০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

পরজীবী পিঁপড়া: এক বিস্ময়কর সামাজিক কৌশল

পিঁপড়া পৃথিবীর অন্যতম সুসংগঠিত প্রাণী। তাদের উপনিবেশ, শ্রম বিভাজন ও শৃঙ্খলা প্রায় মানুষের সমাজকেও বিস্মিত করে। তবে এই বিস্ময়কর জগতের মধ্যেই রয়েছে এক অদ্ভুত দিক—পরজীবী পিঁপড়া। এরা অন্য প্রজাতির পিঁপড়াদের উপনিবেশ দখল করে কিংবা তাদের পরিশ্রমের সুফল ভোগ করে বেঁচে থাকে। প্রকৃতির এই অনন্য কৌশল জীববিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার এক চমকপ্রদ ক্ষেত্র।

পরজীবী পিঁপড়া কী?

পরজীবী পিঁপড়া হলো এমন এক শ্রেণির পিঁপড়া যারা নিজেদের স্বাধীন উপনিবেশ তৈরি না করে অন্য পিঁপড়াদের ঘরবাড়ি ও শ্রমকে ব্যবহার করে। অনেক সময় তারা অন্য পিঁপড়ার রানিকে হত্যা করে উপনিবেশের শাসন দখল করে নেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে তারা শ্রমিক পিঁপড়াদের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে।

article

পরজীবীতার ধরন

পরজীবী পিঁপড়াদের আচরণ ভিন্ন ভিন্ন রকমের হতে পারে—

  • • সামাজিক পরজীবিতা:যেখানে একটি প্রজাতির রানি অন্য প্রজাতির কলোনিতে ঢুকে রানির ভূমিকা গ্রহণ করে।
  • • দাসত্ব নির্ভরতা:অনেক প্রজাতি নিজেরা খাদ্য সংগ্রহ বা বাসা তৈরি করে না, বরং অন্য প্রজাতির শ্রমিকদের বন্দী করে কাজ করায়।
  • • অস্থায়ী পরজীবিতা:কিছু প্রজাতি সাময়িকভাবে অন্য পিঁপড়াদের সাহায্যে উপনিবেশ গড়ে তুলে পরে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করে।

শিকারী কৌশল

পরজীবী পিঁপড়ারা শুধু শক্তি দিয়ে নয়, বরং রাসায়নিক সংকেত ব্যবহার করে অন্যদের প্রতারিত করে। তাদের দেহ থেকে নিঃসৃত বিশেষ রাসায়নিক গন্ধ অনেক সময় উপনিবেশের আসল সদস্যদের বিভ্রান্ত করে। ফলে অন্য পিঁপড়ারা পরজীবীকে নিজেদের সঙ্গী ভেবে গ্রহণ করে।

দাসত্ব ব্যবস্থা

সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ হলো ‘স্লেভমেকার অ্যান্ট’ বা দাসত্ব প্রতিষ্ঠাকারী পিঁপড়া। এরা অন্য প্রজাতির কলোনিতে হানা দিয়ে তাদের পিউপা (কীটকোষ) চুরি করে নিয়ে আসে। বড় হওয়ার পর এই পিঁপড়ারা নতুন দখলদারদের জন্য কাজ করতে বাধ্য হয়। আশ্চর্যজনকভাবে তারা কখনোই বুঝতে পারে না যে তারা আসলে ভিন্ন উপনিবেশের সদস্য।

No photo description available.

পরিবেশগত প্রভাব

পরজীবী পিঁপড়া প্রকৃতিতে একধরনের ভারসাম্য তৈরি করে। তারা একদিকে অন্য উপনিবেশকে দুর্বল করে দেয়, আবার অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যের জটিল সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ ধরনের আচরণ সামাজিক প্রাণীদের বিবর্তন বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র।

গবেষণার গুরুত্ব

পিঁপড়াদের পরজীবী আচরণ শুধু কীটতত্ত্বের জন্য নয়, সামাজিক বিজ্ঞান ও আচরণবিজ্ঞানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও প্রতারণার কৌশল মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক আচরণ বোঝার ক্ষেত্রেও প্রতীকী শিক্ষা দেয়।

 পরজীবী পিঁপড়ার জীবনযাপন প্রমাণ করে যে প্রকৃতির ভেতরে প্রতিযোগিতা, সহযোগিতা ও প্রতারণা একসঙ্গে বিদ্যমান। তারা একদিকে অন্যদের শ্রমের ওপর নির্ভর করে, আবার অন্যদিকে প্রকৃতির বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে। এই অদ্ভুত জীবেরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—টিকে থাকার জন্য প্রতিটি প্রাণীই নিজস্ব পথ খুঁজে নেয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

পরজীবী পিঁপড়া: এক বিস্ময়কর সামাজিক কৌশল

০৪:৫৭:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পিঁপড়া পৃথিবীর অন্যতম সুসংগঠিত প্রাণী। তাদের উপনিবেশ, শ্রম বিভাজন ও শৃঙ্খলা প্রায় মানুষের সমাজকেও বিস্মিত করে। তবে এই বিস্ময়কর জগতের মধ্যেই রয়েছে এক অদ্ভুত দিক—পরজীবী পিঁপড়া। এরা অন্য প্রজাতির পিঁপড়াদের উপনিবেশ দখল করে কিংবা তাদের পরিশ্রমের সুফল ভোগ করে বেঁচে থাকে। প্রকৃতির এই অনন্য কৌশল জীববিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার এক চমকপ্রদ ক্ষেত্র।

পরজীবী পিঁপড়া কী?

পরজীবী পিঁপড়া হলো এমন এক শ্রেণির পিঁপড়া যারা নিজেদের স্বাধীন উপনিবেশ তৈরি না করে অন্য পিঁপড়াদের ঘরবাড়ি ও শ্রমকে ব্যবহার করে। অনেক সময় তারা অন্য পিঁপড়ার রানিকে হত্যা করে উপনিবেশের শাসন দখল করে নেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে তারা শ্রমিক পিঁপড়াদের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে।

article

পরজীবীতার ধরন

পরজীবী পিঁপড়াদের আচরণ ভিন্ন ভিন্ন রকমের হতে পারে—

  • • সামাজিক পরজীবিতা:যেখানে একটি প্রজাতির রানি অন্য প্রজাতির কলোনিতে ঢুকে রানির ভূমিকা গ্রহণ করে।
  • • দাসত্ব নির্ভরতা:অনেক প্রজাতি নিজেরা খাদ্য সংগ্রহ বা বাসা তৈরি করে না, বরং অন্য প্রজাতির শ্রমিকদের বন্দী করে কাজ করায়।
  • • অস্থায়ী পরজীবিতা:কিছু প্রজাতি সাময়িকভাবে অন্য পিঁপড়াদের সাহায্যে উপনিবেশ গড়ে তুলে পরে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করে।

শিকারী কৌশল

পরজীবী পিঁপড়ারা শুধু শক্তি দিয়ে নয়, বরং রাসায়নিক সংকেত ব্যবহার করে অন্যদের প্রতারিত করে। তাদের দেহ থেকে নিঃসৃত বিশেষ রাসায়নিক গন্ধ অনেক সময় উপনিবেশের আসল সদস্যদের বিভ্রান্ত করে। ফলে অন্য পিঁপড়ারা পরজীবীকে নিজেদের সঙ্গী ভেবে গ্রহণ করে।

দাসত্ব ব্যবস্থা

সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ হলো ‘স্লেভমেকার অ্যান্ট’ বা দাসত্ব প্রতিষ্ঠাকারী পিঁপড়া। এরা অন্য প্রজাতির কলোনিতে হানা দিয়ে তাদের পিউপা (কীটকোষ) চুরি করে নিয়ে আসে। বড় হওয়ার পর এই পিঁপড়ারা নতুন দখলদারদের জন্য কাজ করতে বাধ্য হয়। আশ্চর্যজনকভাবে তারা কখনোই বুঝতে পারে না যে তারা আসলে ভিন্ন উপনিবেশের সদস্য।

No photo description available.

পরিবেশগত প্রভাব

পরজীবী পিঁপড়া প্রকৃতিতে একধরনের ভারসাম্য তৈরি করে। তারা একদিকে অন্য উপনিবেশকে দুর্বল করে দেয়, আবার অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যের জটিল সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ ধরনের আচরণ সামাজিক প্রাণীদের বিবর্তন বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র।

গবেষণার গুরুত্ব

পিঁপড়াদের পরজীবী আচরণ শুধু কীটতত্ত্বের জন্য নয়, সামাজিক বিজ্ঞান ও আচরণবিজ্ঞানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও প্রতারণার কৌশল মানুষের সামাজিক ও রাজনৈতিক আচরণ বোঝার ক্ষেত্রেও প্রতীকী শিক্ষা দেয়।

 পরজীবী পিঁপড়ার জীবনযাপন প্রমাণ করে যে প্রকৃতির ভেতরে প্রতিযোগিতা, সহযোগিতা ও প্রতারণা একসঙ্গে বিদ্যমান। তারা একদিকে অন্যদের শ্রমের ওপর নির্ভর করে, আবার অন্যদিকে প্রকৃতির বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে। এই অদ্ভুত জীবেরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—টিকে থাকার জন্য প্রতিটি প্রাণীই নিজস্ব পথ খুঁজে নেয়।