ট্রাম্পের ইঙ্গিত এবং শেয়ারবাজারে উত্থান
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্যানাবিস সংস্কার নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানাবিস কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। বর্তমানে মারিজুয়ানা ‘স্কেজুল–I’ মাদকদ্রব্য হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ, যেখানে হেরোইন এবং এলএসডি ও রয়েছে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন এটি ‘স্কেজুল–III’ ক্যাটাগরিতে আনা হতে পারে, যেখানে তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর হলেও সীমিত মাদক যেমন কেটামিন বা অ্যানাবলিক স্টেরয়েড অন্তর্ভুক্ত।
এই ঘোষণার পর মার্কিন ক্যানাবিস কোম্পানিগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি অ্যাডভাইজরশেয়ারস পিওর ইউএস ক্যানাবিস ইটিএফ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

পুনঃশ্রেণিবিন্যাসের সম্ভাব্য প্রভাব
মারিজুয়ানাকে কম বিপজ্জনক ক্যাটাগরিতে আনলে সরাসরি সব সমস্যা সমাধান হবে না, তবে এটি বৈধকরণের দিকে একটি ধাপ হতে পারে। এর ফলে ২০২৬ সালে পরিশোধযোগ্য বিপুল ঋণ পুনঃঅর্থায়ন সহজ হতে পারে। একই সঙ্গে এখনো এই শিল্পে বিনিয়োগ না করা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহী হতে পারে। বর্তমানে শেয়ারের ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নির্ভরতা ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ওপর, যা বাজারকে অস্থির করে তুলেছে।
তবে অনেকে ইতিমধ্যেই এই খাতে ক্ষতির মুখ দেখেছেন। ২০২১ সালের শুরুর দিকের ‘মিম–স্টক’ উন্মাদনায় ক্যানাবিস ইটিএফ দ্রুত বাড়লেও গত পাঁচ বছরে প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে।
ট্যাক্সের নিয়ম ও চ্যালেঞ্জ
সবচেয়ে বড় প্রভাব আসবে কর ব্যবস্থায়। যুক্তরাষ্ট্রের ২৮০ই (280e) নামের নিয়ম অনুসারে ‘স্কেজুল–I’ মাদক ব্যবসার খরচ যেমন ভাড়া, বেতন, বা বিপণন খাতে কর–ছাড় পাওয়া যায় না। এর ফলে ক্যানাবিস কোম্পানিগুলোর কার্যকর করহার দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত।

যদি সাধারণভাবে কর নেওয়া হতো, তাহলে তাদের মুনাফার হার ও ঋণযোগ্যতা অনেক ভালো দেখাত। তবে সমস্যা হচ্ছে ইতিমধ্যে বকেয়া পড়ে থাকা ট্যাক্সের পরিমাণ। ভিরিডিয়ান ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজরসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বড় ১০টি ক্যানাবিস কোম্পানির ওপর অন্তত ২ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ট্যাক্স ঝুলে আছে।
কেন এত বড় ট্যাক্স বকেয়া?
বেশিরভাগ ক্যানাবিস কোম্পানি সময়মতো ট্যাক্স পরিশোধ না করে ব্যালান্সশিটে “অনিশ্চিত কর দায়” হিসেবে দেখাচ্ছে। কারণ তাদের ঋণের খরচ অত্যন্ত বেশি—অনেক সময় ১৬ শতাংশের বেশি সুদ দিতে হয়। অন্যদিকে আইআরএস বকেয়া ট্যাক্সে ৭–৯ শতাংশ সুদ নেয়। ফলে ব্যবসাগুলো নগদ অর্থ ধরে রাখাই সস্তা মনে করছে।
এছাড়া বিক্রির অবস্থাও ভালো নয়। মহামারির সময় বুম তৈরি হলেও বর্তমানে আয় স্থিতিশীল বা স্থবির। অনেক প্রতিষ্ঠান আইনজীবীর পরামর্শে ট্যাক্স বকেয়া পরিশোধে দেরি করছে, কারণ তারা আদালতে ২৮০ই কর–দায় নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে চায়। আবার কেউ কেউ আশা করছে পুনঃশ্রেণিবিন্যাস হলে আইআরএস পুরোনো ট্যাক্স মওকুফ করবে বা অন্তত কিছুটা কমিয়ে দেবে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্ক সংকেত
বিনিয়োগকারীদের অবশ্য এসব দায় খতিয়ে দেখা উচিত। বকেয়া ট্যাক্স না দেওয়ায় কোম্পানিগুলো প্রকৃত অর্থে যত নগদ তৈরি করছে, তার চেয়ে বেশি দেখাচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে ট্রুলিভকে ধরা যায়। বছরের প্রথম ছয় মাসে তাদের ৮৪ শতাংশ নগদ প্রবাহ এসেছে কর ব্যয়ের রিভার্সাল থেকে। তাদের বকেয়া করদায় অর্ধ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
কিউরালিফ, ভেরানো, ও অ্যাসেন্ড ওয়েলনেসের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও হাতে যথেষ্ট নগদ নেই ট্যাক্স মেটানোর জন্য। এমনকি জুশি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স দায় তাদের বাজারমূল্যের চেয়েও বেশি।
অন্যদিকে গ্রিন থাম ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যতিক্রম। তারা সময়মতো ফেডারেল ট্যাক্স পরিশোধ করছে এবং খাতে সবচেয়ে কম সুদে (প্রায় ৯.৫%) ঋণ নিচ্ছে। ফলে তাদের জন্য ট্যাক্স বকেয়া রাখা অর্থহীন।
কিছু দুর্বল কোম্পানি হয়তো আইআরএস–এর কাছ থেকে কিছুটা ছাড় পেতে পারে, যদি পুরোনো ট্যাক্স মেটানো মানেই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে আর্থিকভাবে সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলোর বেলায় ট্যাক্স দায় হঠাৎ করে মওকুফ হবে—এমন ধারণা বাস্তবসম্মত নয়।
অতএব, যারা ভেবেছিলেন পুরোনো ট্যাক্স সহজেই মাফ হয়ে যাবে, তাদের জন্য এটি হতাশাজনক খবর হতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















