেষে বলেন,
“আমরা এক ঘণ্টা দারুণ খেলেছি, কিন্তু হঠাৎ করে খেলা ভুলে গেলাম। গোল খাওয়ার পর আর আগের মতো খেলতে পারিনি।”
রদ্রির প্রত্যাবর্তন
গত মৌসুমে সিটির সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল রদ্রির দীর্ঘমেয়াদি ইনজুরি। গত সেপ্টেম্বর হাঁটুর চোটে ছিটকে যাওয়ার পর দল তার নেতৃত্ব হারায়। তার অনুপস্থিতিতে লিগে টানা ৪৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে যায়।
এ মৌসুমে তিনি ফিরলেও আগের মতো ছন্দে পৌঁছাতে সময় লাগবে। রদ্রি নিজেও সতর্ক করে বলেছেন,
“আমি মেসি নই, যে ফিরে এসেই দলকে জয় এনে দেব। ফুটবল একটি দলগত খেলা। আমাদের সবার মান বাড়াতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা যেসব ভুল করছি তা শিশুসুলভ। মনোযোগ ধরে রাখতে পারছি না। প্রতিযোগিতায় থাকতে হলে আমাদের মান বাড়াতে হবে।”
কৌশলগত দুর্বলতা
সিটির রক্ষণভাগের নতুন সমস্যা স্পষ্ট হচ্ছে। টটেনহ্যাম ও ব্রাইটনের বিপক্ষে একই ধরনের দুর্বলতা ধরা পড়ে। দল উচ্চচাপে প্রেস করলেও ফুল-ব্যাকরা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যায়, ফলে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়।
প্রতিপক্ষ সহজেই সাইড থেকে বল এগিয়ে নিয়ে গিয়ে সিটির রক্ষণের ভেতরে ফাঁকা জায়গায় খেলোয়াড়দের প্রবেশ করাতে সক্ষম হচ্ছে। এর ফলে সিটির তিনজন ডিফেন্ডার ছড়িয়ে পড়ে এবং একে অপরের দুর্বল জায়গা ঢাকতে ব্যর্থ হয়।
এই দুর্বলতা সাম্প্রতিক দুই ম্যাচে বড় ভূমিকা রেখেছে। গার্দিওলা কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করবেন, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
হলান্ডই একমাত্র আশা
সব নেতিবাচক পরিস্থিতির মাঝেও সিটির জন্য একমাত্র আশার আলো এরলিং হলান্ড। গত মৌসুমে তুলনামূলকভাবে তার পারফরম্যান্স কিছুটা কমে গেলেও এ মৌসুমে তিনি আবারও ছন্দে ফিরেছেন। তিন ম্যাচে তিনটি গোল করে তিনি প্রমাণ করেছেন, এখনও দলের ভরসা তিনিই।
তবে নতুন প্লেমেকার রায়ান শেরকি চোটে দুই মাস বাইরে থাকায় আক্রমণভাগের দায়িত্ব আরও বেশি বেড়ে গেছে হলান্ডের কাঁধে। যদি সিটি রক্ষণে ভুল কমাতে পারে এবং হলান্ডকে ধারাবাহিকভাবে গোল পেতে সাহায্য করে, তবে তারা শিরোপার দৌড়ে থাকতে পারে।
ম্যানচেস্টার সিটি মৌসুমের শুরুতেই কঠিন সংকটে পড়েছে। রদ্রির ফেরা, হলান্ডের ফর্ম এবং গার্দিওলার অভিজ্ঞতা হয়তো তাদের আবারও ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। তবে এখনই স্পষ্ট—তাদের দ্রুত দুর্বলতা কাটাতে হবে, নাহলে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়বে।