০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

কিশোরীদের প্রিয় ক্লেয়ার্স আবার ফিরছে নতুন সাজে

পরিচিত ব্র্যান্ডের নতুন যাত্রা

বছরের পর বছর কিশোরীদের কাছে জনপ্রিয় ক্লেয়ার্স একসময় ছিল কানের দুল পরানো, বন্ধুত্বের নেকলেস আর স্ক্রাঞ্চির জন্য আদর্শ গন্তব্য। কিন্তু সময়ের সাথে এই ফর্মুলা ভেঙে পড়ে। ৬৪ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠানটি এবার নতুন মালিক পেয়েছে—প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম আমেস ওয়াটসন। প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়াত্ব প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে ১৪০ মিলিয়ন ডলারে প্রায় এক হাজার ক্লেয়ার্স স্টোর কিনে নিয়েছে। দেউলিয়াত্ব প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০০ দোকান বন্ধ হয়েছে।

সংস্কারের পরিকল্পনা

আমেস ওয়াটসনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা লরেন্স বার্গার ও টম রিপলি দোকানগুলো পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। তাদের প্রথম কাজ হবে দোকানগুলো পরিষ্কার করা, পুরনো বেগুনি কার্পেট নতুনভাবে উপস্থাপন করা এবং সামাজিক মাধ্যমে দোকানের ‘আগে’ ও ‘পরে’ ছবি শেয়ার করা। এছাড়া তারা নতুন কর্মী নিয়োগ এবং গয়নার সংগ্রহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন।

বার্গার বলেন, “আমরা চাই ক্লেয়ার্সের কমিউনিটিকে আমাদের পরিবর্তনের যাত্রার অংশ করে তুলতে।”

দীর্ঘ ইতিহাস ও অস্থিরতা

ক্লেয়ার্স ১৯৭৮ সালে কানের দুল পরানো শুরু করে। নব্বইয়ের দশকে এটি মার্কিন শপিংমল সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে। কিন্তু গত দুই দশকে কোম্পানিটি আইপিও থেকে শুরু করে বিভিন্ন মালিকানা বদল, ২০১৮ সালে প্রথম দেউলিয়া ঘোষণা এবং চলতি বছরের আগস্টে দ্বিতীয় দেউলিয়ার মুখোমুখি হয়। তখন সামাজিক মাধ্যমে পুরনো গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানটির পতনে আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া জানান।

সমস্যা ব্যবসায়িক মডেলে, ব্র্যান্ডে নয়

টম রিপলির মতে, ক্লেয়ার্সের সমস্যার মূল কারণ ছিল নতুন পণ্যের অভাব, জরাজীর্ণ দোকান এবং প্রায় শূন্য মার্কেটিং। তার ভাষায়, “এটি একটি সমস্যাগ্রস্ত কোম্পানি, কিন্তু সমস্যাগ্রস্ত ব্র্যান্ড নয়।” রিপলির ব্যক্তিগত সংযোগও আছে—তার যমজ মেয়েরা ১২ বছর আগে এখানেই প্রথম কানের দুল পরিয়েছিল।

লিডস মডেল থেকে অনুপ্রেরণা

আমেস ওয়াটসন ২০১৯ সালে লিডস নামের আরেক খুচরা চেইন কিনে পুনরুজ্জীবিত করে। অনলাইন কেনাকাটার চাপে তখন অনেক দোকান বন্ধ হচ্ছিল, কিন্তু তারা উল্টো দোকানগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ায়—নতুন পণ্য, কাস্টমাইজেশন, কর্মী এবং গ্রাহকদের নিয়ে প্রচারণা চালায়। ফলে লিডসের দোকান সংখ্যা ৮০০ থেকে বেড়ে ২,০০০ হয় এবং আয় ৬০০ মিলিয়ন থেকে ১.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়।

ক্লেয়ার্সে নতুন পদক্ষেপ

বার্গার ও রিপলির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ক্লেয়ার্সে এক্সক্লুসিভ ও দামী পণ্য যোগ করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, আগে যে বেস্ট-ফ্রেন্ড নেকলেস ক্রোম বা ব্রাস দিয়ে বানানো হতো এবং দাম ছিল ১২ থেকে ১৮ ডলার, এখন সেটি টাইটানিয়াম বা সিলভার দিয়ে তৈরি করে ২৯ ডলারে বিক্রির পরিকল্পনা আছে।

অবকাঠামো সংস্কার

বেশিরভাগ দোকানই সংস্কারের প্রয়োজন। পুরনো বেগুনি কার্পেটের অবস্থা খারাপ, যা দ্রুত পরিষ্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে। কানের দুল পরানোর স্টেশনগুলোতেও পরিবর্তন আসবে—অমিল অস্বস্তিকর চেয়ারের জায়গায় বসানো হবে নতুন, আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক আসন। ব্যস্ত সময়ে অপেক্ষার ভিড় কমাতে বাড়ানো হবে কর্মীর সংখ্যা।

ক্লেয়ার্সকে ঘিরে গ্রাহকদের স্মৃতি ও আবেগ এখনো টিকে আছে। নতুন মালিকরা বিশ্বাস করেন সঠিক বিনিয়োগ, দোকান সংস্কার ও পণ্যের বৈচিত্র্য যোগ করার মাধ্যমে ব্র্যান্ডটি আবারও কিশোরী প্রজন্মের কাছে তার পুরনো স্থান ফিরে পাবে।-

জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোরীদের প্রিয় ক্লেয়ার্স আবার ফিরছে নতুন সাজে

১০:০০:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পরিচিত ব্র্যান্ডের নতুন যাত্রা

বছরের পর বছর কিশোরীদের কাছে জনপ্রিয় ক্লেয়ার্স একসময় ছিল কানের দুল পরানো, বন্ধুত্বের নেকলেস আর স্ক্রাঞ্চির জন্য আদর্শ গন্তব্য। কিন্তু সময়ের সাথে এই ফর্মুলা ভেঙে পড়ে। ৬৪ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠানটি এবার নতুন মালিক পেয়েছে—প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম আমেস ওয়াটসন। প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়াত্ব প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে ১৪০ মিলিয়ন ডলারে প্রায় এক হাজার ক্লেয়ার্স স্টোর কিনে নিয়েছে। দেউলিয়াত্ব প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০০ দোকান বন্ধ হয়েছে।

সংস্কারের পরিকল্পনা

আমেস ওয়াটসনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা লরেন্স বার্গার ও টম রিপলি দোকানগুলো পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। তাদের প্রথম কাজ হবে দোকানগুলো পরিষ্কার করা, পুরনো বেগুনি কার্পেট নতুনভাবে উপস্থাপন করা এবং সামাজিক মাধ্যমে দোকানের ‘আগে’ ও ‘পরে’ ছবি শেয়ার করা। এছাড়া তারা নতুন কর্মী নিয়োগ এবং গয়নার সংগ্রহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন।

বার্গার বলেন, “আমরা চাই ক্লেয়ার্সের কমিউনিটিকে আমাদের পরিবর্তনের যাত্রার অংশ করে তুলতে।”

দীর্ঘ ইতিহাস ও অস্থিরতা

ক্লেয়ার্স ১৯৭৮ সালে কানের দুল পরানো শুরু করে। নব্বইয়ের দশকে এটি মার্কিন শপিংমল সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে। কিন্তু গত দুই দশকে কোম্পানিটি আইপিও থেকে শুরু করে বিভিন্ন মালিকানা বদল, ২০১৮ সালে প্রথম দেউলিয়া ঘোষণা এবং চলতি বছরের আগস্টে দ্বিতীয় দেউলিয়ার মুখোমুখি হয়। তখন সামাজিক মাধ্যমে পুরনো গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানটির পতনে আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া জানান।

সমস্যা ব্যবসায়িক মডেলে, ব্র্যান্ডে নয়

টম রিপলির মতে, ক্লেয়ার্সের সমস্যার মূল কারণ ছিল নতুন পণ্যের অভাব, জরাজীর্ণ দোকান এবং প্রায় শূন্য মার্কেটিং। তার ভাষায়, “এটি একটি সমস্যাগ্রস্ত কোম্পানি, কিন্তু সমস্যাগ্রস্ত ব্র্যান্ড নয়।” রিপলির ব্যক্তিগত সংযোগও আছে—তার যমজ মেয়েরা ১২ বছর আগে এখানেই প্রথম কানের দুল পরিয়েছিল।

লিডস মডেল থেকে অনুপ্রেরণা

আমেস ওয়াটসন ২০১৯ সালে লিডস নামের আরেক খুচরা চেইন কিনে পুনরুজ্জীবিত করে। অনলাইন কেনাকাটার চাপে তখন অনেক দোকান বন্ধ হচ্ছিল, কিন্তু তারা উল্টো দোকানগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ায়—নতুন পণ্য, কাস্টমাইজেশন, কর্মী এবং গ্রাহকদের নিয়ে প্রচারণা চালায়। ফলে লিডসের দোকান সংখ্যা ৮০০ থেকে বেড়ে ২,০০০ হয় এবং আয় ৬০০ মিলিয়ন থেকে ১.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়।

ক্লেয়ার্সে নতুন পদক্ষেপ

বার্গার ও রিপলির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ক্লেয়ার্সে এক্সক্লুসিভ ও দামী পণ্য যোগ করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, আগে যে বেস্ট-ফ্রেন্ড নেকলেস ক্রোম বা ব্রাস দিয়ে বানানো হতো এবং দাম ছিল ১২ থেকে ১৮ ডলার, এখন সেটি টাইটানিয়াম বা সিলভার দিয়ে তৈরি করে ২৯ ডলারে বিক্রির পরিকল্পনা আছে।

অবকাঠামো সংস্কার

বেশিরভাগ দোকানই সংস্কারের প্রয়োজন। পুরনো বেগুনি কার্পেটের অবস্থা খারাপ, যা দ্রুত পরিষ্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে। কানের দুল পরানোর স্টেশনগুলোতেও পরিবর্তন আসবে—অমিল অস্বস্তিকর চেয়ারের জায়গায় বসানো হবে নতুন, আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক আসন। ব্যস্ত সময়ে অপেক্ষার ভিড় কমাতে বাড়ানো হবে কর্মীর সংখ্যা।

ক্লেয়ার্সকে ঘিরে গ্রাহকদের স্মৃতি ও আবেগ এখনো টিকে আছে। নতুন মালিকরা বিশ্বাস করেন সঠিক বিনিয়োগ, দোকান সংস্কার ও পণ্যের বৈচিত্র্য যোগ করার মাধ্যমে ব্র্যান্ডটি আবারও কিশোরী প্রজন্মের কাছে তার পুরনো স্থান ফিরে পাবে।-