০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
২০২৯-এ ফিরছে অ্যানিমেটেড হিট ‘কে-পপ ডেমন হান্টার্স’ ‘টাইটানিক’-এর নেপথ্যের গল্প: চলচ্চিত্র প্রযোজকের স্মৃতিচারণ অভিষেক শর্মার রেকর্ড গড়া ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জয় ভারতের জেন জি এখন সুগন্ধি খুঁজছে আলোকে শিল্পে রূপ দেওয়া লিন্ডসি অ্যাডেলম্যান পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ ‘ইনল্যান্ড টাইপ্যান’: প্রাণঘাতী বিষ, শান্ত স্বভাবের এই সরীসৃপের অজানা বিস্ময় কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে অসুস্থ হয়ে পুলিশের মৃত্যু রবিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা ভিয়েতনামী ঔপন্যাসিক ড. ফান কুয়ে মাই শারজাহ বইমেলায় পাঠকদের মুগ্ধ করলেন মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক

রহস্যময় ‘ডার্ক ডিএনএ’ আর নাচের মাকড়সার বৈচিত্র্যের গোপন রহস্য

অস্ট্রেলিয়ার রঙিন নাচের মাকড়সা

অস্ট্রেলিয়ার নাচের মাকড়সা শুধু রঙের ঝলকানি বা নাচের ভঙ্গিতেই বিশেষ নয়। এদের বৈচিত্র্যও বিস্ময়কর। একশরও বেশি প্রজাতির পিকক স্পাইডার পাওয়া যায়, অথচ বেশিরভাগ প্রাণীর মাত্র পাঁচ-দশটি প্রজাতি থাকে।

রহস্যময় ‘ডার্ক ডিএনএ’

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ বৈচিত্র্যের মূল কারণ হলো এক ধরনের রহস্যময় জিনগত অংশ, যাকে বলা হচ্ছে ‘ডার্ক ডিএনএ’। এ ডিএনএ প্রজাতিকে দ্রুত পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে এবং নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে।

সাঙ্গার ইনস্টিটিউটের গবেষক জোনাহ ওয়াকার বলেন, “আমরা জানতে চাই, কীভাবে এরা এত বৈচিত্র্যময় হলো। প্রকৃতিতে এত ভিন্ন ভিন্ন রূপের অস্তিত্ব: গাছ, পশু, পাখি—সবই এই প্রক্রিয়ার ফল। নাচের মাকড়সা হলো এর চরম উদাহরণ।”

রঙ, নাচ আর গান

পিকক স্পাইডার খুব ছোট—পিনের মাথার সমান আকার। এদের নাম এসেছে উজ্জ্বল রঙিন পেটের জন্য। প্রজননকালে পুরুষ মাকড়সারা পায়ের সাহায্যে ড্রাম বাজানোর মতো শব্দ করে, গান গায় আর ছন্দে ছন্দে নাচতে নাচতে রঙিন পেট প্রদর্শন করে। একেক প্রজাতির গান, নাচ আর রঙিন নকশা ভিন্ন ভিন্ন।

গবেষকের যাত্রা

জোনাহ ওয়াকার একসময় মাকড়সাকে ভয় পেতেন। কিন্তু বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তাকে ভয় কাটিয়ে তুলেছিল। তিনি ড. জোয়ানা মেয়ার ও আন্তর্জাতিক গবেষক দলের সাথে মিলে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রতিটি প্রজাতি সংগ্রহ করেছেন।

তারা প্রতিটি মাকড়সার আচরণ, নাচের ধরন ও গানের নোট বিশ্লেষণ করেছেন। এরপর এসব তথ্যকে তাদের ডিএনএর সাথে তুলনা করে দেখেছেন।

ডার্ক ডিএনএর ভূমিকা

ডিএনএর কিছু অংশ নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ঠিক করে—যেমন মানুষের উচ্চতা বা চোখের রঙ। এগুলোকে জিন বলা হয়। কিন্তু ডিএনএর বড় অংশ জিন নয়, যার কাজ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও পরিষ্কারভাবে জানেন না। গবেষকদের ধারণা, এই ‘ডার্ক ডিএনএ’ই পিকক স্পাইডারের বৈচিত্র্যের আসল চালিকা শক্তি।

আশ্চর্যজনকভাবে, মানুষের তুলনায় মাকড়সাদের ডার্ক ডিএনএ তিনগুণ বেশি।

অন্যান্য প্রজাতির সাথে তুলনা

কিছু প্রজাপতি ও মথেরও বিপুল সংখ্যক প্রজাতি রয়েছে। ড. মেয়ার ইতিমধ্যেই এক হাজার প্রজাতির প্রজাপতি ও মথের ডিএনএ উন্মোচন করেছেন। তবে নাচের মাকড়সা, প্রজাপতি বা মথ—এসব কেবল শুরু।

পৃথিবীর বৃহত্তম জেনেটিক প্রকল্প

বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর প্রতিটি গাছ, প্রাণী ও ছত্রাকের ডিএনএ কোড উন্মোচনের পরিকল্পনা নিয়েছেন আগামী ১০ বছরের মধ্যে। এর নাম ‘আর্থ বায়োজিনোম প্রজেক্ট’।

এ পর্যন্ত ৩ হাজার প্রজাতির ডিএনএ উন্মোচন করা হয়েছে। আগামী বছর ১০ হাজার প্রজাতি এবং পুরো প্রকল্পে মোট ১৮,০০,০০০ জীবন্ত প্রজাতির ডিএনএ বিশ্লেষণ করার লক্ষ্য রয়েছে।

ড. মেয়ার বলেন, “সব জীবের ডিএনএ মিল রয়েছে। এগুলো বুঝতে পারলেই আমরা জানতে পারব, জিন কীভাবে কাজ করে, ডার্ক ডিএনএর ভূমিকা কী—এমনকি আমাদের নিজেদের সম্পর্কেও।”

সম্ভাবনা

এই প্রকল্প সফল হলে জীবজগতের বিবর্তন, বৈচিত্র্য ও পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে অভূতপূর্ব জ্ঞান পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

জনপ্রিয় সংবাদ

২০২৯-এ ফিরছে অ্যানিমেটেড হিট ‘কে-পপ ডেমন হান্টার্স’

রহস্যময় ‘ডার্ক ডিএনএ’ আর নাচের মাকড়সার বৈচিত্র্যের গোপন রহস্য

০৬:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অস্ট্রেলিয়ার রঙিন নাচের মাকড়সা

অস্ট্রেলিয়ার নাচের মাকড়সা শুধু রঙের ঝলকানি বা নাচের ভঙ্গিতেই বিশেষ নয়। এদের বৈচিত্র্যও বিস্ময়কর। একশরও বেশি প্রজাতির পিকক স্পাইডার পাওয়া যায়, অথচ বেশিরভাগ প্রাণীর মাত্র পাঁচ-দশটি প্রজাতি থাকে।

রহস্যময় ‘ডার্ক ডিএনএ’

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ বৈচিত্র্যের মূল কারণ হলো এক ধরনের রহস্যময় জিনগত অংশ, যাকে বলা হচ্ছে ‘ডার্ক ডিএনএ’। এ ডিএনএ প্রজাতিকে দ্রুত পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে এবং নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে।

সাঙ্গার ইনস্টিটিউটের গবেষক জোনাহ ওয়াকার বলেন, “আমরা জানতে চাই, কীভাবে এরা এত বৈচিত্র্যময় হলো। প্রকৃতিতে এত ভিন্ন ভিন্ন রূপের অস্তিত্ব: গাছ, পশু, পাখি—সবই এই প্রক্রিয়ার ফল। নাচের মাকড়সা হলো এর চরম উদাহরণ।”

রঙ, নাচ আর গান

পিকক স্পাইডার খুব ছোট—পিনের মাথার সমান আকার। এদের নাম এসেছে উজ্জ্বল রঙিন পেটের জন্য। প্রজননকালে পুরুষ মাকড়সারা পায়ের সাহায্যে ড্রাম বাজানোর মতো শব্দ করে, গান গায় আর ছন্দে ছন্দে নাচতে নাচতে রঙিন পেট প্রদর্শন করে। একেক প্রজাতির গান, নাচ আর রঙিন নকশা ভিন্ন ভিন্ন।

গবেষকের যাত্রা

জোনাহ ওয়াকার একসময় মাকড়সাকে ভয় পেতেন। কিন্তু বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তাকে ভয় কাটিয়ে তুলেছিল। তিনি ড. জোয়ানা মেয়ার ও আন্তর্জাতিক গবেষক দলের সাথে মিলে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রতিটি প্রজাতি সংগ্রহ করেছেন।

তারা প্রতিটি মাকড়সার আচরণ, নাচের ধরন ও গানের নোট বিশ্লেষণ করেছেন। এরপর এসব তথ্যকে তাদের ডিএনএর সাথে তুলনা করে দেখেছেন।

ডার্ক ডিএনএর ভূমিকা

ডিএনএর কিছু অংশ নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ঠিক করে—যেমন মানুষের উচ্চতা বা চোখের রঙ। এগুলোকে জিন বলা হয়। কিন্তু ডিএনএর বড় অংশ জিন নয়, যার কাজ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও পরিষ্কারভাবে জানেন না। গবেষকদের ধারণা, এই ‘ডার্ক ডিএনএ’ই পিকক স্পাইডারের বৈচিত্র্যের আসল চালিকা শক্তি।

আশ্চর্যজনকভাবে, মানুষের তুলনায় মাকড়সাদের ডার্ক ডিএনএ তিনগুণ বেশি।

অন্যান্য প্রজাতির সাথে তুলনা

কিছু প্রজাপতি ও মথেরও বিপুল সংখ্যক প্রজাতি রয়েছে। ড. মেয়ার ইতিমধ্যেই এক হাজার প্রজাতির প্রজাপতি ও মথের ডিএনএ উন্মোচন করেছেন। তবে নাচের মাকড়সা, প্রজাপতি বা মথ—এসব কেবল শুরু।

পৃথিবীর বৃহত্তম জেনেটিক প্রকল্প

বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর প্রতিটি গাছ, প্রাণী ও ছত্রাকের ডিএনএ কোড উন্মোচনের পরিকল্পনা নিয়েছেন আগামী ১০ বছরের মধ্যে। এর নাম ‘আর্থ বায়োজিনোম প্রজেক্ট’।

এ পর্যন্ত ৩ হাজার প্রজাতির ডিএনএ উন্মোচন করা হয়েছে। আগামী বছর ১০ হাজার প্রজাতি এবং পুরো প্রকল্পে মোট ১৮,০০,০০০ জীবন্ত প্রজাতির ডিএনএ বিশ্লেষণ করার লক্ষ্য রয়েছে।

ড. মেয়ার বলেন, “সব জীবের ডিএনএ মিল রয়েছে। এগুলো বুঝতে পারলেই আমরা জানতে পারব, জিন কীভাবে কাজ করে, ডার্ক ডিএনএর ভূমিকা কী—এমনকি আমাদের নিজেদের সম্পর্কেও।”

সম্ভাবনা

এই প্রকল্প সফল হলে জীবজগতের বিবর্তন, বৈচিত্র্য ও পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে অভূতপূর্ব জ্ঞান পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।