বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ও ঘনঘন দুর্যোগে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। জাতিসংঘের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্যোগে গৃহহীন হলে বা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকালে নারীরা নানা বিপদ ও সহিংসতার শিকার হন। খাদ্য ও চিকিৎসার ঘাটতি, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব এবং চাকরি হারানোর সম্ভাবনা তাদের জীবনকে আরও অনিরাপদ করে তোলে।
প্রতিবেদনটি জোর দিয়েছে যে দুর্যোগ মোকাবিলা ও প্রস্তুতিতে নারীর ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
নতুন প্রকল্প: জিআরডিআরআরআইবিবি
এই বাস্তবতায় ব্র্যাক, ইউএন উইমেন এবং সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সির (সিডা) সহায়তায় “Gender Responsive Disaster Risk Reduction in Bangladesh (GRBDRRIBB)” নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করেছে।
প্রকল্পটির উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা
প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ. আব্দুল ওয়াদুদ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন —
- ইউএন উইমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি নবনীতা বসু সিনহা
- সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন সাব্বিনা সভানসন
- ব্র্যাকের হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের পরিচালক কাজী সাগর সওদাগর
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সরজওয়ানুর রহমান
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও নগর উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. গোলাম কায়কোত আলী।
প্রকল্পের লক্ষ্য ও কার্যক্রম
এই প্রকল্প জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সিভিল সোসাইটি এবং অন্যান্য অংশীদারকে একত্রিত করবে। এর মাধ্যমে —
- দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা,
- দুর্বল জনগোষ্ঠীকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলা,
- নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া,
- স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা গড়ে তোলা হবে।

বক্তাদের মূল বক্তব্য
- এ. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কমাতে প্রস্তুতি, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ও আর্থিক সক্ষমতা জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া কার্যকর দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব নয়।
- নবনীতা বসু সিনহা জানান, বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়নের পথে নিতে হলে দুর্যোগ মোকাবিলা ও সহনশীলতায় লিঙ্গসমতার নিশ্চয়তা অপরিহার্য।
- সাব্বিনা সভানসন বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় লিঙ্গ সমতা কেবল প্রয়োজন নয়, এটি অপরিহার্য। দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে রূপান্তর আনা সম্ভব।
- কাজী সাগর সওদাগর জানান, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলার কার্যকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
- সরজওয়ানুর রহমান বলেন, দুর্যোগকালে নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে। তাদের অভিজ্ঞতা ও চাহিদাকে দুর্যোগ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
- ড. গোলাম কায়কোত আলী বলেন, স্থানীয় জনগণকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। বাস্তবভিত্তিক অংশগ্রহণ ছাড়া স্থায়ী সমাধান আসবে না।

বাস্তবায়ন এলাকা ও সময়সীমা
প্রকল্পটি ২০২৫ সালের আগস্ট থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ১২টি দুর্যোগপ্রবণ জেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। এসব জেলা হলো — কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, কুমিলা, শরীয়তপুর, নড়াইল, সাভার, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, খুলনা ও সাতক্ষীরা।
প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হলো একটি লিঙ্গ-সংবেদনশীল জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি এবং সরকারি কার্যক্রম ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















