বীজতেল নিয়ে বিতর্ক
আমেরিকার স্বাস্থ্যসচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র এবং তার সমর্থকরা বীজতেলকে ক্ষতিকর বলে প্রচার করছেন। অনেক ওয়েলনেস ইনফ্লুয়েন্সারও বলছেন যে এগুলো ‘বিষাক্ত’ এবং স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। এর প্রভাবে কিছু মার্কিন ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁ বীজতেলের বদলে গরুর চর্বি বা অ্যাভোকাডো তেলের মতো বিকল্প ব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু সত্যিই কি বীজতেল এতটা ক্ষতিকর?
বীজতেল আসলে কী
খাদ্যপণ্যের লেবেলে সাধারণত যেটি “ভেজিটেবল অয়েল” নামে উল্লেখ থাকে, সেটিই মূলত বীজতেল। এগুলো ভুট্টা, সরিষা, ক্যানোলা, সয়াবিন, সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন বীজ থেকে তৈরি হয়। সমালোচকরা দুটি বিষয়ে বেশি উদ্বিগ্ন—
১. তেল উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক প্রক্রিয়া ক্ষতিকর হতে পারে।
২. এতে থাকা ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে প্রদাহ, ক্যানসার, হৃদরোগ ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তবে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বলছে, এই দুটি অভিযোগই ভিত্তিহীন।
রাসায়নিক ব্যবহারের বিষয়
উৎপাদনে হেক্সেন নামক একটি সলভেন্ট ব্যবহার করা হয়, যা নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে গেলে মাথা ঘোরা বা শ্বাসনালীর জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। তবে তেল ফিল্টার ও গরম করার প্রক্রিয়ায় হেক্সেন ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান উবে যায়। এর ফলে পাওয়া যায় নিরপেক্ষ স্বাদের, দীর্ঘস্থায়ী ও সস্তা রান্নার উপযোগী তেল। মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষের খাবারে যে অল্পমাত্রার হেক্সেন থাকতে পারে, তা “বিষবিজ্ঞানগতভাবে তুচ্ছ”।
ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড নিয়ে বিতর্ক
সমালোচকদের দাবি, বীজতেলে থাকা লিনোলেইক অ্যাসিড (মূল ওমেগা-৬ ফ্যাট) শরীরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী যৌগে রূপ নিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞ থমাস স্যান্ডার্স (কিংস কলেজ লন্ডন) বলছেন, লিনোলেইক অ্যাসিড আবার প্রদাহনিবারক যৌগেও ভেঙে যায়। অর্থাৎ এর প্রভাব একপাক্ষিকভাবে ক্ষতিকর বলা যায় না।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফল
বিভিন্ন র্যান্ডমাইজড ট্রায়ালে দেখা গেছে, লিনোলেইক অ্যাসিড বেশি খেলে শরীরে প্রদাহের কোনো চিহ্ন বাড়েনি। বরং বীজতেল পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ, যা মাখন বা স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিবর্তে ব্যবহার করলে কোলেস্টেরল কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণাও আশ্বস্ত করছে। সম্প্রতি ‘নেচার মেডিসিন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় এক লাখ মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মীর খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা গেছে, যারা বেশি ভেজিটেবল অয়েল খেয়েছেন তারা অন্যদের তুলনায় বেশি দিন সুস্থ থেকেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওমেগা-৬ ফ্যাটের উচ্চ গ্রহণ মৃত্যুহার কমায়।
বীজতেল ক্ষতিকর নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী—বিশেষত যদি তা পরিমিত মাত্রায় খাওয়া হয় এবং মাছ বা আখরোটের মতো খাবারে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটের সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়া যায়। অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়াই আসল সমস্যা, বীজতেল নয়। সমালোচকরা যে বিকল্পগুলো দিচ্ছেন—মাখন, লার্ড বা গরুর চর্বি—তার চেয়ে বীজতেল অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।