০২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অফ-সিজনে তরমুজ চাষে নড়াইলের কৃষকদের বাম্পার লাভ

নতুন সময়ে নতুন সম্ভাবনা

সেপ্টেম্বরের গরম রোদে নড়াইলের মাঠ এখন ভরপুর টসটসে লাল তরমুজে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে তরমুজের মৌসুম থাকে। কিন্তু এবার কৃষকেরা মৌসুমের বাইরে তরমুজ চাষ করে পেয়েছেন দারুণ সাফল্য ও লাভ।

বর্তমানে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এই দাম কৃষকদের জন্য অফ-সিজন চাষকে এক সোনালী সুযোগে পরিণত করেছে।

মাঠে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা

গ্রামের মাঠে এখন শুধু ক্রেতারাই আসছেন না, আসছেন কৌতূহলী মানুষও। বাঁশের তৈরি খুঁটির সাথে ঝোলানো জালের ভেতরে তরমুজ দেখে অনেকে মুগ্ধ হচ্ছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ আবার টিকটক বানাচ্ছেন।

সরকারি সহায়তা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভূমিকা

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ২৩ হেক্টর জমিতে অফ-সিজন তরমুজ চাষ হয়েছে—সদর উপজেলায় ১০ হেক্টর, লোহাগড়ায় ২ হেক্টর এবং কালিয়ায় ১১ হেক্টর।

কৃষি দপ্তরের কারিগরি সহায়তা ও প্রণোদনা পেয়ে অনেক নতুন কৃষকই এ চাষে যুক্ত হয়েছেন। এতে তারা পেয়েছেন খরচ সাশ্রয়ী এবং লাভজনক ফলন।

মির্জাপুরের মাঠে প্রথম পরীক্ষামূলক চাষ

সদর উপজেলার বিশালী ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এই সাফল্যের চিত্র। স্থানীয় কৃষক আকিনুর মাল্লিক মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় ২০০টি তরমুজ গাছ লাগিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এটা আমার প্রথম চেষ্টা। ৩৩ শতক জমিতে কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার আর অন্যান্য উপকরণ পেয়েছি। দামও ভালো, ক্রেতারা সরাসরি মাঠ থেকে কিনে নিচ্ছে। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে চাষ করব।”

কৃষক থেকে দর্শনার্থীর আগ্রহ

তরমুজ চাষ এখন স্থানীয়দের জন্য বিনোদনেরও জায়গা হয়ে উঠেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে মাঠে ঘুরতে আসছেন। সুমা আক্তার নামের এক দর্শনার্থী বলেন, “আগে কখনো এখানে তরমুজ চাষ হয়নি। এখন এটা ঘোরার জায়গা হয়ে গেছে। আমরা সেলফি তুলি, টিকটক করি।”

আকিনুরের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরেক কৃষক জাকির হোসেনও জানালেন, আগামী মৌসুমে তিনি এই পদ্ধতিতে চাষ করতে চান।

কালিয়ার অভিজ্ঞ চাষির সাফল্য

কালিয়া উপজেলার অভিজ্ঞ চাষি প্রদীপ বর্মণ গত তিন বছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন। এ বছর তিনি ৯৫ একর মাছের ঘেরে প্রায় ১০ হাজার চারা রোপণ করেছেন, যার মধ্যে ৭ হাজারই তরমুজ।

তিনি বলেন, “ফলন দারুণ হয়েছে। বাংলালিংক জাতের তরমুজ প্রতিটি ৫-৭ কেজি ওজন হয়, আর তৃপ্তি জাতের হয় ২-৩ কেজি। আমি ৫-৬ লাখ টাকা খরচ করেছি, কিন্তু ১২ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।”

কৃষি কর্মকর্তাদের আশাবাদ

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকনুজ্জামান জানান, কৃষকদের নিয়মিত বীজ, সার এবং মাঠ পর্যায়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “এই সহায়তার কারণে প্রতিবছর চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের আশাবাদ, এ ধারা অব্যাহত থাকলে নড়াইল খুব শিগগিরই অফ-সিজন তরমুজ চাষের এক সমৃদ্ধ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। এটি শুধু কৃষকদের আয়ই বাড়াবে না, জেলার কৃষি অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।

x

অফ-সিজনে তরমুজ চাষে নড়াইলের কৃষকদের বাম্পার লাভ

১২:২০:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নতুন সময়ে নতুন সম্ভাবনা

সেপ্টেম্বরের গরম রোদে নড়াইলের মাঠ এখন ভরপুর টসটসে লাল তরমুজে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে তরমুজের মৌসুম থাকে। কিন্তু এবার কৃষকেরা মৌসুমের বাইরে তরমুজ চাষ করে পেয়েছেন দারুণ সাফল্য ও লাভ।

বর্তমানে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এই দাম কৃষকদের জন্য অফ-সিজন চাষকে এক সোনালী সুযোগে পরিণত করেছে।

মাঠে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা

গ্রামের মাঠে এখন শুধু ক্রেতারাই আসছেন না, আসছেন কৌতূহলী মানুষও। বাঁশের তৈরি খুঁটির সাথে ঝোলানো জালের ভেতরে তরমুজ দেখে অনেকে মুগ্ধ হচ্ছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ আবার টিকটক বানাচ্ছেন।

সরকারি সহায়তা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভূমিকা

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ২৩ হেক্টর জমিতে অফ-সিজন তরমুজ চাষ হয়েছে—সদর উপজেলায় ১০ হেক্টর, লোহাগড়ায় ২ হেক্টর এবং কালিয়ায় ১১ হেক্টর।

কৃষি দপ্তরের কারিগরি সহায়তা ও প্রণোদনা পেয়ে অনেক নতুন কৃষকই এ চাষে যুক্ত হয়েছেন। এতে তারা পেয়েছেন খরচ সাশ্রয়ী এবং লাভজনক ফলন।

মির্জাপুরের মাঠে প্রথম পরীক্ষামূলক চাষ

সদর উপজেলার বিশালী ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এই সাফল্যের চিত্র। স্থানীয় কৃষক আকিনুর মাল্লিক মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় ২০০টি তরমুজ গাছ লাগিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এটা আমার প্রথম চেষ্টা। ৩৩ শতক জমিতে কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার আর অন্যান্য উপকরণ পেয়েছি। দামও ভালো, ক্রেতারা সরাসরি মাঠ থেকে কিনে নিচ্ছে। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে চাষ করব।”

কৃষক থেকে দর্শনার্থীর আগ্রহ

তরমুজ চাষ এখন স্থানীয়দের জন্য বিনোদনেরও জায়গা হয়ে উঠেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে মাঠে ঘুরতে আসছেন। সুমা আক্তার নামের এক দর্শনার্থী বলেন, “আগে কখনো এখানে তরমুজ চাষ হয়নি। এখন এটা ঘোরার জায়গা হয়ে গেছে। আমরা সেলফি তুলি, টিকটক করি।”

আকিনুরের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরেক কৃষক জাকির হোসেনও জানালেন, আগামী মৌসুমে তিনি এই পদ্ধতিতে চাষ করতে চান।

কালিয়ার অভিজ্ঞ চাষির সাফল্য

কালিয়া উপজেলার অভিজ্ঞ চাষি প্রদীপ বর্মণ গত তিন বছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন। এ বছর তিনি ৯৫ একর মাছের ঘেরে প্রায় ১০ হাজার চারা রোপণ করেছেন, যার মধ্যে ৭ হাজারই তরমুজ।

তিনি বলেন, “ফলন দারুণ হয়েছে। বাংলালিংক জাতের তরমুজ প্রতিটি ৫-৭ কেজি ওজন হয়, আর তৃপ্তি জাতের হয় ২-৩ কেজি। আমি ৫-৬ লাখ টাকা খরচ করেছি, কিন্তু ১২ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।”

কৃষি কর্মকর্তাদের আশাবাদ

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকনুজ্জামান জানান, কৃষকদের নিয়মিত বীজ, সার এবং মাঠ পর্যায়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “এই সহায়তার কারণে প্রতিবছর চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের আশাবাদ, এ ধারা অব্যাহত থাকলে নড়াইল খুব শিগগিরই অফ-সিজন তরমুজ চাষের এক সমৃদ্ধ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। এটি শুধু কৃষকদের আয়ই বাড়াবে না, জেলার কৃষি অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।

x