০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৪১)

সামান্য পিপীলিকাকে পদদলিত করিলে সেও দংশন করিতে উদ্যত হয়। সুতরাং সেই সমস্ত ভীষণ অত্যাচারে জর্জরিত হইয়া উত্তরবঙ্গের প্রজাগণ ঘোর বিদ্রোহের অবতারণা করিল। তাহারা কিছুতেই করপ্রদানে স্বীকৃত হইল না; অবশেষে তাহারা অস্ত্রধারণ করিয়া, দেবীসিংহের অনুচরবর্গকে প্রতিনিয়ত আক্রমণ করিতে লাগিল। ১৭৮৩খৃঃ অব্দের জানুয়ারী মাসে কাজীর হাট, কাকিনা, টেপা ও ফতেপুর চাকলার প্রজারা বিদ্রোহী হইয়া, কুচবিহার ও দিনাজপুরের প্রজাদিগকে তাহাদের সঙ্গে যোগ দিবার জন্য আহ্বান করে।

নায়েব, গোমস্তা ও অন্যান্ত কর্মচারী দিগকে যেখানে দেখিতে পাইল, সেইখানে হত্যা করিল। টেপা প্রভৃতি স্থানের নায়েব তাহাদের হস্তে প্রাণ পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হয়। ইহাদের মধ্যে নুরুল উদ্দীন নামে একজন আপ-নাকে নবাব বলিয়া ঘোষণা করিয়া, দয়াশীল নামে আর একজনকে জোহার দেওয়ান নিযুক্ত করে। এইরূপে তাহারা সমস্ত প্রদেশে ভীষণ বিদ্রোহের অভিনয় দেখাইয়াছিল। দেবীসিংহ অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া, রঙ্গপুরের তদানীন্তন কালেক্টর গুড ল্যাডের শরণাপন্ন হইলেন। আমরা পূর্ব্বে বলিয়াছি যে, গুল্যাডের সহিত দেবীসিংহের বিলক্ষণ বন্ধুতা ছিল।

তিনি দেবী সিংহের অনুরোধে প্রজাদিগকে দমন করিবার জন্য কয়েক দল সিপাহী প্রেরণ করিলেন। লেপ্টনান্ট ম্যাকডোনাল্ড উত্তর দিকে এবং আর একজন ‘সুবেদার দক্ষিণ দিকে প্রেরিত হইল। প্রজারা ইহা শুনিয়া, ডিমলার জমিদার গৌরমোহন চৌধুরীর নিকট আশ্রয় লইতে যায়; কিন্তু চৌধুরী তাহাদিগকে রক্ষা করিবার চেষ্টা করায় একটা ভীষণ কলহ উপস্থিত হয়। তাহাতে গৌরমোহনের ‘মৃত্যু ঘটে। কোম্পানীর সৈন্যগণ যাহাকে সম্মুখে দেখিতে পাইল,’ তাঁহাকেই বন্য-পশুর ন্যায় গুলি করিতে করিতে অগ্রসর হইল।

মৌগলহাট ও পাটগ্রাম নামক স্থানে তাহাদিগের সহিত প্রজাদিগের দুইটি ক্ষুদ্র যুদ্ধ হইয়া-ছিল। মোগলহাটের যুদ্ধে দয়াশীল নিহত ও নুরুল উদ্দীন গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং সেই আঘাতেই অল্পদিন পরেই তাহার ইহ- জীবনের লীলা শেষ হয়। দলে দলে প্রজাদিগকে বন্দী করিয়া, কোম্পানীর সিপাহীগণ বিজয় গৌরবে রঙ্গপুরে আসিয়া উপস্থিত হইল। দেবীসিংহের অত্যাচার হইতে প্রজাগণের যাহা কিছু রক্ষা’ পাইয়াছিল, এক্ষণে সমস্তই লুন্ঠিত হইল! ভগ্নাবশিষ্ট দুই একখানি কুটীর ভগ্নস্তূপের কলেবর বৃদ্ধি করিয়া, কোম্পানীর শান্তিময় রাজত্বের ‘পরিচয় দিতে লাগিল!

 

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৪১)

১১:০০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সামান্য পিপীলিকাকে পদদলিত করিলে সেও দংশন করিতে উদ্যত হয়। সুতরাং সেই সমস্ত ভীষণ অত্যাচারে জর্জরিত হইয়া উত্তরবঙ্গের প্রজাগণ ঘোর বিদ্রোহের অবতারণা করিল। তাহারা কিছুতেই করপ্রদানে স্বীকৃত হইল না; অবশেষে তাহারা অস্ত্রধারণ করিয়া, দেবীসিংহের অনুচরবর্গকে প্রতিনিয়ত আক্রমণ করিতে লাগিল। ১৭৮৩খৃঃ অব্দের জানুয়ারী মাসে কাজীর হাট, কাকিনা, টেপা ও ফতেপুর চাকলার প্রজারা বিদ্রোহী হইয়া, কুচবিহার ও দিনাজপুরের প্রজাদিগকে তাহাদের সঙ্গে যোগ দিবার জন্য আহ্বান করে।

নায়েব, গোমস্তা ও অন্যান্ত কর্মচারী দিগকে যেখানে দেখিতে পাইল, সেইখানে হত্যা করিল। টেপা প্রভৃতি স্থানের নায়েব তাহাদের হস্তে প্রাণ পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হয়। ইহাদের মধ্যে নুরুল উদ্দীন নামে একজন আপ-নাকে নবাব বলিয়া ঘোষণা করিয়া, দয়াশীল নামে আর একজনকে জোহার দেওয়ান নিযুক্ত করে। এইরূপে তাহারা সমস্ত প্রদেশে ভীষণ বিদ্রোহের অভিনয় দেখাইয়াছিল। দেবীসিংহ অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া, রঙ্গপুরের তদানীন্তন কালেক্টর গুড ল্যাডের শরণাপন্ন হইলেন। আমরা পূর্ব্বে বলিয়াছি যে, গুল্যাডের সহিত দেবীসিংহের বিলক্ষণ বন্ধুতা ছিল।

তিনি দেবী সিংহের অনুরোধে প্রজাদিগকে দমন করিবার জন্য কয়েক দল সিপাহী প্রেরণ করিলেন। লেপ্টনান্ট ম্যাকডোনাল্ড উত্তর দিকে এবং আর একজন ‘সুবেদার দক্ষিণ দিকে প্রেরিত হইল। প্রজারা ইহা শুনিয়া, ডিমলার জমিদার গৌরমোহন চৌধুরীর নিকট আশ্রয় লইতে যায়; কিন্তু চৌধুরী তাহাদিগকে রক্ষা করিবার চেষ্টা করায় একটা ভীষণ কলহ উপস্থিত হয়। তাহাতে গৌরমোহনের ‘মৃত্যু ঘটে। কোম্পানীর সৈন্যগণ যাহাকে সম্মুখে দেখিতে পাইল,’ তাঁহাকেই বন্য-পশুর ন্যায় গুলি করিতে করিতে অগ্রসর হইল।

মৌগলহাট ও পাটগ্রাম নামক স্থানে তাহাদিগের সহিত প্রজাদিগের দুইটি ক্ষুদ্র যুদ্ধ হইয়া-ছিল। মোগলহাটের যুদ্ধে দয়াশীল নিহত ও নুরুল উদ্দীন গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং সেই আঘাতেই অল্পদিন পরেই তাহার ইহ- জীবনের লীলা শেষ হয়। দলে দলে প্রজাদিগকে বন্দী করিয়া, কোম্পানীর সিপাহীগণ বিজয় গৌরবে রঙ্গপুরে আসিয়া উপস্থিত হইল। দেবীসিংহের অত্যাচার হইতে প্রজাগণের যাহা কিছু রক্ষা’ পাইয়াছিল, এক্ষণে সমস্তই লুন্ঠিত হইল! ভগ্নাবশিষ্ট দুই একখানি কুটীর ভগ্নস্তূপের কলেবর বৃদ্ধি করিয়া, কোম্পানীর শান্তিময় রাজত্বের ‘পরিচয় দিতে লাগিল!