রাজধানীর কিচেন মার্কেটগুলোতে শুক্রবার সকাল থেকে সবজি, মাছ ও ডিমের দামে চড়াভাত চলছে। কাঁচা মরিচ, বেগুন, টমেটো থেকে শুরু করে মাঝারি আকারের মাছ—সবকিছুর দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। ডিমের ডজনপ্রতি দামও ছুঁয়েছে ১৩৫-১৫০ টাকা। বাজারে আসা ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, মাসের আয় শেষ হওয়ার আগেই খরচ ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, খরচ ও সরবরাহ সংকটের চাপ তাদেরও দমবন্ধ করে তুলেছে।
বাজারের বাস্তব চিত্র
আজ হাতিরপুল, মালিবাগ ও বাড্ডা বাজার ঘুরে দেখা গেছে—
- কাঁচা মরিচ কেজিতে ১৬০-১৮০ টাকা, আগে ছিল ১২০-১৪০।
- বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকা কেজি, এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০-৯০।
- টমেটোর কেজি ১৫০-১৭০ টাকা।
- মাঝারি রুই ৩৫০-৪৫০ টাকা, পাঙাস ২০০-২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০-২৮০ টাকা কেজি।
- ডিমের ডজনপ্রতি দাম এখন ১৩৫-১৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০।
ক্রেতাদের দীর্ঘশ্বাস
মালিবাগ বাজারে স্কুলশিক্ষিকা ইয়াসমিন আরা ক্ষোভ ঝাড়লেন:
“বেগুনের দাম শুনে আকাশ থেকে পড়েছি। এক সপ্তাহেই কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে গেল কীভাবে? শেষমেশ বেগুন না নিয়ে পেঁপে কিনতে হলো।”
অন্য এক ক্রেতা, মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী, কষ্টের হাসি দিয়ে বললেন:
“আগে দুই কেজি সবজি কিনতাম, এখন এক কেজি কিনতে হচ্ছে। আবার কোনোটা বাদও দিতে হয়। মাসের বেতন শেষ হওয়ার আগেই পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে।”
বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা
সবজি বিক্রেতা করিম মিয়া বললেন,
“ভাই, দোষ আমাদের নয়। বৃষ্টি আর রাস্তার ঝামেলায় সবজি ঠিকমতো আসে না। পাইকারিতে দাম বাড়ছে, আমরা তো বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছি।”
ডিম বিক্রেতা হোসেন আলীর যুক্তি,
“খামারে ফিড ও শ্রম খরচ বেড়ে গেছে। খরচ না উঠলে কম দামে বিক্রি করা সম্ভব না।”
বিক্রেতাদেরও চাপ বাড়ছে, কারণ ক্রেতা কমে গেলে বিক্রি কমে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সংগ্রাম
এই দামবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনে।
- আগে যেখানে সপ্তাহে দুই-তিন দিন মাছ থাকত, এখন হয়তো শুক্রবারেই কেনা সম্ভব হচ্ছে।
- ডিমের ঝোল, শিশুদের প্রিয় খাবার, সেটাও সীমিত হয়ে গেছে।
- অনেক পরিবার মাংস বাদ দিয়ে শুধু চাল-ডাল আর অল্প কিছু সবজি দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
একজন মা অসহায় কণ্ঠে বললেন:
“বাজারে গিয়ে সন্তানকে বোঝাতে হয় কেন মাছ কিনতে পারছি না। এর কষ্ট শুধু মায়েরাই বোঝেন।”
অর্থনীতি থেকে আবেগে
বাজারের দাম শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, মানুষের জীবনের চাপের প্রতিচ্ছবি। সংসারের বাজেট ভেঙে পড়ছে, মানুষ মানসিক উদ্বেগে ভুগছে। বাজারে ক্রেতাদের মুখে মুখে একই প্রশ্ন—“আজ আবার কত দাম বেড়েছে?”
নীতিনির্ধারণীদের করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন—
- বাজারে সিন্ডিকেট ঠেকাতে শক্ত নজরদারি দরকার।
- কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনব্যবস্থা উন্নত করা জরুরি।
- দ্রুত আমদানির ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে বাজারে সরবরাহ বাড়ে।
- নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য খাদ্য ভর্তুকি ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে।
শুক্রবারের ঢাকার বাজার যেন ছোটখাটো যুদ্ধক্ষেত্র। ক্রেতা-বিক্রেতা দু’পক্ষই চাপের মধ্যে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি হাঁসফাঁস করছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার, যাদের জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রাম এখন দ্রব্যমূল্যের আগুনে আরও জ্বলন্ত হয়ে উঠছে।