পরিচিতি
আমেরিকার ডেমোক্র্যাট দল এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে যেখানে তারা অতীতের মতো প্রাণবন্ত ও আশাবাদী মনে হচ্ছে না। বরং তারা এখন অনেকের কাছে অভিযোগপ্রবণ, দ্বিধাগ্রস্ত এবং প্রতিক্রিয়াশীল এক শক্তি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বিনিয়োগকারী গৌরব কাপাড়িয়া মনে করেন, দলটি আবার জনগণের আস্থা ফিরে পেতে হলে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব, কার্যকর সমাধান এবং বাস্তবমুখী রাজনীতি গ্রহণ করতে হবে।

ভোটার হারানো ও নেতিবাচক ভাবমূর্তি
গত চার বছরে ৩০টি রাজ্যের ভোটার নিবন্ধন তথ্য অনুযায়ী, ডেমোক্র্যাটরা প্রত্যেক রাজ্যেই ভোটার হারিয়েছে। নিবন্ধিত ভোটারের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ।
একসময় আমেরিকান স্বপ্ন ও আশাবাদের প্রতীক ছিল এই দল। কিন্তু এখন তারা বেশি করে বলছে কী করা যাবে না, কীভাবে সমস্যা অতিক্রম করা কঠিন— অথচ সমাধানের পথে এগোচ্ছে না।
নেতৃত্বে দ্বিধা ও ভয়ের সংস্কৃতি
ডেমোক্র্যাট নেতাদের সাথে ব্যক্তিগত আলাপে তারা বাস্তবসম্মত সমাধান দিতে সক্ষম বলে মনে হয়। কিন্তু প্রকাশ্যে তারা হয়ে ওঠেন অতিরিক্ত সাবধানী ও অনিশ্চিত। বামপন্থীরা তাদের ‘বিক্রি হয়ে যাওয়া’ বলে অভিযুক্ত করবে বা ডানপন্থীরা ‘চরমপন্থী’ বলবে— এই ভয়ে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পিছিয়ে যায়। এর ফলে দলটি কার্যকর পদক্ষেপের বদলে ক্রমাগত উদ্বেগ ও অজুহাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
জনগণের বাস্তব উদ্বেগ
ভোটাররা প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে ভাড়া দেওয়ার দুশ্চিন্তা নিয়ে, সরকারি জটিলতায় ক্লান্ত হয়ে বা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা যখন এসব প্রশ্নে অস্পষ্ট, আড়ম্বরপূর্ণ উত্তর দেয় কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া, তখন তারা মানুষের আস্থা হারায়।

করণীয়: সমস্যা সমাধানে সরাসরি উদ্যোগ
আমেরিকানরা এমন একটি দল চায় যারা শুধু ভাগাভাগি নয়, বরং নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। এর মানে হলো—
- আরও দ্রুত বাড়ি নির্মাণ
- ভালো চাকরির সুযোগ তৈরি
- সমৃদ্ধির নতুন পথ উন্মুক্ত করা
উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষক বা নার্সদের বসবাসের এলাকায় ঘর কেনার সামর্থ্য নেই। ব্যবসায়ীরা কর্মী পাচ্ছেন না কারণ কর্মীদের থাকার জায়গা নেই। অথচ বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠীর কারণে গৃহনির্মাণের পথে বাধা দূর করতে ডেমোক্র্যাটরা সাহসী পদক্ষেপ নেয়নি।
ছোট ব্যবসা ও উদ্যোগের বাধা
ছোট উদ্যোক্তারা নানা জটিল আইন-কানুনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিছু রাজ্যে সাধারণ হেয়ার-ব্রেইডিং কাজ শিখতেও ৫০০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। নিউইয়র্কে খাবারের ভ্যানের লাইসেন্স পেতে এক দশকের অপেক্ষা তৈরি হয়েছে, ফলে অবৈধ বাজারে উচ্চমূল্যে ভাড়া নিতে হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটরা আমেরিকান ড্রিমের কথা বলে, অথচ বাস্তবে তা অর্জন আরও কঠিন করে তুলছে।

বাস্তবসম্মত নীতি গ্রহণের প্রয়োজন
ডেমোক্র্যাটদের উচিত যৌক্তিক নীতি গ্রহণ করা, তা যে-দলের কাছ থেকেই আসুক না কেন।
- আশ্রয়প্রার্থীদের প্রক্রিয়া সংস্কারে রিপাবলিকানদের প্রস্তাব কার্যকর হলে তা গ্রহণ করা উচিত।
- ব্যবসা-বান্ধব সংস্কার প্রস্তাব স্থানীয় পর্যায়ে সফল হলে তা জাতীয়ভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
- পরিবেশ বা অবকাঠামোতে দীর্ঘসূত্রিতা কাটিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইতিবাচক উদাহরণ
- ওহাইওর সিনসিনাটিতে ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন সিটি প্রশাসন আবাসন সংকট মোকাবিলায় নতুন নীতি নিয়েছে।
- মেরিল্যান্ডে “ফেডস টু এডস” কর্মসূচি ছাঁটাই হওয়া ফেডারেল কর্মীদের শিক্ষকতায় দ্রুত নিয়োগে সহায়তা করছে।
- তরুণ ডেমোক্র্যাট নেতারা ব্যবসার সাথে অংশীদারিত্ব করে দক্ষতা ও বাস্তবতাবাদী সমাধান দিচ্ছেন।

উপসংহার
ডেমোক্র্যাটদের সামনে স্পষ্ট পথ রয়েছে—
- তারা যদি বাস্তববাদী, কার্যকরী এবং সাহসী নেতৃত্ব গ্রহণ করে, তবে জনগণের আস্থা ফিরে পাবে।
- আর যদি অজুহাত ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তারা আরও প্রান্তিক হয়ে পড়বে।
আমেরিকানরা এখন কম প্রক্রিয়া আর বেশি অগ্রগতি চায়। যে দল একসাথে নীতি, সহানুভূতি ও দক্ষতার সমন্বয় করতে পারবে, সেই দলই আগামী প্রজন্মের আমেরিকান রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে। আর অন্যরা— জেরেমির মতো— শূন্য কক্ষে একাই কথা বলবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















