০৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
রুশ বোমারু নিয়ে যৌথ টহল: জাপান সীমান্তে চিন–রাশিয়ার শক্তি প্রদর্শনে বাড়ছে উত্তেজনা ভারতের জোরালো প্রবৃদ্ধি ও প্রযুক্তি চাহিদা এশিয়ার উন্নয়ন সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করল: এডিবি এয়ার ইন্ডিয়ার নিরাপত্তা সংকট: অনুমতি ছাড়াই আট ফ্লাইট পরিচালনার ঘটনায় বড়সড় অনিয়মের স্বীকারোক্তি অ্যামাজনের রেকর্ড বিনিয়োগ: ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে ৩৫ বিলিয়ন ডলার ঢালছে টেক জায়ান্ট আদানি এন্টারপ্রাইজের ২.৮ বিলিয়ন ডলারের রাইটস ইস্যুতে ব্যাপক সাড়া, চাহিদা ছাড়াল বরাদ্দ স্পেনে চীনা ইভি ঢেউ: ইউরোপে বিওয়াইডির নতুন ঘাঁটি চীনা প্রতিষ্ঠান পুডুর রোবট কুকুরের মাধ্যমে নতুন প্রবৃদ্ধির পথে অগ্রসরতা এশিয়ার ধনী বিনিয়োগকারীদের ক্রিপ্টোতে ক্রমবর্ধমান আস্থা টোকিও বিশ্বের সবচেয়ে দামী বিলাসবহুল হোটেলগুলোর শহর চীনের নতুন ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি কি ওপেকের জন্য উদ্বেগের কারণ?

থাইল্যান্ডে তাকসিন শিনাওয়াত্রার রাজনৈতিক সংকট

শাসক দলের ভাঙন ও প্রভাব হারানো

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাকসিন শিনাওয়াত্রা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি শাসক দল ফিউ থাই পার্টি থেকে সাংসদ সাকদা ভিচিয়ানসিল পদত্যাগের ঘোষণা দিলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাকসিনের রাজনৈতিক শক্তি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। সাকদা অভিযোগ করেন, সরকার মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

তাকসিন পরিবারের পতন

৭৫ বছর বয়সী তাকসিন প্রায় আড়াই দশক ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু এবার তিনি হোঁচট খেয়েছেন। তাঁর মেয়ে ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী পায়তংতার্ন শিনাওয়াত্রাকে গত ২৯ আগস্ট সাংবিধানিক আদালত পদচ্যুত করেছে। এ নিয়ে পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতায় আসা বা সরাসরি নেতৃত্বে থাকা ছয়জন প্রধানমন্ত্রীর পতন ঘটল আদালতের রায় বা সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।

রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা ও নতুন জোট

পায়তংতার্নকে ঘিরে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে সাবেক কম্বোডীয় প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের পক্ষ থেকে। সীমান্ত সংঘর্ষের আগে তাঁর সঙ্গে হওয়া একটি ফোনালাপ ফাঁস করে দেন হুন সেন। এর জেরে জোটসঙ্গী ভূমজাইথাই পার্টি সরকার থেকে সরে এসে বিরোধী পিপলস পার্টির সঙ্গে সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ৪ সেপ্টেম্বর ফিউ থাই ঘোষণা দেয়, ৫ সেপ্টেম্বরের ভোটে তাদের প্রার্থী জিতলে পার্লামেন্ট ভেঙে সাধারণ নির্বাচন ডাকা হবে।

জনপ্রিয়তার পতন

জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, পায়তংতার্নের জনপ্রিয়তা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ৩১ শতাংশ থেকে নেমে ২০২৫ সালের জুনে ৯ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। এর ফলে দলের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। তাকসিন নিজেও নতুন বিপদের মুখে আছেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তাঁর দীর্ঘ হাসপাতাল থাকার বৈধতা নিয়ে রায় দেবে। রায় প্রতিকূল হলে তাকসিনের কারাগারে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অর্থনৈতিক নীতি ও দলের বিভক্তি

তাকসিনের জনপ্রিয়তার অন্যতম উৎস ছিল গ্রামীণ জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ভর্তুকি ও উন্নয়ন প্রকল্পে বড় ব্যয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব নীতি কার্যকর হচ্ছে না বলে সমালোচনা বাড়ছে। দলীয় ভেতর থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে, বিশেষত নগদ সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অন্তত তিনজন সাংসদ দলের নীতি ব্যর্থতার কারণে দল ছেড়েছেন।

 

তাকসিনের অতীত ও বর্তমান বাস্তবতা

উত্তর থাইল্যান্ডের এই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা টেলিকম খাতে ব্যবসা করে ধনী হন এবং নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০১ সালে তাঁর দল থাই রাক থাই ক্ষমতায় আসে। তাঁর জনবান্ধব নীতির কারণে তিনি ব্যাপক সমর্থন পান, কিন্তু রক্ষণশীল রাজতান্ত্রিক গোষ্ঠী তাঁকে দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিপতি হিসেবে আখ্যা দেয়। এর ফলেই ২০০৬ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকসিনকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

অভ্যুত্থানের পরও তাকসিনপন্থী দলগুলো নির্বাচনে জয় পায়, আর তাঁর সমর্থকেরা “রেড শার্ট” আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন রাজপন্থী অভিজাত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালায়। পরে নির্বাসনে থেকেও তাকসিন তাঁর বোন ইংলাক শিনাওয়াত্রাকে সামনে আনেন, যিনি ২০১১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু ২০১৪ সালে তাকসিন বিরোধী জোট তাঁকে সরিয়ে দেয়।

২০২৩ সালে তাকসিনের কন্যা পায়তংতার্ন স্মৃতিনির্ভর প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনে দলকে জিতিয়েছিলেন। তবে তাঁর জনপ্রিয়তা দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় তাকসিন পরিবারের রাজনৈতিক ঘাঁটি ভেঙে পড়ছে।

 

ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা

বিশ্লেষকদের মতে, তাকসিন পরিবার এখন রাজনৈতিকভাবে প্রায় নিঃশেষ। আদালতের রায় এবং নতুন নির্বাচনী সমীকরণ তাদের আরও কোণঠাসা করে তুলতে পারে। একসময় যিনি থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, তাকসিন এখন কারাগারের সম্ভাবনা ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎহীনতার মুখোমুখি।

জনপ্রিয় সংবাদ

রুশ বোমারু নিয়ে যৌথ টহল: জাপান সীমান্তে চিন–রাশিয়ার শক্তি প্রদর্শনে বাড়ছে উত্তেজনা

থাইল্যান্ডে তাকসিন শিনাওয়াত্রার রাজনৈতিক সংকট

০৩:২৭:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শাসক দলের ভাঙন ও প্রভাব হারানো

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাকসিন শিনাওয়াত্রা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি শাসক দল ফিউ থাই পার্টি থেকে সাংসদ সাকদা ভিচিয়ানসিল পদত্যাগের ঘোষণা দিলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাকসিনের রাজনৈতিক শক্তি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। সাকদা অভিযোগ করেন, সরকার মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

তাকসিন পরিবারের পতন

৭৫ বছর বয়সী তাকসিন প্রায় আড়াই দশক ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু এবার তিনি হোঁচট খেয়েছেন। তাঁর মেয়ে ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী পায়তংতার্ন শিনাওয়াত্রাকে গত ২৯ আগস্ট সাংবিধানিক আদালত পদচ্যুত করেছে। এ নিয়ে পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতায় আসা বা সরাসরি নেতৃত্বে থাকা ছয়জন প্রধানমন্ত্রীর পতন ঘটল আদালতের রায় বা সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।

রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা ও নতুন জোট

পায়তংতার্নকে ঘিরে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে সাবেক কম্বোডীয় প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের পক্ষ থেকে। সীমান্ত সংঘর্ষের আগে তাঁর সঙ্গে হওয়া একটি ফোনালাপ ফাঁস করে দেন হুন সেন। এর জেরে জোটসঙ্গী ভূমজাইথাই পার্টি সরকার থেকে সরে এসে বিরোধী পিপলস পার্টির সঙ্গে সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ৪ সেপ্টেম্বর ফিউ থাই ঘোষণা দেয়, ৫ সেপ্টেম্বরের ভোটে তাদের প্রার্থী জিতলে পার্লামেন্ট ভেঙে সাধারণ নির্বাচন ডাকা হবে।

জনপ্রিয়তার পতন

জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, পায়তংতার্নের জনপ্রিয়তা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ৩১ শতাংশ থেকে নেমে ২০২৫ সালের জুনে ৯ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। এর ফলে দলের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। তাকসিন নিজেও নতুন বিপদের মুখে আছেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তাঁর দীর্ঘ হাসপাতাল থাকার বৈধতা নিয়ে রায় দেবে। রায় প্রতিকূল হলে তাকসিনের কারাগারে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অর্থনৈতিক নীতি ও দলের বিভক্তি

তাকসিনের জনপ্রিয়তার অন্যতম উৎস ছিল গ্রামীণ জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ভর্তুকি ও উন্নয়ন প্রকল্পে বড় ব্যয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব নীতি কার্যকর হচ্ছে না বলে সমালোচনা বাড়ছে। দলীয় ভেতর থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে, বিশেষত নগদ সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অন্তত তিনজন সাংসদ দলের নীতি ব্যর্থতার কারণে দল ছেড়েছেন।

 

তাকসিনের অতীত ও বর্তমান বাস্তবতা

উত্তর থাইল্যান্ডের এই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা টেলিকম খাতে ব্যবসা করে ধনী হন এবং নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০১ সালে তাঁর দল থাই রাক থাই ক্ষমতায় আসে। তাঁর জনবান্ধব নীতির কারণে তিনি ব্যাপক সমর্থন পান, কিন্তু রক্ষণশীল রাজতান্ত্রিক গোষ্ঠী তাঁকে দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিপতি হিসেবে আখ্যা দেয়। এর ফলেই ২০০৬ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকসিনকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

অভ্যুত্থানের পরও তাকসিনপন্থী দলগুলো নির্বাচনে জয় পায়, আর তাঁর সমর্থকেরা “রেড শার্ট” আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন রাজপন্থী অভিজাত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালায়। পরে নির্বাসনে থেকেও তাকসিন তাঁর বোন ইংলাক শিনাওয়াত্রাকে সামনে আনেন, যিনি ২০১১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু ২০১৪ সালে তাকসিন বিরোধী জোট তাঁকে সরিয়ে দেয়।

২০২৩ সালে তাকসিনের কন্যা পায়তংতার্ন স্মৃতিনির্ভর প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনে দলকে জিতিয়েছিলেন। তবে তাঁর জনপ্রিয়তা দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় তাকসিন পরিবারের রাজনৈতিক ঘাঁটি ভেঙে পড়ছে।

 

ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা

বিশ্লেষকদের মতে, তাকসিন পরিবার এখন রাজনৈতিকভাবে প্রায় নিঃশেষ। আদালতের রায় এবং নতুন নির্বাচনী সমীকরণ তাদের আরও কোণঠাসা করে তুলতে পারে। একসময় যিনি থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, তাকসিন এখন কারাগারের সম্ভাবনা ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎহীনতার মুখোমুখি।