কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ওপেন মার্কেট থেকে ডলার কেনে, তখন এটি সরাসরি মুদ্রানীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বাজারে টাকার সরবরাহকে প্রভাবিত করে। এ ধরনের পদক্ষেপ সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলা, টাকার মান নিয়ন্ত্রণ বা আমদানি ব্যয় মেটানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়। তবে এর ভালো এবং খারাপ – দুই ধরনের দিকই রয়েছে।
ভালো দিক
রিজার্ভ শক্তিশালীকরণ
ওপেন মার্কেট থেকে ডলার কেনার ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। এটি দেশের আমদানি ব্যয়, ঋণ পরিশোধ এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
টাকার মান নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
বাজারে যখন ডলারের সংকট হয়, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে ও পরে প্রয়োজনে বাজারে ছেড়ে দিয়ে টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে পারে। এতে অতিরিক্ত অবমূল্যায়ন ঠেকানো সম্ভব হয়।
বিনিয়োগ ও আমদানি সহজীকরণ
রিজার্ভ বাড়লে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, জ্বালানি, ওষুধসহ জরুরি পণ্যের আমদানি নির্বিঘ্ন হয়। এতে উৎপাদনশীলতা বজায় থাকে এবং অর্থনীতির চাকা সচল থাকে।
আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নতকরণ
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বৃদ্ধি হলে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রেটিং এজেন্সির কাছে দেশের ভাবমূর্তি ইতিবাচক হয়। এতে ভবিষ্যতে বিদেশি ঋণ বা সহায়তা পাওয়া সহজ হয়।
খারাপ দিক
বাজারে তারল্য সংকট
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ওপেন মার্কেট থেকে ডলার কেনে, তখন বিপরীতে টাকা বাজার থেকে তুলে নেয়। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে, যা ঋণ প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি
ডলার কিনতে গিয়ে যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত টাকা ছাপে, তবে বাজারে মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যায় এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে।
মার্কেট ডিস্টরশন বা কৃত্রিম চাপ
অতিরিক্ত ডলার কেনার কারণে ওপেন মার্কেটে ডলারের দাম বাড়তে পারে। এর ফলে সাধারণ আমদানিকারক ও ভোক্তাদের উপর বাড়তি চাপ পড়ে।
রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় বৃদ্ধি
ডলার কেনার পর তা ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিভিন্ন বিনিয়োগ বা সঞ্চয় প্রক্রিয়ায় অর্থ আটকে রাখতে হয়। এতে অন্য খাতে বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপেন মার্কেট থেকে ডলার কেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পদক্ষেপ, যা পরিস্থিতিভেদে ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।সংকটকালে এটি অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করলেও, অযথা বা অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করলে তারল্য সংকট, মুদ্রাস্ফীতি এবং বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে ও ভারসাম্যপূর্ণভাবে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করাই দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর।