এক বছরের দেরি ও গণতন্ত্রের সংকট
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারেনি। এই দীর্ঘ বিলম্বের কারণে দেশ ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এক বছর আসলে দীর্ঘ সময়। এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তর হওয়া উচিত ছিল।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা
খসরু উল্লেখ করেন, ইতিহাসে দেখা গেছে—যেসব দেশ গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবের পর দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে, তারা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় পৌঁছেছে।
কিন্তু যে দেশগুলো তা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা অর্থনৈতিক পতন, সামাজিক অস্থিরতা এমনকি গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি
বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্র ও নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতির কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জনগণের মধ্যে গভীর ফাঁক তৈরি হয়েছে। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন।
তার মতে, দেশে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, এবং বিনিয়োগকারীরা নতুন শিল্পে অর্থ লগ্নি করতে আগ্রহী নন।
সেমিনার ও বক্তব্যের মূল বার্তা
‘পোস্ট-জুলাই রাজনৈতিক ভাবনা: বাংলাদেশ কোন পথে?’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন খসরু। সেমিনারটির আয়োজন করে স্কুল অব লিডারশিপ ইউএসএ (বাংলাদেশ অধ্যায়)।
তিনি সতর্ক করেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া এক বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও গভীর হচ্ছে।

বিদেশি বিনিয়োগ ও নির্বাচন
খসরু বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও আলোচনা সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রকৃত বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। সাম্প্রতিক এক সম্মেলনে অনেক পুরনো বিনিয়োগকারী উপস্থিত থাকলেও নতুন বিনিয়োগ আসেনি।
তবে নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে কিছুটা আশা জেগেছে। বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করছেন নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি দেখার জন্য।
জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর জনগণের মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন তাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। যদি রাজনৈতিক দলগুলো এই পরিবর্তন উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে যাবে।

আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব
খসরু সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে, তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেই।
তিনি বলেন, আন্দোলনের কৃতিত্ব জনগণের, যারা দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থে এ আন্দোলনকে ব্যবহার করা ঠিক হবে না।
মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন
খসরু স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছিলেন। শিক্ষকরা স্কুলে, শিক্ষার্থীরা কলেজে।
তার মতে, মুক্তিযুদ্ধকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার না করে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে মনোযোগ দেওয়া এখন জরুরি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















