অদ্ভুত এক ঘনক থেকে আধুনিক রূপান্তর
মিশিগান লেকের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা একসময়কার সাদা কিউব আকৃতির বাড়ি, যেটিকে স্থানীয়রা ‘সুগার কিউব’ নামে চিনত, এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। একসময় এখানে ছিল রাতভর পার্টি আর হট্টগোলের গুঞ্জন। আজ সেটি ইউরোপীয় ধাঁচে সাজানো পরিশীলিত আধুনিক আবাস।
প্রথম পরিচয়
গ্রেগ পারসন্সের কাছে ‘সুগার কিউব’ প্রথম শোনা নাম ১৯৯৬ সালে। বয়স তখন ২৮। সাগাটাকের শিল্পনগরীর মতো সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় বসবাসের সময় তিনি শুনতেন এর গল্প—অদ্ভুত আকৃতির সাদা কিউব, ভেতরে রাতভর পার্টি, এমনকি বিশাল রুফটপ হট টাব। তবে কোনোদিন আমন্ত্রণ পাননি তিনি।
নতুন পরিকল্পনা ও কেনা
দীর্ঘ দুই দশক নিউইয়র্ক ও সান ফ্রান্সিসকোতে কাটিয়ে পারসন্স আবার সাগাটাকে ফিরে আসেন। আধুনিক একটি বাড়ি কেনার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তিনি ঘুরে দেখেন পুরনো ‘সুগার কিউব’। ১৯৮৯ সালে নির্মিত এই অস্বাভাবিক বাড়িটি তার কাছে অন্যরকম মনে হয়। ২০১৬ সালে তিনি এটি কিনে নেন ৭ লাখ ২০ হাজার ডলারে। এরপরের ছয় বছরে ১৫ লাখ ডলার ব্যয় করে সম্পূর্ণ রূপান্তর করেন।
স্থপতির ছোঁয়া
বাড়ির মূল গঠন ছিল দুর্বল—পচা দেয়াল, অগোছালো রান্নাঘর, ভুলভাবে বসানো জানালা। এ অবস্থায় দায়িত্ব পান মিনেসোটা-ভিত্তিক স্থপতি ডেভিড সালমেলা। তিনি বাড়িকে ইউরোপীয় আধুনিকতার রূপ দেন। উজ্জ্বল হলুদ সিঁড়ি হয়ে ওঠে সেই রূপান্তরের প্রতীক।
নকশার পরিবর্তন
সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল বসার ঘরের ছোট ছোট কাঁচের জানালা, যেগুলো লেকের দৃশ্য আড়াল করত। সালমেলা সেগুলো ভেঙে চারটি বড় কাঁচ বসান, যেখান থেকে সরাসরি দেখা যায় লেক মিশিগান। ঘরে প্রবেশ করলেই ঋতুর পরিবর্তন অনুভব করা যায়।
রান্নাঘরকে খোলা রাখা হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন স্লিপিং পোর্চ। বসার ঘরের ওপর ক্যান্টিলিভার ব্রিজ বানানো হয়েছে, যা এখন পারসন্সের অফিস। সেখান থেকে ডেকের দরজা খুলে বাইরে বসে কাজ করার সুবিধা মিলেছে, যেন সৈকত ঘেঁষে বসে কাজ করছেন।
পারিবারিক সংযোগ
অবিবাহিত হলেও পারসন্স নিচতলা সাজিয়েছেন মায়ের জন্য। আগে এক ঘণ্টা দূরের কন্ডোতে থাকতেন তিনি। এছাড়াও, গ্যারেজের ওপর ছোট অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন পারসন্সের এক বন্ধু। পারসন্সের কথা, তিনি একসঙ্গে বসবাস করতে চান না, তবে কাছাকাছি প্রিয় মানুষদের রাখতে চান।
আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা
পুরনো আসবাবপত্রই রেখেছেন পারসন্স। যেমন উজ্জ্বল নীল USM Haller ক্যাবিনেট বা ৩০ বছরের পুরনো ইমস শেজ লাউঞ্জ। তার মতে, নকশার সঙ্গে সময় কাটানোই আনন্দের। খুব তাড়াহুড়া করলে বাড়িটি কেবল দোকান থেকে কেনা জিনিসে ভরা মনে হয়।
বাইরের রূপ
বাড়ির বাইরের অংশে ব্যবহার করা হয়েছে কালো পাইন-টার্ড কাঠ। তবে নামের প্রতি সম্মান জানিয়ে রাখা হয়েছে দুটি সাদা ঘনক। একটি প্রধান প্রবেশদ্বার হিসেবে, আরেকটি লেকমুখী—যেখানে ওপরতলায় ডেক ও ফায়ারপ্লেস, আর নিচতলায় পাঠাগার সদৃশ ছায়াঘেরা জায়গা এবং একটি ছোট হাইড্রোথেরাপি স্পা। এটি আর কোনো পার্টি-সাইজের হট টাব নয়।
শেষ কথা
একসময়কার পার্টি হাউস আজ এক পরিশীলিত আধুনিক ইউরোপীয় আবাস। স্থাপত্যের এই পরিবর্তন শুধু একটি বাড়ির গল্প নয়, বরং গ্রেগ পারসন্সের জীবনধারা, পারিবারিক সংযোগ এবং নান্দনিক রুচির প্রতিফলন।