০১:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
অ্যামাজনের রেকর্ড বিনিয়োগ: ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে ৩৫ বিলিয়ন ডলার ঢালছে টেক জায়ান্ট আদানি এন্টারপ্রাইজের ২.৮ বিলিয়ন ডলারের রাইটস ইস্যুতে ব্যাপক সাড়া, চাহিদা ছাড়াল বরাদ্দ স্পেনে চীনা ইভি ঢেউ: ইউরোপে বিওয়াইডির নতুন ঘাঁটি চীনা প্রতিষ্ঠান পুডুর রোবট কুকুরের মাধ্যমে নতুন প্রবৃদ্ধির পথে অগ্রসরতা এশিয়ার ধনী বিনিয়োগকারীদের ক্রিপ্টোতে ক্রমবর্ধমান আস্থা টোকিও বিশ্বের সবচেয়ে দামী বিলাসবহুল হোটেলগুলোর শহর চীনের নতুন ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি কি ওপেকের জন্য উদ্বেগের কারণ? যুক্তরাষ্ট্রে মান্দারিনসহ চীনা ভাষা শিক্ষায় জোর দেওয়ার আহ্বান থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সংঘাত তীব্র: কূটনৈতিক ভাঙন, ল্যান্ডমাইন, সামরিক হামলা, রাজনৈতিক চাপ ও সীমান্ত নিরাপত্তার ৫ বড় কারণ চীন লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে ‘রাজনৈতিক শর্তহীন’ সহায়তার প্রতিশ্রুতি

আমেরিকা কি আরো পারমাণবিক শক্তি বাড়াতে চায়

পারমাণবিক শিল্প বহু চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে দীর্ঘদিন পরে এখন আশাবাদের হাওয়া বইছে।

আমেরিকায় নতুন উদ্যোগ

টেক্সাসের সাবেক গভর্নর এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের জ্বালানি সচিব রিক পেরি নতুন স্লোগান তুলেছেন: “আমেরিকাকে আবার পারমাণবিক করো।” ৪ জুলাই তিনি ‘ফার্মি আমেরিকা’ নামের এক কোম্পানি চালু করেন, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ ও ডেটা সেন্টার কমপ্লেক্স গড়তে চায়। টেক্সাসের আমারিলো শহরের বাইরে এই স্থাপনায় প্রথমে প্রাকৃতিক গ্যাস ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। পরবর্তীতে সেখানে বড় আকারের পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর ও কয়েকটি ক্ষুদ্র মডুলার রিঅ্যাক্টর (এসএমআর) বসানো হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলো থেকে ১১ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।

গত ২০ বছর ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সাফল্য আসেনি। একটিও প্ল্যান্ট সময় ও বাজেটমতো শেষ হয়নি। অন্যদিকে নবায়নযোগ্য শক্তির খরচ দ্রুত কমায় ব্যয়বহুল পারমাণবিক প্রকল্পগুলো আরও চাপে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফিনল্যান্ডে একের পর এক প্রকল্প বিলম্ব আর অতিরিক্ত খরচের বোঝা টেনেছে। তবে ২৫ আগস্ট ফার্মি ও ওয়েস্টিংহাউস যৌথভাবে ঘোষণা দেয়, তারা আমারিলোতে চারটি বড় এপি১০০০ রিঅ্যাক্টর বসানোর অনুমোদন চাইবে। প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ ‘পারমাণবিক শীতের’ পর কি অবশেষে বসন্তের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে?

আশাবাদের তিন কারণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনটি কারণে নতুন করে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে আশাবাদ তৈরি হয়েছে:
১. পশ্চিমা দেশগুলো নিরাপদ ও স্বনির্ভর বিদ্যুতের উৎস চায়।
২. বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিরবচ্ছিন্ন শক্তি চাহিদা ও পরিবেশদূষণ নিয়ে সচেতন হওয়ায় তারা বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে।
৩. নতুন আর্থিক ও কার্যকরী মডেল হয়তো পারমাণবিক খাতের ঝুঁকি ও ব্যয় সামাল দিতে পারবে।

বিশ্ব পারমাণবিক সংস্থার প্রধান সামা বিলবাও ওয়াই লেয়ন বলেন, “এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।”

মার্কিন ও ইউরোপীয় নীতি

ট্রাম্প ২০৫০ সালের মধ্যে আমেরিকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চার গুণ বাড়িয়ে ৪০০ গিগাওয়াট করার ডাক দিয়েছেন। লক্ষ্য অবাস্তব হলেও রাজনৈতিক অঙ্গন সক্রিয় হয়েছে। জুলাইয়ে ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ পাস হয়েছে এবং শিল্পখাতে বড় কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। শুধু রিপাবলিকান রাজ্য নয়, কিছু ডেমোক্র্যাট অঙ্গরাজ্যও নতুন পারমাণবিক প্রকল্পে আগ্রহী। ২০২১ সালে নিউইয়র্ক একটি পারমাণবিক প্ল্যান্ট বন্ধ করেছিল, এখন তারা নতুন একটি নির্মাণে আগ্রহী।

ইউরোপেও পরিবর্তন ঘটছে। ইউরোপীয় কমিশন ২০৫০ সালের মধ্যে পারমাণবিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০০ গিগাওয়াট থেকে ১৪৫ গিগাওয়াটে বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। জার্মানি আপত্তি সরিয়ে দিয়ে পারমাণবিক শক্তিকে ‘সবুজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্স ছয়টি নতুন প্ল্যান্ট নির্মাণ করবে। ব্রিটেনও সাইজওয়েল সি নামে দুটি বিশাল রিঅ্যাক্টর নির্মাণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার খরচ ৩৮ বিলিয়ন পাউন্ড ছাড়াতে পারে।

ক্ষুদ্র মডুলার রিঅ্যাক্টর ও ফিউশন

সুইডেন ছোট আকারের একাধিক এসএমআর নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ ধরনের প্রযুক্তি এখনো বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হয়নি, তবে কম খরচ ও দ্রুত সম্প্রসারণের সম্ভাবনা এটিকে আকর্ষণীয় করেছে। ইতিমধ্যেই ১২০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান এসএমআর উন্নয়নে নেমেছে। বার্কলেজ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে চীন ও রাশিয়ার বাইরে পারমাণবিক ক্ষমতা অর্ধেকের বেশি বাড়বে, যেখানে এসএমআর থাকবে ৪০-৬০ শতাংশ। বাজারমূল্য দাঁড়াতে পারে ১ ট্রিলিয়ন ডলার।

এদিকে বহু প্রতিষ্ঠান পারমাণবিক ফিউশন প্রযুক্তির দিকেও ঝুঁকছে, যা সীমাহীন পরিচ্ছন্ন শক্তির সম্ভাবনা জাগায়, যদিও তা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রযুক্তি জায়ান্টদের বড় বিনিয়োগ

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো দুই ধরনের প্রযুক্তিতেই বিনিয়োগ করছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে এসএমআর খাতে ২ বিলিয়ন ডলার তোলা হয়েছে। ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যানের সহায়তায় ওকলো ৪৬০ মিলিয়ন ডলার তুলেছে। বিল গেটস প্রতিষ্ঠিত টেরাপাওয়ার সংগ্রহ করেছে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার। গুগল ২০৩৫ সালের মধ্যে কাইরস পাওয়ারের সঙ্গে এসএমআর বহর তৈরি করবে।

ফিউশন স্টার্টআপগুলোতেও বিশাল অঙ্কের অর্থ যাচ্ছে। বিল গেটস সমর্থিত কমনওয়েলথ ফিউশন সিস্টেমস নতুন করে ৮৬৩ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। সব মিলিয়ে গত এক বছরে ফিউশন খাতে ২.৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। গুগলের মাইকেল টেরেল বলেন, তাদের শিল্পের জন্য পারমাণবিক শক্তি প্রয়োজন, যা নবায়নযোগ্য উৎসকে সম্পূরক করবে।

বড় টেক কোম্পানির ভূমিকা

ইলিনয়ের ক্লিনটন পাওয়ার স্টেশন দেখিয়েছে প্রযুক্তি কোম্পানির প্রভাব। শেল গ্যাস উৎপাদনের কারণে এটি অলাভজনক হয়ে পড়েছিল এবং ২০২৭ সালে বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুনে ফেসবুকের মালিক মেটা ২০ বছরের চুক্তি করে প্ল্যান্ট চালু রাখার অর্থায়ন করেছে। মাইক্রোসফটও গত বছর পেনসিলভেনিয়ার থ্রি মাইল আইল্যান্ড রিঅ্যাক্টর পুনরায় চালু করতে বিনিয়োগ করেছে।

এভাবে প্রযুক্তি খাতের সহায়তায় অতিরিক্ত ৩০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ বাজারে যোগ হতে পারে। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পারমাণবিক কোম্পানির শেয়ারের দামও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পর দ্রুত বেড়েছে।

নতুন আর্থিক ও কার্যকরী মডেল

চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রমাণ করেছে, মানসম্মত নকশা ও ধারাবাহিক প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ বছরে সাশ্রয়ী খরচে বড় রিঅ্যাক্টর তৈরি সম্ভব। পশ্চিমা দেশগুলোতে চাহিদা নিশ্চিত করতে শিল্পখাতের বড় ব্যবহারকারীদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে যৌথ বিনিয়োগের মডেল প্রস্তাব করা হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিও ভাগাভাগি হবে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

তবে নানা চ্যালেঞ্জ থেকে যাচ্ছে। উচ্চ খরচ, কঠোর নিয়ন্ত্রণ, দুর্বল সরবরাহ ব্যবস্থা ও দক্ষ জনবলের অভাব বড় বাধা। সরকারি সহায়তা ও বেসরকারি বিনিয়োগও অস্থির হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

অ্যামাজনের রেকর্ড বিনিয়োগ: ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে ৩৫ বিলিয়ন ডলার ঢালছে টেক জায়ান্ট

আমেরিকা কি আরো পারমাণবিক শক্তি বাড়াতে চায়

১১:৫৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পারমাণবিক শিল্প বহু চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে দীর্ঘদিন পরে এখন আশাবাদের হাওয়া বইছে।

আমেরিকায় নতুন উদ্যোগ

টেক্সাসের সাবেক গভর্নর এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের জ্বালানি সচিব রিক পেরি নতুন স্লোগান তুলেছেন: “আমেরিকাকে আবার পারমাণবিক করো।” ৪ জুলাই তিনি ‘ফার্মি আমেরিকা’ নামের এক কোম্পানি চালু করেন, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ ও ডেটা সেন্টার কমপ্লেক্স গড়তে চায়। টেক্সাসের আমারিলো শহরের বাইরে এই স্থাপনায় প্রথমে প্রাকৃতিক গ্যাস ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। পরবর্তীতে সেখানে বড় আকারের পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর ও কয়েকটি ক্ষুদ্র মডুলার রিঅ্যাক্টর (এসএমআর) বসানো হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলো থেকে ১১ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।

গত ২০ বছর ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সাফল্য আসেনি। একটিও প্ল্যান্ট সময় ও বাজেটমতো শেষ হয়নি। অন্যদিকে নবায়নযোগ্য শক্তির খরচ দ্রুত কমায় ব্যয়বহুল পারমাণবিক প্রকল্পগুলো আরও চাপে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফিনল্যান্ডে একের পর এক প্রকল্প বিলম্ব আর অতিরিক্ত খরচের বোঝা টেনেছে। তবে ২৫ আগস্ট ফার্মি ও ওয়েস্টিংহাউস যৌথভাবে ঘোষণা দেয়, তারা আমারিলোতে চারটি বড় এপি১০০০ রিঅ্যাক্টর বসানোর অনুমোদন চাইবে। প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ ‘পারমাণবিক শীতের’ পর কি অবশেষে বসন্তের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে?

আশাবাদের তিন কারণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনটি কারণে নতুন করে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে আশাবাদ তৈরি হয়েছে:
১. পশ্চিমা দেশগুলো নিরাপদ ও স্বনির্ভর বিদ্যুতের উৎস চায়।
২. বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিরবচ্ছিন্ন শক্তি চাহিদা ও পরিবেশদূষণ নিয়ে সচেতন হওয়ায় তারা বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে।
৩. নতুন আর্থিক ও কার্যকরী মডেল হয়তো পারমাণবিক খাতের ঝুঁকি ও ব্যয় সামাল দিতে পারবে।

বিশ্ব পারমাণবিক সংস্থার প্রধান সামা বিলবাও ওয়াই লেয়ন বলেন, “এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।”

মার্কিন ও ইউরোপীয় নীতি

ট্রাম্প ২০৫০ সালের মধ্যে আমেরিকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চার গুণ বাড়িয়ে ৪০০ গিগাওয়াট করার ডাক দিয়েছেন। লক্ষ্য অবাস্তব হলেও রাজনৈতিক অঙ্গন সক্রিয় হয়েছে। জুলাইয়ে ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ পাস হয়েছে এবং শিল্পখাতে বড় কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। শুধু রিপাবলিকান রাজ্য নয়, কিছু ডেমোক্র্যাট অঙ্গরাজ্যও নতুন পারমাণবিক প্রকল্পে আগ্রহী। ২০২১ সালে নিউইয়র্ক একটি পারমাণবিক প্ল্যান্ট বন্ধ করেছিল, এখন তারা নতুন একটি নির্মাণে আগ্রহী।

ইউরোপেও পরিবর্তন ঘটছে। ইউরোপীয় কমিশন ২০৫০ সালের মধ্যে পারমাণবিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০০ গিগাওয়াট থেকে ১৪৫ গিগাওয়াটে বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। জার্মানি আপত্তি সরিয়ে দিয়ে পারমাণবিক শক্তিকে ‘সবুজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্স ছয়টি নতুন প্ল্যান্ট নির্মাণ করবে। ব্রিটেনও সাইজওয়েল সি নামে দুটি বিশাল রিঅ্যাক্টর নির্মাণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার খরচ ৩৮ বিলিয়ন পাউন্ড ছাড়াতে পারে।

ক্ষুদ্র মডুলার রিঅ্যাক্টর ও ফিউশন

সুইডেন ছোট আকারের একাধিক এসএমআর নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এ ধরনের প্রযুক্তি এখনো বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হয়নি, তবে কম খরচ ও দ্রুত সম্প্রসারণের সম্ভাবনা এটিকে আকর্ষণীয় করেছে। ইতিমধ্যেই ১২০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান এসএমআর উন্নয়নে নেমেছে। বার্কলেজ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে চীন ও রাশিয়ার বাইরে পারমাণবিক ক্ষমতা অর্ধেকের বেশি বাড়বে, যেখানে এসএমআর থাকবে ৪০-৬০ শতাংশ। বাজারমূল্য দাঁড়াতে পারে ১ ট্রিলিয়ন ডলার।

এদিকে বহু প্রতিষ্ঠান পারমাণবিক ফিউশন প্রযুক্তির দিকেও ঝুঁকছে, যা সীমাহীন পরিচ্ছন্ন শক্তির সম্ভাবনা জাগায়, যদিও তা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রযুক্তি জায়ান্টদের বড় বিনিয়োগ

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো দুই ধরনের প্রযুক্তিতেই বিনিয়োগ করছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে এসএমআর খাতে ২ বিলিয়ন ডলার তোলা হয়েছে। ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যানের সহায়তায় ওকলো ৪৬০ মিলিয়ন ডলার তুলেছে। বিল গেটস প্রতিষ্ঠিত টেরাপাওয়ার সংগ্রহ করেছে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার। গুগল ২০৩৫ সালের মধ্যে কাইরস পাওয়ারের সঙ্গে এসএমআর বহর তৈরি করবে।

ফিউশন স্টার্টআপগুলোতেও বিশাল অঙ্কের অর্থ যাচ্ছে। বিল গেটস সমর্থিত কমনওয়েলথ ফিউশন সিস্টেমস নতুন করে ৮৬৩ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। সব মিলিয়ে গত এক বছরে ফিউশন খাতে ২.৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। গুগলের মাইকেল টেরেল বলেন, তাদের শিল্পের জন্য পারমাণবিক শক্তি প্রয়োজন, যা নবায়নযোগ্য উৎসকে সম্পূরক করবে।

বড় টেক কোম্পানির ভূমিকা

ইলিনয়ের ক্লিনটন পাওয়ার স্টেশন দেখিয়েছে প্রযুক্তি কোম্পানির প্রভাব। শেল গ্যাস উৎপাদনের কারণে এটি অলাভজনক হয়ে পড়েছিল এবং ২০২৭ সালে বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুনে ফেসবুকের মালিক মেটা ২০ বছরের চুক্তি করে প্ল্যান্ট চালু রাখার অর্থায়ন করেছে। মাইক্রোসফটও গত বছর পেনসিলভেনিয়ার থ্রি মাইল আইল্যান্ড রিঅ্যাক্টর পুনরায় চালু করতে বিনিয়োগ করেছে।

এভাবে প্রযুক্তি খাতের সহায়তায় অতিরিক্ত ৩০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ বাজারে যোগ হতে পারে। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পারমাণবিক কোম্পানির শেয়ারের দামও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পর দ্রুত বেড়েছে।

নতুন আর্থিক ও কার্যকরী মডেল

চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রমাণ করেছে, মানসম্মত নকশা ও ধারাবাহিক প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ বছরে সাশ্রয়ী খরচে বড় রিঅ্যাক্টর তৈরি সম্ভব। পশ্চিমা দেশগুলোতে চাহিদা নিশ্চিত করতে শিল্পখাতের বড় ব্যবহারকারীদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে যৌথ বিনিয়োগের মডেল প্রস্তাব করা হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিও ভাগাভাগি হবে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

তবে নানা চ্যালেঞ্জ থেকে যাচ্ছে। উচ্চ খরচ, কঠোর নিয়ন্ত্রণ, দুর্বল সরবরাহ ব্যবস্থা ও দক্ষ জনবলের অভাব বড় বাধা। সরকারি সহায়তা ও বেসরকারি বিনিয়োগও অস্থির হতে পারে।