টোকিওর চিড়িয়াখানায় গরমের চ্যালেঞ্জ
টোকিওর উএনো চিড়িয়াখানা জাপানের সবচেয়ে পুরনো ও জনপ্রিয় চিড়িয়াখানা। আগস্টের দুপুরে যখন প্রচণ্ড রোদ ও আর্দ্রতায় শহর হাঁসফাঁস করে, দর্শনার্থীরা ছাতা, বৈদ্যুতিক পাখা ও মিস্ট ফ্যানের সাহায্যে নিজেদের ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—পোলার বিয়ার, পান্ডা কিংবা অন্যান্য ভিন্ন আবহাওয়ার প্রাণীরা কীভাবে এই তাপ সহ্য করছে?
চিড়িয়াখানার প্রস্তুতি ও নিয়মকানুন
চিড়িয়াখানার উপপরিচালক মিকাকো কানেকো জানান, প্রাণীদের গরম থেকে রক্ষা করতে বিশেষ নিয়মকানুন রয়েছে। প্রতিটি প্রাণীর জন্য আলাদা নির্দেশিকা তৈরি করা আছে যেখানে তাদের খাঁচার আকার, খাবার ও উপযুক্ত তাপমাত্রার তথ্য দেওয়া থাকে। প্রতিটি পরিচর্যাকারীর কাছে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র থাকে।
সংবেদনশীল প্রাণীদের দিনে একবার বাইরে বের করা হয়, সঙ্গে-সঙ্গে ঘর পরিষ্কার করে তাদের আবার ভেতরে ফিরিয়ে আনা হয়।
পোলার বিয়ার ও পান্ডার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
অতিরিক্ত গরমের কারণে পোলার বিয়ারকে সীমিত সময়ের জন্য দর্শকদের সামনে আনা হয়। তাদের জন্য একটি ঠান্ডা পানির পুল ও ভেতরে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ঘর রাখা হয়েছে।
পান্ডা শিয়াও শিয়াও ও লেই লেই-এর জন্য ঘরের ভেতরে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এয়ার কন্ডিশনার চালু থাকে। এটি চীনের অনুরোধেই করা হয়েছে, কারণ পান্ডাগুলো সেখান থেকে ধার আনা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
পাকিস্তানের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নাদিয়া নওয়াজ বলেন, পোলার বিয়ার তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সহজেই হিট স্ট্রেসে ভোগে। তারা হাঁপায়, লোম পড়ে যায়, পেশির শক্তি কমে যায় এবং অবসন্ন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, শিয়াল ও পান্ডার হিট স্ট্রেস শুরু হয় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পর, আর পেঙ্গুইনরা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আগে সমস্যায় পড়ে না।
তার মতে, চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের জন্য ছায়াযুক্ত স্থান, পুল ও কুলিং সিস্টেম থাকা জরুরি।
অন্যান্য প্রাণীদের যত্ন
হোক্কাইডো ব্রাউন বিয়াররা ছোটবেলা থেকে বন্দিদশায় থাকার কারণে তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। তবে বয়স্ক ও অসুস্থ ভাল্লুকদের গরমে প্রায় সবসময় ঘরের ভেতরে রাখা হয়।
স্নো-আউলদের খাঁচা ঘন ছায়ায় ঢাকা থাকে, কারণ রোদে তারা চোখ বন্ধ করে রাখে। সুমাত্রান বাঘ দুপুর ১১:৩০ থেকে ১:৩০ পর্যন্ত প্রদর্শন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, আর পশ্চিমাঞ্চলীয় গরিলা বিকেল ২টার পর আর দর্শকদের সামনে থাকে না।
খাবারের মাধ্যমে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা
গ্রীষ্মে প্রাণীদের জন্য খাবার বরফে জমিয়ে দেওয়া হয় বা সরাসরি বরফ দেওয়া হয়। এতে তাদের মুখ ও শরীর ঠান্ডা থাকে।
প্রাণীদের আচরণ পর্যবেক্ষণ
কানেকো বলেন, প্রতিদিন সকালেই প্রাণীদের নড়াচড়া ও অবস্থার খোঁজ নেওয়া হয়। কোনো প্রাণীর আচরণ স্বাভাবিক না লাগলে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার পরিবেশ সঙ্গে-সঙ্গে বদলানো হয়। নির্দেশিকায় নির্দিষ্ট তাপমাত্রা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে প্রাণীর স্বাচ্ছন্দ্যকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিতর্ক: চিড়িয়াখানা বনাম প্রাকৃতিক আবাসস্থল
প্রাণী সুরক্ষা সংগঠন ‘বর্ন ফ্রি ইউএসএ’ মনে করে, চিড়িয়াখানায় কখনোই পোলার বিয়ারের প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব নয়। তাদের বিশাল বাসস্থান, শিকার ও সাঁতারের অভিজ্ঞতা বন্দিদশায় অনুকরণ করা যায় না।
অন্যদিকে ‘পোলার বিয়ার ইন্টারন্যাশনাল’ বলছে, আধুনিক চিড়িয়াখানা গবেষণা ও শিক্ষার মাধ্যমে হুমকির মুখে থাকা প্রাণী সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
জাপানের প্রচণ্ড গরমে প্রাণীদের আরাম ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চিড়িয়াখানার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু উএনো চিড়িয়াখানার কর্মীরা প্রতিদিন খাবার, পরিবেশ ও আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাণীদের স্বাস্থ্য রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।