ইসরায়েলের অগ্রগতি
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা গাজা সিটির প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ড্রেফ্রিন জানান, বিশেষ করে জায়তুন ও শেখ রাদওয়ান এলাকার দখল নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী দিনে অভিযান আরও বিস্তৃত ও তীব্র হবে।
ড্রেফ্রিন আরও জানান, হামাসকে পুরোপুরি দমন ও অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত এই অভিযান শেষ হবে না। সেনাপ্রধান আইয়াল জামিরি মন্ত্রিসভাকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘ডে-আফটার’ পরিকল্পনা ছাড়া গাজায় সামরিক শাসন চাপানোর প্রয়োজন হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারে কট্টর ডানপন্থি অংশ সামরিক শাসন ও বসতি স্থাপনের দাবি তুললেও নেতানিয়াহু এখনো তা মেনে নেননি।

হতাহত ও ধ্বংসযজ্ঞ
গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারই অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছেন, বেশিরভাগই গাজা সিটিতে। ইসরায়েলি বাহিনী শহরের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর মধ্যে শেখ রাদওয়ান এলাকার পূর্বাংশে ট্যাংক নিয়ে প্রবেশ করে ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে এবং শরণার্থীদের তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
তুফাহ এলাকায় ভয়াবহ বোমাবর্ষণে পাঁচটি বাড়ি ধ্বংস হয়, নিহত হন আটজন এবং বহু মানুষ আহত হন। গাজার জরুরি সেবার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক মানুষের সমাবেশ ও ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, অন্তত চারটি ভবন পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন।
বাস্তুচ্যুতির ভয়াবহতা
ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটির বাসিন্দাদের শহর ছাড়ার নির্দেশ দিলেও অনেকেই থেকে গেছেন। ইসরায়েলের হিসাবে ৭০ হাজার মানুষ দক্ষিণে সরে গেছেন, তবে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, এর অর্ধেকেরও কম মানুষ বাস্তবে শহর ছেড়েছেন। হাজার হাজার মানুষ এখনো ইসরায়েলের অগ্রগতির মুখে।
ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ আল-শাওয়া সতর্ক করে বলেছেন, এ বাস্তুচ্যুতি যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে ভয়াবহ হবে। বিশেষ করে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য এটি জীবনঘাতী হতে পারে। তিনি বলেন, মানুষ বোমাবর্ষণ আর মৃত্যুর মুখেও শহর ছাড়ছে না, এটি প্রমাণ করে তারা আর বিশ্বাস রাখে না কোথাও নিরাপদ আশ্রয় আছে।

মানবিক বিপর্যয়
গাজায় কোথাও নিরাপদ এলাকা নেই, এমনকি যেগুলোকে ইসরায়েল মানবিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেখানেও হামলা চলছে বলে ফিলিস্তিনি ও জাতিসংঘ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, খাদ্যাভাব ও অনাহারে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ৩৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩১ জন শিশু।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
এই যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস-নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে ৪৮ জন জিম্মি অবশিষ্ট রয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত আছেন। তবে যুদ্ধবিরতি বা জিম্মি বিনিময়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
দুই মার্কিন ডেমোক্র্যাট সিনেটর—ক্রিস ভ্যান হোলেন ও জেফ মার্কলি—গাজা ও পশ্চিম তীর সফরের পর বলেন, তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী নেতানিয়াহুর সরকার গাজায় জাতিগত নিধন এবং পশ্চিম তীরে ধীরগতির জাতিগত নিধন চালাচ্ছে।
গাজার পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। একদিকে ইসরায়েলি বাহিনী হামাসকে ধ্বংসের ঘোষণা দিয়ে অভিযান জোরদার করছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ধ্বংসস্তূপে বসবাস করছে। নিরাপদ আশ্রয় বা মানবিক সমাধান ছাড়া এ সংঘাত কেবল মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















