ফ্রান্সের রাজনৈতিক মঞ্চ আবারও অস্থিরতার মুখে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর নেতৃত্বে দেশটি আরেকজন প্রধানমন্ত্রী হারানোর সম্ভাবনায় পড়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু সংসদে আস্থাভোটে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।
পঞ্চাশের দশকের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা
শেষবার ফ্রান্সে টানা দুই বছরে পাঁচ প্রধানমন্ত্রী বদল হয়েছিল ১৯৫০-এর দশকে। তখনকার চতুর্থ প্রজাতন্ত্র ছিল দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতায় ভরা। ১৯৫৮ সালে পঞ্চম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যই ছিল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু এবারও সেই অস্থিরতার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আস্থাভোট ও ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা
বাইরু ৮ সেপ্টেম্বর সংসদে আস্থাভোট আহ্বান করেছেন। তিনি চান ২০২৬ সালের বাজেটে ঘাটতি কমাতে ৪৪ বিলিয়ন ইউরো সাশ্রয়ী পরিকল্পনা। কিন্তু বামপন্থী ও কট্টর-ডানপন্থী বিরোধীরা তা প্রত্যাখ্যানের হুমকি দিয়েছে। বর্তমানে ফ্রান্সের ঋণ জিডিপির ১১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং বাজেট ঘাটতি এ বছর ৫.৪ শতাংশ। অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এই সাশ্রয় দরকার বলেই বাইরুর দাবি।
সংখ্যালঘু সরকার ও তিনভাগে বিভক্ত সংসদ
বাইরুর সরকার সংখ্যালঘু অবস্থায় রয়েছে। সংসদ তিনটি বিরোধী ব্লকে বিভক্ত—কট্টর-ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি (এনআর), সমাজতন্ত্রী ও কট্টর-বাম। বাইরুর টিকে থাকার জন্য সমাজতন্ত্রী বা এনআর-এর সমর্থন দরকার ছিল। কিন্তু উভয় পক্ষই তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এনআর নেতা জর্ডান বার্দেলা বলেছেন, “কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটেনি।” তারা চান সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচন ডাকুক প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রী নেতা অলিভিয়ে ফোর নতুন সরকার গঠনে সহায়তা প্রস্তাব করেছেন, তবে কম উচ্চাভিলাষী বাজেট পরিকল্পনা চান—২২ বিলিয়ন ইউরো সাশ্রয়।
প্রধানমন্ত্রীর দিন শেষের পথে
সব দিক থেকে বোঝা যাচ্ছে বাইরুর সময় শেষ। ম্যাখোঁর এক ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা বলছেন, “তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ। আবার শুরুতে ফিরে গেলাম।” এদিকে ১০ এবং ১৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ-ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।

ম্যাখোঁর সংকট ও সীমিত বিকল্প
প্রশ্ন হচ্ছে এরপর কী হবে। ম্যাখোঁ তাৎক্ষণিকভাবে নতুন নির্বাচন ডাকবেন বলে মনে হয় না। ২০২৪ সালের জুনে ডাকা নির্বাচনে তার দল সংসদে আরও দুর্বল হয়েছিল। জরিপ বলছে, এখন ভোট হলে এনআর ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে থাকবে, বাম দলগুলো মিলে ২৫ শতাংশ, আর ম্যাখোঁর কেন্দ্রপন্থী জোট মাত্র ১৫ শতাংশ ভোট পাবে। ফলে তিনি সম্ভবত আরেকজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকোর্নু বা বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন। কিন্তু তারাও সংসদের অচলাবস্থা ভাঙতে পারবেন না।
প্রেসিডেন্টের অবস্থান
ম্যাখোঁর পদত্যাগের দাবিও উঠেছে, তবে তিনি জানিয়েছেন যে ২০২৭ সাল পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। তার আন্তর্জাতিক সূচিও ব্যস্ত—বিশেষ করে জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা। তাই বাইরু ব্যর্থ হলে তিনি দ্রুত নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন, যা জানুয়ারি ২০২৪ থেকে পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হবে।
একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার একটি দিক মেটালেও ফ্রান্সের দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা কাটবে না। গত ১৫ মাস ধরে যে অচলাবস্থা চলছে, তার শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ এখনো নেই।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















