সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ
নেপাল সরকার জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও যোগাযোগ অ্যাপগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (আগের টুইটার), লিঙ্কডইন, রেডিট, হোয়াটসঅ্যাপ এবং স্ন্যাপচ্যাটসহ মোট ২৬টি প্ল্যাটফর্ম। সরকার ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত আসে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পর, যেখানে আদালত জানিয়েছিল যে, দেশি-বিদেশি সব অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমকে নেপালে কার্যক্রম চালানোর আগে সরকারের সঙ্গে নিবন্ধন করতে হবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কন্টেন্ট নজরদারিতে রাখতে হবে। আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতে সরকার সাত দিনের সময়সীমা দিয়ে নিবন্ধনের আহ্বান জানিয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন না করায় প্ল্যাটফর্মগুলো ব্লক করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়
এই নির্দেশনার সূত্রপাত ২০২০ সাল থেকে দাখিল হওয়া একাধিক পিটিশনের মাধ্যমে। এসব পিটিশনে দাবি করা হয়েছিল, অনুমোদনবিহীন প্ল্যাটফর্মগুলো বিজ্ঞাপন ও কনটেন্ট প্রচার করে নেপালের আইনের বাইরে থেকে কাজ করছে।
‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা ২০৮০’ অনুযায়ী, প্ল্যাটফর্মগুলোকে নিবন্ধন করতে হবে, স্থানীয় একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে এবং অভিযোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
কোন প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ, কোনগুলো চালু
বন্ধ প্ল্যাটফর্ম: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার, ইউটিউব, এক্স, রেডিট, লিঙ্কডইন, হোয়াটসঅ্যাপ, ডিসকর্ড, পিন্টারেস্ট, সিগন্যাল, থ্রেডস, উইচ্যাট, কোরা, টাম্বলার, ক্লাবহাউস, রাম্বল, লাইন, ইমো, জলো, সোল, হাম্রো পাত্রো, মি ভিডিও, মি ভাইকে৩।
চালু রয়েছে: টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিমবাজ (নিবন্ধিত), টেলিগ্রাম ও গ্লোবাল ডায়েরি (নিবন্ধন প্রক্রিয়ায়)।
সরকারের অবস্থান বনাম সমালোচনা
নেপালের যোগাযোগমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং জানিয়েছেন, সরকার বারবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে নিবন্ধনের অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো কোনো সাড়া দেয়নি। তিনি বলেন, একবার তারা নিবন্ধন সম্পন্ন করলেই আবারও এসব প্ল্যাটফর্ম চালু করা হবে।

তবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে অধিকারকর্মীরা। তাদের মতে, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হুমকি। কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস এবং অ্যাকসেস নাউ এই সিদ্ধান্তকে অতিরিক্ত সেন্সরশিপ হিসেবে আখ্যা দিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখা ও অ্যাকসেস পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছে।
নতুন আইনের বিতর্ক
এদিকে নেপালের সংসদে আলোচনায় থাকা নতুন একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিল নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ওই বিল অনুযায়ী, ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী’ কনটেন্ট প্রচারের অভিযোগে প্ল্যাটফর্ম বা ব্যক্তিকে জরিমানা ও কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন এই প্রস্তাবিত আইনকেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বড় হুমকি হিসেবে দেখছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















