আফ্রিকার উঁচু মালভূমির নীরব প্রান্তরে এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের প্রাণী ঘুরে বেড়ায়—ইথিওপিয়ান নেকড়ে। লালচে-বাদামী রঙের এই শিকারি দেখতে অনেকটা নেকড়ে ও শেয়ালের মাঝামাঝি। প্রকৃতির ভারসাম্যে এদের ভূমিকা অপরিসীম, কিন্তু বাস্তবতা হলো, পৃথিবীতে এর সংখ্যা আজ হাতেগোনা। গবেষকরা সতর্ক করছেন—এই প্রাণী যদি বিলুপ্ত হয়, তবে আফ্রিকার উচ্চভূমির জীববৈচিত্র্য এক বড় ধাক্কা খাবে।
ইথিওপিয়ান নেকড়ে (Canis simensis) কেবলমাত্র ইথিওপিয়ার মালভূমিতেই পাওয়া যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার মিটার ওপরে ঘাসে ভরা তৃণভূমি আর ঠান্ডা পরিবেশ তাদের উপযুক্ত আবাস। একসময় তারা ইথিওপিয়ার বহু অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকলেও এখন কেবল সিমিয়েন পর্বতশ্রেণী ও বেল মালভূমির মতো কয়েকটি বিচ্ছিন্ন এলাকায় সীমাবদ্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা একে বলে “ক্যাবেরু”—যার অর্থ ‘উঁচু পাহাড়ের শিয়াল’।
প্রাণীবিদরা বলেন, ইথিওপিয়ান নেকড়ে হচ্ছে “বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ক্যানিড”। লম্বা সরু পা, তীক্ষ্ণ মুখ, তীক্ষ্ণ চোখ আর উজ্জ্বল লালচে পশমে এরা আলাদা করে চেনা যায়। গলা ও পেটের অংশ সাদা, কান দুটো তীক্ষ্ণ ও বড়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নেকড়ে গড়ে ১৮ কেজি ওজনের হয়, মাদী তুলনায় কিছুটা ছোট।
খাদ্যাভ্যাস ও আচরণ
এরা মূলত ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে। বিশেষ করে ইথিওপিয়ান মোল-র্যাট তাদের প্রধান খাদ্য। দিনের আলোতেই তারা শিকার করে, যা অন্যান্য নেকড়ে প্রজাতির তুলনায় ভিন্ন। সাধারণত ছয় থেকে আট সদস্যের ছোট দলে বাস করে। দলের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলেও তারা শিকারে একা থাকতে পছন্দ করে।
প্রকৃতি গবেষকদের মতে, ইথিওপিয়ান নেকড়ের সংখ্যা এখন ৬০০-এরও কম। মানুষের বসতি বিস্তার, কৃষিজমি দখল, খাদ্যের অভাব এবং গৃহপালিত কুকুর থেকে ছড়ানো জলাতঙ্ক বা ক্যানাইন ডিস্টেম্পার তাদের জন্য মারাত্মক হুমকি। ইথিওপিয়ান মালভূমিতে কৃষি সম্প্রসারণের কারণে প্রতিদিনই তাদের বাসস্থান সংকুচিত হচ্ছে।
স্থানীয় এক পশুপালক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমরা ছোট বেলা থেকে এই নেকড়েগুলোকে দেখেছি। কিন্তু এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। ভোরে বের হলে হয়তো দূরে লালচে একটা ছায়া দেখা যায়, তারপর অদৃশ্য হয়ে যায়।”