নতুন প্রবণতা: রুম-অনলি সার্ভিস
জাপানের বিভিন্ন হটস্প্রিং রিসোর্ট ও পর্যটন এলাকায় এখন ক্রমেই বাড়ছে শুধু রুম ভাড়ার ব্যবস্থা। এসব হোটেল অতিথিদের স্থানীয় রেস্তোরাঁয় খেতে উৎসাহিত করছে। বিদেশি পর্যটকরা সাধারণত বাইরে খেতে ভালোবাসেন, অন্যদিকে হোটেলগুলো জনবল সংকটে ভুগছে। এতে একদিকে হোটেলের চাপ কমছে, অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসাগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও রেস্তোরাঁর অভাব পর্যটকদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে।
ইসে শহরে নিপ্পোনিয়া হোটেল
এপ্রিল মাসে মিয়ে প্রিফেকচারের ইসে শহরে চালু হয় নিপ্পোনিয়া হোটেল ইসে কাওয়াসাকি মার্চেন্ট টাউন। ইসে মন্দিরের কারণে ভক্ত ও পর্যটকে মুখর এই শহরে হোটেলটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এটি ‘বিচ্ছিন্ন হোটেল’, যেখানে পুরনো ব্যবসায়ীদের বাড়ি ও গুদাম সংস্কার করে অতিথিশালা বানানো হয়েছে। এখানে রাতের খাবার নেই, অতিথিদের বাইরে রেস্তোরাঁয় খেতে যেতে বলা হয়।
হোটেল কর্মকর্তাদের মতে, নতুন রেস্তোরাঁয় খাওয়ার অভিজ্ঞতা ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে।
স্থানীয় ইতিহাস ও পরিবেশ
হোটেলটি ইসের কাওয়াসাকি এলাকায় অবস্থিত, যা এডো যুগে পাইকারি বাণিজ্যের জন্য সমৃদ্ধ ছিল। এখনো সেখানে ঐতিহ্যবাহী মাচিয়া (কাঠের টাউনহাউস) ও গুদামঘর আছে। অতিথিরা হেঁটে স্থানীয় ইতিহাস উপভোগ করতে পারেন এবং আশপাশের ইজাকায়া বা পুরোনো রেস্তোরাঁয় খেতে পারেন।
স্থানীয় ব্যবসার লাভ
হোটেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যালু ম্যানেজমেন্ট জানায়, খাবার পরিবেশন না করার উদ্দেশ্য হলো পর্যটকদের স্থানীয় এলাকায় সময় ও খরচ বাড়ানো।
পাশের এক রেস্তোরাঁর মালিক হিরোতোশি কুদো বলেন, পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে এবং তিনি আশা করেন এই উদ্যোগ কাওয়াসাকিকে আরও জনপ্রিয় করবে। হোটেল ও স্থানীয় রেস্তোরাঁ মিলে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনাও করছে।
হাকুবা গ্রামের উদাহরণ
নাগানো প্রিফেকচারের হাকুবা গ্রাম স্কিইং ও হটস্প্রিংয়ের জন্য বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। এক বছরে এখানে প্রায় তিন লাখ পর্যটক আসেন।
সেখানে ঐতিহ্যবাহী হাকুবা মারুকিন রিওকানে সম্প্রতি নতুন রেস্তোরাঁ চালু হয়েছে। আগে মালিকের স্ত্রী সকালের ও রাতের খাবার তৈরি করতেন। এখন কাজের চাপ কমাতে ভবনের একটি অংশ রেস্তোরাঁ পরিচালকদের ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
রেস্তোরাঁ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান জুকুটোচি জানায়, ইন-এর ভেতর জায়গা ব্যবহার করায় খরচ কমেছে এবং ইন ভাড়া বাবদ আয় হচ্ছে।
আধুনিক সেবা ও স্থানীয় খাবার
রেস্তোরাঁয় স্মার্টফোনে কিউআর কোড স্ক্যান করে খাবার অর্ডার করা যায়। স্থানীয় শিনশু মিসো দিয়ে তৈরি রামেন ও হটপট এখানে জনপ্রিয়। মৌসুমে মাসে প্রায় তিন হাজার মানুষ এখানে খায়।
হাকুবার ছোট অতিথিশালার অনেক মালিক বয়সে বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন, আর কিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশিদের হাতে বিক্রি হচ্ছে।
জুকুটোচির সহ-প্রধান ইউতাকা ওয়াদা বলেন, রেস্তোরাঁটি ছোট ইন-মালিকদের জন্য সহায়ক হবে, যাতে তারা আবাসনের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। তিনি চান এই মডেল স্থানীয় সম্পদ রক্ষায় কার্যকর হোক।
তাকায়ামার পরিস্থিতি
গিফু প্রিফেকচারের তাকায়ামায়ও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় হোটেল সমিতি জানায়, মহামারির পর অনেক নতুন হোটেল খোলা হয়েছে যেগুলো খাবার পরিবেশন করে না।
কিন্তু সমস্যা হলো খাওয়ার জায়গার সীমাবদ্ধতা। জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় ভিড় এত বেশি হয় যে অনেক পর্যটক ঢুকতে পারেন না। স্থানীয় ছোট খাবারের দোকানগুলো মূলত স্থানীয়দের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ফলে অনেক পর্যটক কনভিনিয়েন্স স্টোর বা সুপারমার্কেট থেকে খাবার কিনছেন।
শ্রম সংকট ও ব্যবসায়িক পরিবর্তন
জাপান ট্যুরিজম এজেন্সির দুই হাজার সতেরোর জরিপে দেখা যায়, বত্রিশ শতাংশ হটস্প্রিং হোটেল ও ইন কেবল রুম সার্ভিস দিচ্ছে। বিদেশি পর্যটক-বান্ধব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ হার একান্ন দশমিক নয় শতাংশ।
টেইকোকু ডেটাব্যাংকের জরিপে দেখা যায়, ষাট শতাংশ হোটেল পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন কর্মী সংকটে ভুগছে।
মিতসুবিশি ইউএফজে রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটিংয়ের ইয়োশিনোরি তাকাতসু বলেন, মহামারির পর রুম-অনলি সার্ভিস বড় ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। বিদেশিরা বাইরে খেতে পছন্দ করেন, আর খাবার পরিবেশনের মুনাফা কম হওয়ায় হোটেলগুলো এতে আগ্রহী। বিশেষ করে রিওকানগুলোতে কক্ষে খাবার পরিবেশন শ্রম ও খরচের চাপ বাড়াচ্ছে। তাকাতসু মনে করেন, খাবার সার্ভিস বাদ দিলে অল্প কর্মী দিয়েও হোটেল চালানো সম্ভব।
জাপানের পর্যটন খাত দ্রুত বদলাচ্ছে। আবাসন ও খাবার আলাদা করার মাধ্যমে একদিকে হোটেলগুলো জনবল সংকট মোকাবিলা করছে, অন্যদিকে স্থানীয় রেস্তোরাঁ ও ব্যবসা নতুন সুযোগ পাচ্ছে। তবে খাওয়ার জায়গার সীমাবদ্ধতা অনেক পর্যটকের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। এই বাস্তবতাই ভবিষ্যতে জাপানের পর্যটন ব্যবসার রূপ নির্ধারণ করবে।