০৩:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
কার্বন বাজার ঘিরে জলবায়ু আলোচনায় নতুন বিতর্ক ইন্দোনেশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক সমঝোতা চূড়ান্তের পথে, জানুয়ারিতে স্বাক্ষরের সম্ভাবনা ইউরোপের নতুন এআই বিধি নিয়ে প্রস্তুতিতে প্রযুক্তি জায়ান্টরা মার্কিন কোস্ট গার্ডের ধাওয়া, ভেনিজুয়েলা সংযুক্ত তেলবাহী জাহাজ আটকাতে বাড়তি প্রস্তুতির অপেক্ষা তুরস্কে বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার সেনাপ্রধানের মৃত্যু কার্যকর স্থবিরতা কী লাল সাগরে ঝুঁকি বাড়ায় বৈশ্বিক শিপিংয়ে নতুন চাপ শীত এলেই বৃষ্টির অপেক্ষা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে কি আরও ভিজবে আকাশ সংসারের প্রথম বছরেই ভাঙন, সংযুক্ত আরবে ৩০ শতাংশ বিয়ের অকাল বিচ্ছেদ ইসরোর বাহুবলী রকেটে ইতিহাস, এক লঞ্চেই সবচেয়ে ভারী স্যাটেলাইট কক্ষপথে

ভারতীয় কূটনীতি: দীর্ঘস্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝেও সমঝোতার ইঙ্গিত

তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলন: ভারত কোন পথে

চীনের তিয়ানজিনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে ভারতের কূটনীতির কেন্দ্রীয় টানাপোড়েন স্পষ্টদিলাম: হয়ে উঠেছে। ভারত দেখিয়েছে যে তারা কারও সঙ্গে বাঁধা পড়তে চায় না; বরং নিজেদের পথেই এগোতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাত বছর পর চীন সফর, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে উষ্ণ আলিঙ্গন এবং শি জিনপিংয়ের সঙ্গে হাসিমাখা ছবি দেখে অনেকে ভেবেছিলেন ভারত হয়তো চীন-রাশিয়া নেতৃত্বাধীন অক্ষের দিকে ঝুঁকছে। তবে আসল ছবি ভিন্ন।

চীনের প্রস্তাব ও ভারতের ভূমিকা

সম্মেলনে শি জিনপিং বড় কিছু উদ্যোগের ঘোষণা দেন: একটি এসসিও উন্নয়ন ব্যাংক, জ্বালানি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সহযোগিতা, ১.৪ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক প্রতিশ্রুতি এবং বেইডৌ স্যাটেলাইট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার। এর মাধ্যমে চীন দেখাতে চেয়েছে যে এসসিও হতে পারে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প।

মোদির উপস্থিতি এই প্রস্তাবগুলোকে বৈধতা দিয়েছে। তবে ভারত আবারও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ বিআরআইয়ের মূল প্রকল্প চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর এমন এক অঞ্চলের ওপর দিয়ে গেছে যা ভারত দাবি করে। ফলে সার্বভৌমত্বের নীতিতে ছাড় দেওয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ছায়া

মোদির অংশগ্রহণকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রেক্ষাপটেও দেখা জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন শুল্কনীতি ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে টেনে ধরেছে। তাই ওয়াশিংটনের কাছে মোদি-শি-পুতিনের ছবিগুলো শুধু প্রতীকী নয়, বরং এক সতর্ক বার্তাও যে ভারতকে অবহেলা করা যাবে না।

সীমিত আস্থা ও পুরনো দ্বন্দ্ব

ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতির সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট। সীমান্তে একাধিক সংঘাত দুই দেশের আস্থা নষ্ট করেছে। চীন কখনো ভারতকে সমান অংশীদার হিসেবে দেখাতে প্রস্তুত হয়নি এবং ভারতও চীনের লক্ষ্য পূরণে নিজের স্বার্থ ছাড়তে চায় না।

তিয়ানজিনে মোদির বক্তৃতায় সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা ও দ্বৈত মানসিকতার বিরুদ্ধে ইঙ্গিত ছিল—যা মূলত পাকিস্তানকে ঘিরে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উদ্দেশ্যে দেওয়া বার্তা।

Putin 'Copies' Modi, embraces state dignitary in Indian PM's style, flies  Nuclear Bomber। Sangbad Pratidin

রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক

পুতিনকে আলিঙ্গন করে মোদি দেখালেন, রাশিয়া ভারতের কাছে এখনও কার্যকর অংশীদার। যদিও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে এটি অস্বস্তিকর। আবার শি’র সঙ্গে হাসি-আলাপ দেখাল, কথা চালিয়ে যাওয়া জরুরি হলেও আস্থা ফিরিয়ে আনা এখনো সম্ভব নয়।

ঝুঁকি ও সীমাবদ্ধতা

ভারতের এই ভারসাম্য নীতি যেমন সুবিধা দেয়, তেমনই ঝুঁকিও তৈরি করে। চীন ও রাশিয়ার চোখে ভারত এসসিওকে শক্তিশালী করছে পশ্চিমের বিপরীতে। আবার ওয়াশিংটনের কাছে ভারতের অবস্থানকে অনিশ্চিত মনে হতে পারে।

আসলে ভারত চেষ্টা করছে বিকল্পগুলো খোলা রাখতে—স্বাধীনতা দেখাতে, বহুপাক্ষিক ফোরামে সক্রিয় হতে এবং নতুন স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যেতে। তবে এই কৌশলের খরচও আছে: মার্কিন শুল্ক, চীনের আগ্রাসী নীতি এবং রাশিয়ার বেইজিং নির্ভরতা ভারতের কৌশলগত পরিসর সংকুচিত করছে।

ভারত নিজেদের যা ভাবে বিশ্বে তা নয়

 নিজের পথেই ভারত

বিআরআই প্রত্যাখ্যান শুধু প্রতীকী নয়, বরং ভারতের স্পষ্ট বার্তা—তারা সার্বভৌমত্বকে কূটনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে ছাড়বে না।

তিয়ানজিনের করমর্দন ও হাসি হয়তো কিছুটা উত্তেজনা কমিয়েছে, কিন্তু গভীর ক্ষত সারাতে পারেনি। জাপানসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অংশীদারদের জন্য শিক্ষা পরিষ্কার: ভারতের কূটনীতি বাস্তববাদী ও স্বার্থকেন্দ্রিক।

এসসিও সম্মেলন দেখিয়েছে যে ভারতের নীতি হলো একসঙ্গে অনেক জায়গায় থাকা কিন্তু কোথাও বাঁধা না পড়া। এই নমনীয়তা প্রয়োজনীয় হলেও ভারতের বার্তা কখনো কখনো অস্পষ্ট করে তোলে। তবুও একটি বিষয় স্পষ্ট—ভারত নিজের পথেই এগোবে, সতর্কভাবে, একেকটি করমর্দনের মাধ্যমে।

জনপ্রিয় সংবাদ

কার্বন বাজার ঘিরে জলবায়ু আলোচনায় নতুন বিতর্ক

ভারতীয় কূটনীতি: দীর্ঘস্থায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝেও সমঝোতার ইঙ্গিত

০৩:৪২:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলন: ভারত কোন পথে

চীনের তিয়ানজিনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে ভারতের কূটনীতির কেন্দ্রীয় টানাপোড়েন স্পষ্টদিলাম: হয়ে উঠেছে। ভারত দেখিয়েছে যে তারা কারও সঙ্গে বাঁধা পড়তে চায় না; বরং নিজেদের পথেই এগোতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাত বছর পর চীন সফর, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে উষ্ণ আলিঙ্গন এবং শি জিনপিংয়ের সঙ্গে হাসিমাখা ছবি দেখে অনেকে ভেবেছিলেন ভারত হয়তো চীন-রাশিয়া নেতৃত্বাধীন অক্ষের দিকে ঝুঁকছে। তবে আসল ছবি ভিন্ন।

চীনের প্রস্তাব ও ভারতের ভূমিকা

সম্মেলনে শি জিনপিং বড় কিছু উদ্যোগের ঘোষণা দেন: একটি এসসিও উন্নয়ন ব্যাংক, জ্বালানি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সহযোগিতা, ১.৪ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক প্রতিশ্রুতি এবং বেইডৌ স্যাটেলাইট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার। এর মাধ্যমে চীন দেখাতে চেয়েছে যে এসসিও হতে পারে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প।

মোদির উপস্থিতি এই প্রস্তাবগুলোকে বৈধতা দিয়েছে। তবে ভারত আবারও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ বিআরআইয়ের মূল প্রকল্প চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর এমন এক অঞ্চলের ওপর দিয়ে গেছে যা ভারত দাবি করে। ফলে সার্বভৌমত্বের নীতিতে ছাড় দেওয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ছায়া

মোদির অংশগ্রহণকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রেক্ষাপটেও দেখা জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন শুল্কনীতি ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে টেনে ধরেছে। তাই ওয়াশিংটনের কাছে মোদি-শি-পুতিনের ছবিগুলো শুধু প্রতীকী নয়, বরং এক সতর্ক বার্তাও যে ভারতকে অবহেলা করা যাবে না।

সীমিত আস্থা ও পুরনো দ্বন্দ্ব

ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতির সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট। সীমান্তে একাধিক সংঘাত দুই দেশের আস্থা নষ্ট করেছে। চীন কখনো ভারতকে সমান অংশীদার হিসেবে দেখাতে প্রস্তুত হয়নি এবং ভারতও চীনের লক্ষ্য পূরণে নিজের স্বার্থ ছাড়তে চায় না।

তিয়ানজিনে মোদির বক্তৃতায় সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা ও দ্বৈত মানসিকতার বিরুদ্ধে ইঙ্গিত ছিল—যা মূলত পাকিস্তানকে ঘিরে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উদ্দেশ্যে দেওয়া বার্তা।

Putin 'Copies' Modi, embraces state dignitary in Indian PM's style, flies  Nuclear Bomber। Sangbad Pratidin

রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক

পুতিনকে আলিঙ্গন করে মোদি দেখালেন, রাশিয়া ভারতের কাছে এখনও কার্যকর অংশীদার। যদিও পশ্চিমা বিশ্বের কাছে এটি অস্বস্তিকর। আবার শি’র সঙ্গে হাসি-আলাপ দেখাল, কথা চালিয়ে যাওয়া জরুরি হলেও আস্থা ফিরিয়ে আনা এখনো সম্ভব নয়।

ঝুঁকি ও সীমাবদ্ধতা

ভারতের এই ভারসাম্য নীতি যেমন সুবিধা দেয়, তেমনই ঝুঁকিও তৈরি করে। চীন ও রাশিয়ার চোখে ভারত এসসিওকে শক্তিশালী করছে পশ্চিমের বিপরীতে। আবার ওয়াশিংটনের কাছে ভারতের অবস্থানকে অনিশ্চিত মনে হতে পারে।

আসলে ভারত চেষ্টা করছে বিকল্পগুলো খোলা রাখতে—স্বাধীনতা দেখাতে, বহুপাক্ষিক ফোরামে সক্রিয় হতে এবং নতুন স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যেতে। তবে এই কৌশলের খরচও আছে: মার্কিন শুল্ক, চীনের আগ্রাসী নীতি এবং রাশিয়ার বেইজিং নির্ভরতা ভারতের কৌশলগত পরিসর সংকুচিত করছে।

ভারত নিজেদের যা ভাবে বিশ্বে তা নয়

 নিজের পথেই ভারত

বিআরআই প্রত্যাখ্যান শুধু প্রতীকী নয়, বরং ভারতের স্পষ্ট বার্তা—তারা সার্বভৌমত্বকে কূটনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে ছাড়বে না।

তিয়ানজিনের করমর্দন ও হাসি হয়তো কিছুটা উত্তেজনা কমিয়েছে, কিন্তু গভীর ক্ষত সারাতে পারেনি। জাপানসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অংশীদারদের জন্য শিক্ষা পরিষ্কার: ভারতের কূটনীতি বাস্তববাদী ও স্বার্থকেন্দ্রিক।

এসসিও সম্মেলন দেখিয়েছে যে ভারতের নীতি হলো একসঙ্গে অনেক জায়গায় থাকা কিন্তু কোথাও বাঁধা না পড়া। এই নমনীয়তা প্রয়োজনীয় হলেও ভারতের বার্তা কখনো কখনো অস্পষ্ট করে তোলে। তবুও একটি বিষয় স্পষ্ট—ভারত নিজের পথেই এগোবে, সতর্কভাবে, একেকটি করমর্দনের মাধ্যমে।