জটিল মেগাপ্রকল্প নয়, ছোট ছোট পদক্ষেপে বড় পরিবর্তন
চমকপ্রদ বুলেট ট্রেন বা বহু বিলিয়ন ডলারের টানেল ছাড়াই আমেরিকার রেলপথে ভ্রমণ সময় অনেকটা কমানো সম্ভব বলে জানালেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ আলন লেভি। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ম্যারন ইনস্টিটিউট অব আরবান ম্যানেজমেন্ট-এর এই ফেলো সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখিয়েছেন—সঠিক সময়সূচি, আধুনিক বৈদ্যুতিক ট্রেন এবং ট্র্যাক পরিবর্তনের মতো কিছু সহজ পদক্ষেপ নিলে বোস্টন থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব করিডরে রেলযাত্রা প্রায় হাই-স্পিড অভিজ্ঞতায় পরিণত হবে।
এতে বোস্টন থেকে নিউইয়র্ক যাত্রা আজকের সাড়ে তিন ঘণ্টার বদলে প্রায় দুই ঘণ্টায় শেষ করা সম্ভব হবে—আর খরচও হবে অতীতের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর এক-দশমাংশ।
মূল প্রস্তাবনা:
সময়সূচি ও পরিচালনা সংস্কার
সুইজারল্যান্ড ও জার্মানির মডেলের মতো ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে মিলিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ট্রেন ছাড়ার ব্যবস্থা।
অপ্রয়োজনীয় রুটভিত্তিক ভিন্নতা কমিয়ে সবার জন্য সহজবোধ্য সময়সূচি।
সময়ের অপচয় কমাতে যাত্রা তালিকায় অতিরিক্ত ‘প্যাডিং’ বা অবকাশ ২৫% থেকে কমিয়ে প্রায় ৭%-এ আনা।
স্টেশন-প্রবেশের গতি বৃদ্ধি
বর্তমানে নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রালে ট্রেন প্রবেশে সর্বোচ্চ গতি মাত্র ১০ মাইল।
এটি নিরাপদে ২৫ থেকে ৩৫ মাইলে বাড়ানো সম্ভব, ফলে শেষ মাইল পার হতে সময় ৬ মিনিট থেকে কমে আসবে মাত্র ২ মিনিটে।
বৈদ্যুতিক ট্রেনের ব্যবহার
দ্রুত গতি তোলা ও ব্রেক করার ক্ষমতা বেশি, ফলে স্থানীয় ও এক্সপ্রেস ট্রেনকে কাছাকাছি চালানো যাবে।
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমবে, প্রয়োজন হবে না বাড়তি ট্র্যাক বা বিশাল আঙিনা।
অতীতে ক্যালট্রেন প্রকল্পে ব্যর্থতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে
বিদ্যুতায়ন ব্যয়বহুল ধরা হলেও, লেভির মতে প্রকৃতপক্ষে এটি দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে আধুনিক প্রযুক্তি
অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতির কারণে।
পজিটিভ ট্রেন কন্ট্রোল (PTC) সিস্টেম এসব ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
ফলে সময়সূচি আরও আঁটসাঁট করা গেলেও যাত্রী নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
২০৩৫ সালের যাত্রী অভিজ্ঞতা কেমন হতে পারে?
লেভির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতের উত্তর-পূর্ব করিডরের যাত্রা হবে অনেক বেশি পরিচিত অথচ ভিন্ন অভিজ্ঞতা—
- বোস্টন–নিউইয়র্ক বা নিউইয়র্ক–ডি.সি. যাত্রা মাত্র ১ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটে।
- ভাড়া বর্তমান অ্যাসেলার তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক—প্রায় ৫৯ ডলার প্রতি পথে।
- শহরকেন্দ্রের স্টেশন থেকে সরাসরি যাত্রা, টিকিট কিংবা অ্যাপে আগেই জানানো থাকবে প্ল্যাটফর্ম নম্বর।
- মসৃণ যাত্রা, আরামদায়ক বৈদ্যুতিক ট্রেন, সময়মতো ছাড়ার নিশ্চয়তা।
- সবচেয়ে বড় পরিবর্তন: দীর্ঘপথের ট্রেনযাত্রা হবে সবার কাছে স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন অভ্যাস।
কেন এই পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ
- ব্যয়বহুল টানেল বা ম্যাগলেভের মতো চটকদার প্রযুক্তি ছাড়াই বাস্তবায়নযোগ্য।
- যাত্রীদের কাছে আসল বিষয় হলো নির্ভরযোগ্য সময়সূচি, ট্রেনের নাকের আকৃতি নয়।
- ইউরোপ ও এশিয়ার মতো আমেরিকাও এভাবে ধাপে ধাপে রেলকে আধুনিক করে তুলতে পারবে।
- ছোট ছোট সংস্কার একত্রে মিলে তৈরি করবে বিশাল পরিবর্তন—যা উত্তর-পূর্ব করিডরকে বিশ্বমানের রেলপথে রূপান্তরিত করতে পারে।