০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ভারতে স্টিল পাইপ নির্মাতায় হানা—বিড রিগিং তদন্তে তল্লাশি” পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেননি চেম্বার আদালত জাতিসংঘের উদ্ভাবন সূচকে শীর্ষ-১০—জার্মানিকে সরিয়ে চীন ইইউর ১৯তম রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ স্থগিত—পরিধি নিয়ে মতভেদ অ্যামাজনের হার্ডওয়্যার ইভেন্ট ৩০ সেপ্টেম্বর—ইকো, ফায়ার টিভি, কিন্ডলে চমক টিকটক সমাধানে ‘ফ্রেমওয়ার্ক’—যুক্তরাষ্ট্রে চালু রাখতে অরাকলসহ কনসোর্টিয়াম স্কারবরো শোলে ফিলিপাইনি জাহাজে চীনের ওয়াটার ক্যানন রুশ হামলায় জাপোরিঝিয়ায় একজন নিহত, বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত ফেড সুদ কমাতে পারে—এশিয়া শেয়ারে নতুন উত্থান চীনের বৈশ্বিক বন্দর প্রভাব কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের বড়সড় সামুদ্রিক উদ্যোগ

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ: ক্ষুদ্র অথচ বিস্ময়কর

প্রকৃতির অজস্র রহস্যের মধ্যে কিছু প্রাণী এমন আছে, যাদের প্রতি প্রথম দৃষ্টিতেই বিস্মিত হতে হয়। ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ (Indotyphlops braminus) ঠিক তেমনই এক বিস্ময়কর প্রাণী। দৈর্ঘ্যে মাত্র কয়েক ইঞ্চি, দেখতে কেঁচোর মতো, চোখ প্রায় অকার্যকর—তবুও এটি আসলে এক প্রজাতির সাপ। এ কারণে একে অনেকে সাপ ভেবেই উঠতে পারেন না। এর বিস্তার, প্রজনন, ইতিহাস ও মানুষের কল্পনায় এর অবস্থান একে বিশ্বব্যাপী অনন্য করেছে।

আবিষ্কার ও নামকরণ

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণিত হয় ১৮০১ সালে। দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারতের অঞ্চলে এটি প্রথম সনাক্ত হয়। নামের মধ্যে “ব্রাহ্মণী” শব্দটি এসেছে ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রাহ্মণ সংস্কৃতির প্রভাব থেকে। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই সাপ প্রাচীনকাল থেকেই ব্রাহ্মণদের বাসস্থানের মাটি ও গৃহে পাওয়া যেত, তাই এমন নামকরণ। আবার “ব্লাইন্ড” শব্দটি এসেছে এর ক্ষুদ্র চোখের কারণে, যা আলো-অন্ধকার বোঝে মাত্র, কিন্তু দৃষ্টিশক্তি কার্যত নেই।

শারীরিক বৈশিষ্ট্য

এই সাপের দৈর্ঘ্য সাধারণত ২–৬ ইঞ্চির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। শরীর চিকন, মসৃণ ও চকচকে, দেখতে অনেকটা কেঁচোর মতো। রঙ গাঢ় বাদামি, কালো কিংবা ধূসর হয়। মাথা ও লেজের মধ্যে তফাৎ বোঝা কঠিন। এর গায়ের আঁশ ছোট ছোট টালি আকারে সাজানো। মাথার দু’পাশে চোখ থাকলেও সেগুলো ত্বকের নিচে চাপা, কেবল হালকা আলোক সংবেদনশীল। এর জিভ দ্বিখণ্ডিত, যা দিয়ে এটি আশেপাশের রাসায়নিক সংকেত বুঝতে পারে।

আবাসস্থল ও জীবনধারা

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ মূলত ভূগর্ভস্থ প্রাণী। এটি ভেজা মাটি, বাগানের টব, পচা পাতা, উইপোকার ঢিবি কিংবা গাছের গোড়ার নিচে থাকতে ভালোবাসে। বৃষ্টির সময় মাটি ভিজে গেলে বা যখন মানুষ মাটি খুঁড়ে, তখনই সচরাচর চোখে পড়ে। ঘরের কোণায় রাখা ফুলের টবেও এদের পাওয়া যায়। এজন্যই ইংরেজিতে একে অনেক সময় “Flowerpot Snake” বলা হয়।

খাদ্যাভ্যাস

এই ক্ষুদ্র সাপের খাদ্য তালিকা মূলত ছোট ছোট পোকামাকড়ের ডিম, উইপোকা ও পিঁপড়া। মাটির নিচে থাকা এসব ক্ষুদ্র প্রাণী খেয়ে এটি বেঁচে থাকে। মানুষের জন্য এটি একেবারেই ক্ষতিকর নয়। বরং ফসল ও গাছপালাকে বাঁচাতে সাহায্য করে, কারণ এটি পোকামাকড়ের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

বিস্তার ইতিহাস

বিশ্বের অন্যান্য সাপের মতো নয়, ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপের বিস্তার কেবল প্রাকৃতিক উপায়ে ঘটেনি। এই সাপ মূলত মানুষের বাগানচর্চার সঙ্গেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। টব বা চারা গাছ রপ্তানির সময় মাটির ভেতরে এরা লুকিয়ে পড়ে এবং সেই সঙ্গে নতুন দেশে পৌঁছে যায়। বর্তমানে আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, এমনকি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশেই এই সাপের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। একে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে “cosmopolitan snake”—অর্থাৎ যাকে প্রায় সর্বত্র খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রজনন বিস্ময়

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ পৃথিবীর একমাত্র সাপ, যা parthenogenesis প্রক্রিয়ায় প্রজনন করে। অর্থাৎ এদের জন্য পুরুষ সাপের প্রয়োজন হয় না। সব সাপই স্ত্রী এবং নিজের শরীরের কোষ থেকেই ডিম উৎপন্ন করতে পারে। প্রতিবার এরা ২–৮টি ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে ফোটে ছোট ছোট সাপ, যারা আবার নিজেরাই একদিন ডিম দিতে সক্ষম হয়। এই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই একটি মাত্র সাপ থেকেও নতুন অঞ্চলে বড় আকারের জনসংখ্যা গড়ে উঠতে পারে।

মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ও লোকবিশ্বাস

ক্ষুদ্র ও অচেনা প্রাণী হওয়ায় ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপকে ঘিরে নানা লোককথা ও বিশ্বাস রয়েছে।

  • বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ এলাকায় মানুষ একে কেঁচো ভেবে মেরে ফেলে।
  • কোথাও কোথাও একে বিষাক্ত সাপ ভেবে আতঙ্ক ছড়ায়।
  • ভারতের কিছু অঞ্চলে বিশ্বাস আছে,এই সাপ ঘরে দেখা দিলে সৌভাগ্য আসে, কারণ এটি মন্দ আত্মা দূর করে।

বাস্তবে এই সাপ সম্পূর্ণ নিরীহ। মানুষের বা পশুপাখির কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ জীববিজ্ঞানের গবেষণায় বিশেষ স্থান দখল করেছে। এর একক প্রজনন প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে। এরা অভিযোজন ক্ষমতায় অত্যন্ত শক্তিশালী, মাটির নিচে বাস করে সহজে বেঁচে থাকতে পারে এবং ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ায় টিকে যায়। পরিবেশ বিজ্ঞানে এ সাপকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়, কারণ এটি মাটির জীববৈচিত্র্যের অংশ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

পরিবেশ ও মানুষের সহাবস্থান

মানুষের অজ্ঞতা ও ভয়ই এ সাপের সবচেয়ে বড় বিপদ। অনেক সময় বাগানে কাজ করার সময় বা মাটি খোঁড়ার সময় কৃষক বা শ্রমিকরা এ সাপ মেরে ফেলে। অথচ এটি উপকারী পোকা খেয়ে পরিবেশ রক্ষা করছে। তাই সচেতনতা তৈরি করা জরুরি যে, এই সাপ কোনো ক্ষতি করে না বরং প্রকৃতির ভারসাম্যে অবদান রাখে।

স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও কাহিনি

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা প্রায়ই বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে বা জমি চাষ করার সময় ছোট কালো কেঁচোর মতো প্রাণী পাওয়া যায়। গ্রামের মানুষজন প্রথমে ভয় পায়, কিন্তু পরে বুঝতে পারে যে এরা কামড়ায় না। আবার ঢাকার অনেক বাসাবাড়ির টবে এমন সাপ ধরা পড়েছে, যা দেখে গৃহস্থরা আতঙ্কিত হয়ে পুলিশের কাছে পর্যন্ত খবর দিয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা এসে জানান, এগুলো সম্পূর্ণ নিরীহ সাপ।

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ পৃথিবীর সরীসৃপ জগতের এক অনন্য বিস্ময়। ক্ষুদ্র আকার, কেঁচোর মতো চেহারা, একক প্রজনন ক্ষমতা ও বিশ্বব্যাপী বিস্তার একে বিশেষ করে তুলেছে। অজ্ঞতা ও ভ্রান্ত ধারণা দূর করে যদি মানুষ বুঝতে পারে যে এটি পরিবেশের জন্য উপকারী, তবে হয়তো এ সাপের অস্তিত্ব আরও নিরাপদ হবে।

এ ক্ষুদ্র অথচ বিস্ময়কর সাপ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণীরই রয়েছে নিজস্ব গুরুত্ব। অতি ক্ষুদ্র হয়েও তারা পরিবেশের চাকা সচল রাখতে অপরিহার্য।

ভারতে স্টিল পাইপ নির্মাতায় হানা—বিড রিগিং তদন্তে তল্লাশি”

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ: ক্ষুদ্র অথচ বিস্ময়কর

০৪:০০:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রকৃতির অজস্র রহস্যের মধ্যে কিছু প্রাণী এমন আছে, যাদের প্রতি প্রথম দৃষ্টিতেই বিস্মিত হতে হয়। ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ (Indotyphlops braminus) ঠিক তেমনই এক বিস্ময়কর প্রাণী। দৈর্ঘ্যে মাত্র কয়েক ইঞ্চি, দেখতে কেঁচোর মতো, চোখ প্রায় অকার্যকর—তবুও এটি আসলে এক প্রজাতির সাপ। এ কারণে একে অনেকে সাপ ভেবেই উঠতে পারেন না। এর বিস্তার, প্রজনন, ইতিহাস ও মানুষের কল্পনায় এর অবস্থান একে বিশ্বব্যাপী অনন্য করেছে।

আবিষ্কার ও নামকরণ

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণিত হয় ১৮০১ সালে। দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারতের অঞ্চলে এটি প্রথম সনাক্ত হয়। নামের মধ্যে “ব্রাহ্মণী” শব্দটি এসেছে ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রাহ্মণ সংস্কৃতির প্রভাব থেকে। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই সাপ প্রাচীনকাল থেকেই ব্রাহ্মণদের বাসস্থানের মাটি ও গৃহে পাওয়া যেত, তাই এমন নামকরণ। আবার “ব্লাইন্ড” শব্দটি এসেছে এর ক্ষুদ্র চোখের কারণে, যা আলো-অন্ধকার বোঝে মাত্র, কিন্তু দৃষ্টিশক্তি কার্যত নেই।

শারীরিক বৈশিষ্ট্য

এই সাপের দৈর্ঘ্য সাধারণত ২–৬ ইঞ্চির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। শরীর চিকন, মসৃণ ও চকচকে, দেখতে অনেকটা কেঁচোর মতো। রঙ গাঢ় বাদামি, কালো কিংবা ধূসর হয়। মাথা ও লেজের মধ্যে তফাৎ বোঝা কঠিন। এর গায়ের আঁশ ছোট ছোট টালি আকারে সাজানো। মাথার দু’পাশে চোখ থাকলেও সেগুলো ত্বকের নিচে চাপা, কেবল হালকা আলোক সংবেদনশীল। এর জিভ দ্বিখণ্ডিত, যা দিয়ে এটি আশেপাশের রাসায়নিক সংকেত বুঝতে পারে।

আবাসস্থল ও জীবনধারা

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ মূলত ভূগর্ভস্থ প্রাণী। এটি ভেজা মাটি, বাগানের টব, পচা পাতা, উইপোকার ঢিবি কিংবা গাছের গোড়ার নিচে থাকতে ভালোবাসে। বৃষ্টির সময় মাটি ভিজে গেলে বা যখন মানুষ মাটি খুঁড়ে, তখনই সচরাচর চোখে পড়ে। ঘরের কোণায় রাখা ফুলের টবেও এদের পাওয়া যায়। এজন্যই ইংরেজিতে একে অনেক সময় “Flowerpot Snake” বলা হয়।

খাদ্যাভ্যাস

এই ক্ষুদ্র সাপের খাদ্য তালিকা মূলত ছোট ছোট পোকামাকড়ের ডিম, উইপোকা ও পিঁপড়া। মাটির নিচে থাকা এসব ক্ষুদ্র প্রাণী খেয়ে এটি বেঁচে থাকে। মানুষের জন্য এটি একেবারেই ক্ষতিকর নয়। বরং ফসল ও গাছপালাকে বাঁচাতে সাহায্য করে, কারণ এটি পোকামাকড়ের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

বিস্তার ইতিহাস

বিশ্বের অন্যান্য সাপের মতো নয়, ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপের বিস্তার কেবল প্রাকৃতিক উপায়ে ঘটেনি। এই সাপ মূলত মানুষের বাগানচর্চার সঙ্গেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। টব বা চারা গাছ রপ্তানির সময় মাটির ভেতরে এরা লুকিয়ে পড়ে এবং সেই সঙ্গে নতুন দেশে পৌঁছে যায়। বর্তমানে আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, এমনকি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশেই এই সাপের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। একে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে “cosmopolitan snake”—অর্থাৎ যাকে প্রায় সর্বত্র খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রজনন বিস্ময়

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ পৃথিবীর একমাত্র সাপ, যা parthenogenesis প্রক্রিয়ায় প্রজনন করে। অর্থাৎ এদের জন্য পুরুষ সাপের প্রয়োজন হয় না। সব সাপই স্ত্রী এবং নিজের শরীরের কোষ থেকেই ডিম উৎপন্ন করতে পারে। প্রতিবার এরা ২–৮টি ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে ফোটে ছোট ছোট সাপ, যারা আবার নিজেরাই একদিন ডিম দিতে সক্ষম হয়। এই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই একটি মাত্র সাপ থেকেও নতুন অঞ্চলে বড় আকারের জনসংখ্যা গড়ে উঠতে পারে।

মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ও লোকবিশ্বাস

ক্ষুদ্র ও অচেনা প্রাণী হওয়ায় ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপকে ঘিরে নানা লোককথা ও বিশ্বাস রয়েছে।

  • বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ এলাকায় মানুষ একে কেঁচো ভেবে মেরে ফেলে।
  • কোথাও কোথাও একে বিষাক্ত সাপ ভেবে আতঙ্ক ছড়ায়।
  • ভারতের কিছু অঞ্চলে বিশ্বাস আছে,এই সাপ ঘরে দেখা দিলে সৌভাগ্য আসে, কারণ এটি মন্দ আত্মা দূর করে।

বাস্তবে এই সাপ সম্পূর্ণ নিরীহ। মানুষের বা পশুপাখির কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ জীববিজ্ঞানের গবেষণায় বিশেষ স্থান দখল করেছে। এর একক প্রজনন প্রক্রিয়া বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে। এরা অভিযোজন ক্ষমতায় অত্যন্ত শক্তিশালী, মাটির নিচে বাস করে সহজে বেঁচে থাকতে পারে এবং ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ায় টিকে যায়। পরিবেশ বিজ্ঞানে এ সাপকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়, কারণ এটি মাটির জীববৈচিত্র্যের অংশ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

পরিবেশ ও মানুষের সহাবস্থান

মানুষের অজ্ঞতা ও ভয়ই এ সাপের সবচেয়ে বড় বিপদ। অনেক সময় বাগানে কাজ করার সময় বা মাটি খোঁড়ার সময় কৃষক বা শ্রমিকরা এ সাপ মেরে ফেলে। অথচ এটি উপকারী পোকা খেয়ে পরিবেশ রক্ষা করছে। তাই সচেতনতা তৈরি করা জরুরি যে, এই সাপ কোনো ক্ষতি করে না বরং প্রকৃতির ভারসাম্যে অবদান রাখে।

স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও কাহিনি

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা প্রায়ই বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে বা জমি চাষ করার সময় ছোট কালো কেঁচোর মতো প্রাণী পাওয়া যায়। গ্রামের মানুষজন প্রথমে ভয় পায়, কিন্তু পরে বুঝতে পারে যে এরা কামড়ায় না। আবার ঢাকার অনেক বাসাবাড়ির টবে এমন সাপ ধরা পড়েছে, যা দেখে গৃহস্থরা আতঙ্কিত হয়ে পুলিশের কাছে পর্যন্ত খবর দিয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা এসে জানান, এগুলো সম্পূর্ণ নিরীহ সাপ।

ব্রাহ্মণী ব্লাইন্ড সাপ পৃথিবীর সরীসৃপ জগতের এক অনন্য বিস্ময়। ক্ষুদ্র আকার, কেঁচোর মতো চেহারা, একক প্রজনন ক্ষমতা ও বিশ্বব্যাপী বিস্তার একে বিশেষ করে তুলেছে। অজ্ঞতা ও ভ্রান্ত ধারণা দূর করে যদি মানুষ বুঝতে পারে যে এটি পরিবেশের জন্য উপকারী, তবে হয়তো এ সাপের অস্তিত্ব আরও নিরাপদ হবে।

এ ক্ষুদ্র অথচ বিস্ময়কর সাপ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণীরই রয়েছে নিজস্ব গুরুত্ব। অতি ক্ষুদ্র হয়েও তারা পরিবেশের চাকা সচল রাখতে অপরিহার্য।