সামরিক হামলা ও রাজনৈতিক বার্তা
২ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ভেনেজুয়েলার অপরাধী চক্র ট্রেন দে আরাগুয়া মাদকবোঝাই একটি নৌকা ধ্বংস করেছে মার্কিন সেনারা, তিনি একে “নারকো-সন্ত্রাসী” দমন অভিযান হিসেবে আখ্যা দেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে তিনি সতর্ক করেন—যে কেউ মাদক আমেরিকায় আনতে চাইছে, তাদের জন্য এটি সতর্কবার্তা।
এই বার্তা ছিল রাজনৈতিকভাবে সুচিন্তিত। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে মাদকচক্র অত্যন্ত অজনপ্রিয়, বিশেষ করে গত বছর ৮০ হাজার মানুষ অতিরিক্ত মাত্রায় মাদক সেবনে মারা যাওয়ার পর। ট্রাম্প দাবি করতে পারেন, এ ধরনের আক্রমণ আমে

রিকান জীবনের সুরক্ষা দিচ্ছে। সরকারি ভিডিওচিত্রে বিস্ফোরণের দৃশ্য দেশজুড়ে টিভি সংবাদে প্রচারিত হয়।
অতীতের তুলনা: ওবামা যুগ
পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টেরাও ড্রোন ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের হত্যা করেছেন, যেখানে তাদের গ্রেপ্তার করা প্রায় অসম্ভব ছিল। বারাক ওবামা পাকিস্তান, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের মতো অশান্ত দেশগুলোতে অন্তত ৫৬৩টি লক্ষ্যভিত্তিক হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এতে ৬৪ থেকে ৮০১ জন বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। যদিও বিতর্কিত ছিল, তবুও এর একটি আইনি ভিত্তি ছিল। কারণ ২০০১ সালে আল-কায়েদার হামলার পর কংগ্রেস সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক পদক্ষেপ অনুমোদন করেছিল।
ট্রাম্পের নতুন সংজ্ঞা
কিন্তু ট্রাম্প এই যুক্তিকে আরও বহুদূর প্রসারিত করছেন। তিনি মাদকচক্রগুলোকে “সন্ত্রাসী” হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এটি বিতর্কিত, কারণ আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, আর মাদকচক্র মূলত অর্থনৈতিক স্বার্থে (মাদক বিক্রি) মানুষ হত্যা করে।
তিনি আরও দাবি করেন, ট্রেন দে আরাগুয়া ভেনেজুয়েলা সরকারের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রে “আক্রমণ” চালাচ্ছে। কিন্তু এর কোনো শক্ত প্রমাণ নেই, বরং ২ সেপ্টেম্বর একটি আপিল আদালত এই দাবি খারিজ করেছে।

জনমত ও বাস্তব পরিণতি
বেশিরভাগ আমেরিকান ভোটার জরিপে মাদকচক্রকে “সন্ত্রাসী” হিসেবে অভিহিত করতে সম্মত। কিন্তু ট্রাম্পের ভাষার এই মোচড় বাস্তব জীবনে ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনছে। আমেরিকায় ধরা পড়া কথিত “আক্রমণকারীদের” এল সালভাদরের এক ভয়ঙ্কর কারাগারে পাঠানো হয়েছে, যেখানে তারা হয়তো কখনো বিচারও পাবেন না। সদ্য ধ্বংস হওয়া নৌকায় থাকা ১১ জনকে কার্যত বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
প্রচলিত আইন প্রয়োগের ধারা
আইন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড মিলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকা থামিয়ে তল্লাশি চালাতে পারে। প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও বিচার করা হয়। ভুল প্রমাণিত হলে কেউ নিহত হয় না।
কিন্তু ট্রাম্প আশা করছেন, এই কঠোর শক্তি প্রদর্শন চোরাচালানিদের ভয় দেখাবে। তবে বাস্তবে সরবরাহ কমে গেলে মাদকের দাম বাড়ে, আর নতুন সরবরাহকারী হাজির হয়। ফেন্টানিলের মতো কৃত্রিম মাদক যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই তৈরি করা যায়। ফলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মাদক-সংক্রান্ত মৃত্যুহার কমবেই এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

সামরিকীকরণের ঝুঁকি
কাটো ইনস্টিটিউটের গবেষক ব্র্যান্ডন বাক মন্তব্য করেছেন, মাদকচক্রকে “সন্ত্রাসী” বলার মানে হলো মাদকবিরোধী যুদ্ধে আরও বেশি সামরিকীকরণের পথ প্রশস্ত করা। বিষয়টি নির্ভর করবে ট্রাম্প কেবল আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌকা ধ্বংসে সীমাবদ্ধ থাকবেন, নাকি লাতিন আমেরিকার ভূখণ্ডে সেনা পাঠাবেন।
বিশেষ করে মেক্সিকোর সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানে হামলা চালালে একটি মিত্র দেশের সঙ্গে ভয়াবহ কূটনৈতিক সংকট তৈরি হবে। ভেনেজুয়েলার স্বৈরশাসক নিকোলাস মাদুরো ট্রাম্পের ক্যারিবিয়ান নৌ-অভিযানকে “শত বছরের সবচেয়ে বড় হুমকি” বলেছেন। হয়তো এটি অতিরঞ্জিত, কিন্তু ঝুঁকি কতটা গুরুতর—তা এখনো স্পষ্ট নয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















