মিগ-২১ এর প্রবেশ ও গুরুত্ব
১৯৬৩ সালে ভারত ছিল এক জটিল অবস্থায়। চীনের সঙ্গে যুদ্ধের পর ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ) কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছিল। এর মধ্যেই পাকিস্তান আমেরিকার কাছ থেকে উন্নত যুদ্ধবিমান কিনে নেয়। তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের হাতে তুলে দেয় মিগ-২১, যা দেশটিকে প্রথমবারের মতো সুপারসনিক যুগে প্রবেশ করায়। এটি ভারতের সোভিয়েত সামরিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা আরও দৃঢ় করে। ৬২ বছরের সেবা শেষে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ ভারত এই প্রতীকী যুদ্ধবিমানকে বিদায় জানাবে।

যুদ্ধ ও খ্যাতি
মিগ-২১ মূলত ১৯৫০-এর দশকে স্বল্প দূরত্বে দ্রুত প্রতিরক্ষা অভিযানের জন্য তৈরি হয়েছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনীতে এটি দ্রুত প্রধান ভরসায় পরিণত হয়। প্রায় ৯০০ মিগ-২১ বিভিন্ন সময়ে আইএএফ-এ ব্যবহৃত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ভারতে সোভিয়েত লাইসেন্সে তৈরি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বিমান ভূপাতিত করার জন্য মিগ-২১ বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়।
পরবর্তী সংস্করণ মিগ-২১ বিসন উন্নত রাডার প্রযুক্তি নিয়ে আসে, যা দূরপাল্লার আক্রমণ সক্ষম করে। বাংলাদেশ মুক্তির ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে মিগ-২১ এর প্রতীকী মডেল উপহার দেন।
মৃত্যুপুরীর খেতাব
কিন্তু খ্যাতির পাশাপাশি উদ্বেগও ছিল। সরু ডানা, ছোট টায়ার ও টার্বোজেট ইঞ্জিনের কারণে ধীরগতিতে অবতরণ করা মিগ-২১-এর জন্য ছিল বিপজ্জনক। এ কারণে ৬০ বছরে ৪০০-এর বেশি মিগ-২১ বিধ্বস্ত হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২০০ পাইলট ও ৬০ সাধারণ মানুষ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাই একে আখ্যা দেয় “ফ্লাইং কফিন” বা উড়ন্ত কফিন। সর্বশেষ দুর্ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালে, যাতে তিনজন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়।

আধুনিক যুদ্ধে ব্যবহার
বিপজ্জনক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আইএএফ মিগ-২১ দীর্ঘদিন ব্যবহার করে গেছে। ২০১৯ সালে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পাল্টাপাল্টি বিমান হামলার সময় মিগ-২১ বিসন ব্যবহৃত হয়। এর একটিকে পাকিস্তানি বিমান ভূপাতিত করে। পাইলট অভিনন্দন ভারথমান বন্দিদশায় পাকিস্তানে চা পান করার সময়ের ছবিতে ব্যাপক আলোচিত হন।
ভারতের দাবি, সে সময় মিগ-২১ পাকিস্তানের মার্কিন এফ-১৬ ভূপাতিত করে, যদিও পশ্চিমা দেশগুলো তা অস্বীকার করে। এমনকি ২০২৫ সালের মে মাসে পাকিস্তানে বিমান হামলার সময়ও মিগ-২১ ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রতিস্থাপনে ধীরগতি
ভারত ১৯৯০-এর দশক থেকেই মিগ-২১ অবসরের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু বিকল্প বিমান প্রস্তুতে ধীরগতি ও সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি। দেশীয়ভাবে তৈরি তেজস যুদ্ধবিমানকে বিকল্প ধরা হলেও এটি নিয়ে বিমানবাহিনীর সন্তুষ্টি কম ছিল। এদিকে সরকার ফরাসি মিরাজ-২০০০, রুশ মিগ-২৯ এবং নতুন রাফাল কেনায় বেশি গুরুত্ব দেয়। ফলে বিশাল মিগ-২১ বহর পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

বর্তমান চ্যালেঞ্জ
আধুনিক রাফাল বা মিরাজ একাধিক মিগ-২১-এর কাজ করতে সক্ষম হলেও সংখ্যার ঘাটতি থেকে গেছে। একসঙ্গে সব জায়গায় বিমান পাঠানো সম্ভব নয়। পশ্চিমা গোয়েন্দাদের দাবি অনুযায়ী, মে মাসে সংঘাতের প্রথম রাতেই পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্রে ভারত পাঁচটি যুদ্ধবিমান হারায়। বর্তমানে চীনের কাছে ভারতের তুলনায় প্রায় তিনগুণ যুদ্ধবিমান রয়েছে, যা দশ বছর আগের তুলনায় বড় ব্যবধান। মিগ-২১ বিদায়ের পর এই ব্যবধান আরও বাড়তে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















