০৪:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিশ্ব সঙ্গীতে এআই-এর সৃজনশীল ঢেউ আইএফএ বার্লিন ২০২৫: যে গ্যাজেটগুলো নিয়ে সবার আলোচনা এআই প্রশিক্ষণে আইনি নজির: লেখকদের সাথে Anthropic-এর $১.৫ বিলিয়ন সমঝোতা যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা লন্ডনের ডানপন্থী সমাবেশে সহিংসতা, রেকর্ড সমাগমে উত্তেজনা দোহায় হামাস নেতাদের ওপর হামলা, যুদ্ধবিরতির আলাপ জটিলতায় নতুন গবেষণা: আটলান্টিক প্রবাহ ভাঙার ঝুঁকি এখন অনেক বেশি” ডাকসু ও জাকসুতে বৈষম্যবিরোধীদের বিপর্যয়, চ্যালেঞ্জের মুখে এনসিপি? জাতীয় নির্বাচনকে ডাকসুর সঙ্গে মেলানো যাবে না, মডেল হিসেবে কাজ করবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার – আকাশ চোপড়া-অশ্বিনকেই ‘সঠিক’ প্রমাণ করছে বাংলাদেশ?

বাবার সচেতনতা: সন্তানকে স্মার্টফোনের ফাঁদ থেকে রক্ষার কৌশল

আজকের বাংলাদেশে গ্রামে-শহরে প্রায় প্রতিটি ঘরেই স্মার্টফোন আছে। স্কুলপড়ুয়া শিশু থেকে শুরু করে কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। গেমস, ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—এসবের প্রতি অতিআসক্তি তাদের পড়াশোনার ক্ষতি করছে, মানসিক বিকাশে বাধা দিচ্ছে, এমনকি চোখের দৃষ্টিশক্তি ও ঘুমের ওপরও প্রভাব ফেলছে।

এই বাস্তবতায় একজন বাবার ভূমিকা হয়ে ওঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মা সাধারণত সন্তানের যত্ন ও শৃঙ্খলার দিকে নজর রাখেন, আর বাবা অনেক ক্ষেত্রে জীবনের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন। তিনি যদি সচেতনভাবে সন্তানকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখাতে পারেন, তবে সেটিই হতে পারে শিশুর ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।

বাস্তব উদাহরণ

ঢাকার শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তার দশ বছর বয়সী ছেলে আরিয়ান দিনভর ফোনে গেম খেলত। পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। রফিকুল হঠাৎ করে ছেলেকে ফোন থেকে সরিয়ে দেননি। বরং নিয়ম করে দিলেন—পড়াশোনা শেষ না করা পর্যন্ত ফোনে হাত দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি বিকেলে তাকে সাইকেল চালানো ও পাড়ার মাঠে খেলতে পাঠাতে শুরু করলেন। কয়েক মাসের মধ্যেই আরিয়ান ফোনের চেয়ে খেলাধুলায় বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

Family Discussion Images – Browse 107,198 Stock Photos, Vectors, and Video | Adobe Stock

এই অভিজ্ঞতা দেখায়, সরাসরি নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে ধীরে ধীরে শিশুদের মনোযোগ অন্যদিকে সরানো কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে বাবার সক্রিয় ভূমিকা শিশুর দৈনন্দিন অভ্যাসকে ইতিবাচক দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে।

চট্টগ্রামের এক স্কুলশিক্ষক মাহমুদুল হাসানও একই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটি অনলাইনে কার্টুন দেখত দিনে তিন-চার ঘণ্টা। পরে আমি নিয়ম করে সন্ধ্যায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে গল্প করার সময় ঠিক করলাম। ধীরে ধীরে সে ফোনের চেয়ে পরিবারের সময়কেই বেশি উপভোগ করতে শুরু করে।’

এ উদাহরণ স্পষ্ট করে যে, বিকল্প আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করা গেলে শিশু স্বেচ্ছায় ফোন থেকে দূরে সরে আসে। পরিবারের সময়কে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।

শিশু মনোবিজ্ঞানীর মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু মনোবিজ্ঞানী ড. শারমিন আরা বলেন, ‘শিশুদের জন্য স্মার্টফোন একধরনের উত্তেজনা তৈরি করে। এর ফলে তারা বাস্তব খেলাধুলা ও সামাজিকতার প্রতি অনীহা তৈরি করতে পারে। বাবা-মায়ের উচিত শিশুর সামনে নিজে কম সময় ফোন ব্যবহার করা। বিশেষ করে বাবারা যদি সন্তানকে খেলার সঙ্গী হন বা গল্প শোনান, তাহলে শিশুর মনে ফোনের জায়গা স্বাভাবিকভাবেই ছোট হয়ে যায়।’

মনোবিজ্ঞানীর এ বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়, শিশুরা অনুকরণপ্রবণ। বাবা-মা নিজেরাই যদি দায়িত্বশীলভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, তবে শিশুরাও সেটি অনুসরণ করবে। তাই নিয়ন্ত্রণ শুধু শিশুদের জন্য নয়, পুরো পরিবারের জন্যই জরুরি।

Harsh parenting leads to depression later in life

তিনি আরও বলেন, ‘শিশুর আচরণে হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে উল্টো প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। বরং ধীরে ধীরে সময় সীমিত করতে হবে এবং বিকল্প আনন্দের পথ তৈরি করতে হবে।’

এখানে বোঝা যায়, কঠোরতা শিশুর মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু ধাপে ধাপে সীমাবদ্ধতা আরোপ করলে তা শিশুর কাছে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে সমস্যার মাত্রা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শহুরে অঞ্চলে ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ দৈনিক দুই ঘণ্টার বেশি সময় ফোন ব্যবহার করে। গ্রামের শিশুদের মধ্যেও এ প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে অনলাইন ক্লাস ও বিনোদনের কারণে।

এ তথ্য উদ্বেগজনক, কারণ শৈশবে অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার কেবল পড়াশোনাই নয়, সামাজিক দক্ষতা ও শারীরিক সুস্থতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুরা খেলাধুলা থেকে দূরে সরে গিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক বন্ধন দুর্বল করে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এখনই বাবা-মায়েরা সচেতন না হন, তবে পরবর্তী প্রজন্ম শারীরিক সক্রিয়তা ও সামাজিক সম্পর্কের জায়গায় প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়বে। এটি শুধু পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্যও এক ধরনের সংকট তৈরি করবে।

সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতি থেকে শিশুদের বাঁচাতে যা করণীয়

বাবার করণীয়ধাপে ধাপে

১. রুটিন তৈরি – পড়াশোনা, খেলাধুলা, পরিবারের সময় ও বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে।
২. বিকল্প আনন্দ – বই পড়া, খেলাধুলা, বাগান করা বা সৃজনশীল কাজে যুক্ত করা।
৩. নিজে উদাহরণ হওয়া – সন্তানের সামনে ফোনে না ডুবে থাকা, পরিবারকে সময় দেওয়া।
৪. খোলামেলা আলোচনা – সহজ ভাষায় বোঝানো কেন দীর্ঘ সময় ফোন ব্যবহার ক্ষতিকর।
৫. সীমা নির্ধারণ – অ্যাপ বা নিয়মের মাধ্যমে ফোন ব্যবহারের সময় নিয়ন্ত্রণ করা।
৬. পুরস্কার – ফোন ছাড়া সময় কাটাতে পারলে প্রশংসা বা ছোট পুরস্কার দেওয়া।

এগুলো কেবল নিয়ম নয়, বরং একটি জীবনধারার অংশ হতে পারে। নিয়মিত প্রয়োগের মাধ্যমে শিশু ধীরে ধীরে প্রযুক্তি ব্যবহারে সংযমী হয়ে উঠবে।

স্মার্টফোন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়, কারণ এটি আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে একজন বাবার সঠিক দিকনির্দেশনা সন্তানের জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলতে পারে। ভালোবাসা, সময়, খোলামেলা আলোচনা ও বিকল্প আনন্দের ব্যবস্থা—এই চারটি বিষয়ই হতে পারে সন্তানকে স্মার্টফোনের দীর্ঘ ব্যবহার থেকে দূরে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

সামাজিক বাস্তবতায় মা যেমন স্নেহ ও যত্নের প্রতীক, তেমনি বাবা হতে পারেন দিকনির্দেশনার প্রতীক। প্রযুক্তির যুগে সন্তানকে সঠিক পথে রাখতে বাবার সচেতন ভূমিকাই শেষ পর্যন্ত শিশুর জন্য হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।

বিশ্ব সঙ্গীতে এআই-এর সৃজনশীল ঢেউ

বাবার সচেতনতা: সন্তানকে স্মার্টফোনের ফাঁদ থেকে রক্ষার কৌশল

০৬:৩৩:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আজকের বাংলাদেশে গ্রামে-শহরে প্রায় প্রতিটি ঘরেই স্মার্টফোন আছে। স্কুলপড়ুয়া শিশু থেকে শুরু করে কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। গেমস, ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—এসবের প্রতি অতিআসক্তি তাদের পড়াশোনার ক্ষতি করছে, মানসিক বিকাশে বাধা দিচ্ছে, এমনকি চোখের দৃষ্টিশক্তি ও ঘুমের ওপরও প্রভাব ফেলছে।

এই বাস্তবতায় একজন বাবার ভূমিকা হয়ে ওঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মা সাধারণত সন্তানের যত্ন ও শৃঙ্খলার দিকে নজর রাখেন, আর বাবা অনেক ক্ষেত্রে জীবনের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন। তিনি যদি সচেতনভাবে সন্তানকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখাতে পারেন, তবে সেটিই হতে পারে শিশুর ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।

বাস্তব উদাহরণ

ঢাকার শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তার দশ বছর বয়সী ছেলে আরিয়ান দিনভর ফোনে গেম খেলত। পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। রফিকুল হঠাৎ করে ছেলেকে ফোন থেকে সরিয়ে দেননি। বরং নিয়ম করে দিলেন—পড়াশোনা শেষ না করা পর্যন্ত ফোনে হাত দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি বিকেলে তাকে সাইকেল চালানো ও পাড়ার মাঠে খেলতে পাঠাতে শুরু করলেন। কয়েক মাসের মধ্যেই আরিয়ান ফোনের চেয়ে খেলাধুলায় বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

Family Discussion Images – Browse 107,198 Stock Photos, Vectors, and Video | Adobe Stock

এই অভিজ্ঞতা দেখায়, সরাসরি নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে ধীরে ধীরে শিশুদের মনোযোগ অন্যদিকে সরানো কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে বাবার সক্রিয় ভূমিকা শিশুর দৈনন্দিন অভ্যাসকে ইতিবাচক দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে।

চট্টগ্রামের এক স্কুলশিক্ষক মাহমুদুল হাসানও একই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটি অনলাইনে কার্টুন দেখত দিনে তিন-চার ঘণ্টা। পরে আমি নিয়ম করে সন্ধ্যায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে গল্প করার সময় ঠিক করলাম। ধীরে ধীরে সে ফোনের চেয়ে পরিবারের সময়কেই বেশি উপভোগ করতে শুরু করে।’

এ উদাহরণ স্পষ্ট করে যে, বিকল্প আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করা গেলে শিশু স্বেচ্ছায় ফোন থেকে দূরে সরে আসে। পরিবারের সময়কে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব।

শিশু মনোবিজ্ঞানীর মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু মনোবিজ্ঞানী ড. শারমিন আরা বলেন, ‘শিশুদের জন্য স্মার্টফোন একধরনের উত্তেজনা তৈরি করে। এর ফলে তারা বাস্তব খেলাধুলা ও সামাজিকতার প্রতি অনীহা তৈরি করতে পারে। বাবা-মায়ের উচিত শিশুর সামনে নিজে কম সময় ফোন ব্যবহার করা। বিশেষ করে বাবারা যদি সন্তানকে খেলার সঙ্গী হন বা গল্প শোনান, তাহলে শিশুর মনে ফোনের জায়গা স্বাভাবিকভাবেই ছোট হয়ে যায়।’

মনোবিজ্ঞানীর এ বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়, শিশুরা অনুকরণপ্রবণ। বাবা-মা নিজেরাই যদি দায়িত্বশীলভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, তবে শিশুরাও সেটি অনুসরণ করবে। তাই নিয়ন্ত্রণ শুধু শিশুদের জন্য নয়, পুরো পরিবারের জন্যই জরুরি।

Harsh parenting leads to depression later in life

তিনি আরও বলেন, ‘শিশুর আচরণে হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে উল্টো প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। বরং ধীরে ধীরে সময় সীমিত করতে হবে এবং বিকল্প আনন্দের পথ তৈরি করতে হবে।’

এখানে বোঝা যায়, কঠোরতা শিশুর মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু ধাপে ধাপে সীমাবদ্ধতা আরোপ করলে তা শিশুর কাছে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে সমস্যার মাত্রা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শহুরে অঞ্চলে ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ দৈনিক দুই ঘণ্টার বেশি সময় ফোন ব্যবহার করে। গ্রামের শিশুদের মধ্যেও এ প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে অনলাইন ক্লাস ও বিনোদনের কারণে।

এ তথ্য উদ্বেগজনক, কারণ শৈশবে অতিরিক্ত ফোন ব্যবহার কেবল পড়াশোনাই নয়, সামাজিক দক্ষতা ও শারীরিক সুস্থতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুরা খেলাধুলা থেকে দূরে সরে গিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক বন্ধন দুর্বল করে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এখনই বাবা-মায়েরা সচেতন না হন, তবে পরবর্তী প্রজন্ম শারীরিক সক্রিয়তা ও সামাজিক সম্পর্কের জায়গায় প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়বে। এটি শুধু পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্যও এক ধরনের সংকট তৈরি করবে।

সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতি থেকে শিশুদের বাঁচাতে যা করণীয়

বাবার করণীয়ধাপে ধাপে

১. রুটিন তৈরি – পড়াশোনা, খেলাধুলা, পরিবারের সময় ও বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে।
২. বিকল্প আনন্দ – বই পড়া, খেলাধুলা, বাগান করা বা সৃজনশীল কাজে যুক্ত করা।
৩. নিজে উদাহরণ হওয়া – সন্তানের সামনে ফোনে না ডুবে থাকা, পরিবারকে সময় দেওয়া।
৪. খোলামেলা আলোচনা – সহজ ভাষায় বোঝানো কেন দীর্ঘ সময় ফোন ব্যবহার ক্ষতিকর।
৫. সীমা নির্ধারণ – অ্যাপ বা নিয়মের মাধ্যমে ফোন ব্যবহারের সময় নিয়ন্ত্রণ করা।
৬. পুরস্কার – ফোন ছাড়া সময় কাটাতে পারলে প্রশংসা বা ছোট পুরস্কার দেওয়া।

এগুলো কেবল নিয়ম নয়, বরং একটি জীবনধারার অংশ হতে পারে। নিয়মিত প্রয়োগের মাধ্যমে শিশু ধীরে ধীরে প্রযুক্তি ব্যবহারে সংযমী হয়ে উঠবে।

স্মার্টফোন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়, কারণ এটি আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে একজন বাবার সঠিক দিকনির্দেশনা সন্তানের জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলতে পারে। ভালোবাসা, সময়, খোলামেলা আলোচনা ও বিকল্প আনন্দের ব্যবস্থা—এই চারটি বিষয়ই হতে পারে সন্তানকে স্মার্টফোনের দীর্ঘ ব্যবহার থেকে দূরে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

সামাজিক বাস্তবতায় মা যেমন স্নেহ ও যত্নের প্রতীক, তেমনি বাবা হতে পারেন দিকনির্দেশনার প্রতীক। প্রযুক্তির যুগে সন্তানকে সঠিক পথে রাখতে বাবার সচেতন ভূমিকাই শেষ পর্যন্ত শিশুর জন্য হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।