ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন উদ্যোগ
ওয়াশিংটন থেকে জানা গেছে, রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ডের পর ট্রাম্প প্রশাসন রাজনৈতিক বক্তব্যের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রশাসন যেসব বক্তব্যকে আপত্তিকর মনে করছে, সেগুলো দমন করতে ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করা হচ্ছে।
বুধবার ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (FCC) চেয়ারম্যান ইঙ্গিত দেন, এবিসি চ্যানেল কৌতুক অভিনেতা জিমি কিমেলের মন্তব্যের কারণে শাস্তির মুখে পড়তে পারে। ওই দিন রাতেই ডিজনি, যা এবিসির মালিক প্রতিষ্ঠান, ঘোষণা করে যে কিমেলের অনুষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
অ্যান্টিফা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা
এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অ্যান্টিফাকে একটি ‘বড় সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। একই সপ্তাহে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, ঘৃণামূলক বক্তব্যের কারণে মানুষকে অভিযুক্ত করা হতে পারে। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা গোপনে বামপন্থী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
ট্রাম্প শিবিরের আলোচনায় উঠে এসেছে ধনকুবের জর্জ সোরোস ও অন্যান্য বামপন্থী ফাউন্ডেশনকে দুর্নীতিপূর্ণ সংগঠনের আইনে (RICO) তদন্তের বিষয়টি। এমনকি বামপন্থী অলাভজনক সংস্থাগুলোর করমুক্ত মর্যাদা পুনর্বিবেচনার কথাও ভাবা হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ
প্রশাসনের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে শতাধিক ফাউন্ডেশন ও সংগঠন। তারা এক খোলা চিঠিতে জানায়, মতপ্রকাশ দমন, বিরোধী মতামতকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন এবং দাতব্য কার্যক্রম সীমিত করা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
জিমি কিমেল তার অনুষ্ঠানে বলেন, “এমএজিএ গোষ্ঠী মরিয়া হয়ে চার্লি কার্কের হত্যাকারীকে নিজেদের বাইরে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে এবং এ ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে।” এ বক্তব্যকে ট্রাম্প শিবির ভ্রান্ত প্রচার হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সমর্থকদের বলেন, “যদি কারও মুখে চার্লির হত্যায় আনন্দ প্রকাশ দেখতে পান, তাদেরকে চিহ্নিত করুন, এমনকি তাদের কর্মস্থলেও জানান।” প্রেসিডেন্টের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রও লিখেছেন, এ ধরনের মন্তব্যকারীরা “ক্যানসেল কালচারের শিকার নয়, বরং তারা ভুগছে ‘কনসিকোয়েন্স কালচারের’ কারণে।”
রক্ষণশীল নীতির সাথে সংঘাত
সমালোচকরা, এমনকি কিছু রিপাবলিকানও, বলেছেন প্রশাসনের এসব উদ্যোগ দীর্ঘদিনের রক্ষণশীল নীতির বিপরীতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের রিপাবলিকান প্রার্থী বিতর্কে ট্রাম্প বলেছিলেন, “এই দেশের বড় সমস্যা হলো রাজনৈতিক শুদ্ধতা।”
দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই তিনি এক নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করেছিলেন, সরকার কোনোভাবেই মার্কিন নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। অথচ এখন তার প্রশাসন সমালোচকদের দমন করছে বলে অভিযোগ উঠছে।
কিমেলের অনুষ্ঠান স্থগিত ও টিভি লাইসেন্স বিতর্ক
ডিজনির সিদ্ধান্তের পর এবিসি নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত কয়েকটি বড় সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান কিমেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। এ প্রসঙ্গে FCC চেয়ারম্যান ব্রেনডান কার বলেন, “আমরা সহজভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারি, অথবা কঠিন পথে যেতে হবে। যদি কোম্পানিগুলো ব্যবস্থা না নেয়, তবে FCC আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে।”
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিমেলের অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এনবিসিকে আহ্বান জানান, তারা যেন নিজেদের কৌতুক অভিনেতা জিমি ফেলন ও সেথ মেয়ার্সকেও বরখাস্ত করে। তিনি বলেন, “তাদের রেটিংও ভয়ানক। গো এনবিসি!”
বৃহস্পতিবার তিনি ইঙ্গিত দেন, তার প্রশাসন বিরোধী কণ্ঠস্বর প্রচার করা টিভি নেটওয়ার্কগুলোর লাইসেন্সও বাতিল করতে পারে।
ঘৃণাবাচক বক্তব্য প্রসঙ্গে বিতর্ক
অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, ঘৃণামূলক বক্তব্যে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার বিভাগের তদন্ত হতে পারে। এমনকি চার্লি কার্কের ছবি ছাপতে অস্বীকৃতি জানানো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেও অভিযুক্ত করা হতে পারে। পরে তিনি স্পষ্ট করেন, কেবল সেই বক্তব্যকেই লক্ষ্য করা হবে যা সহিংসতার হুমকির পর্যায়ে পৌঁছে।
তবে তার এই মন্তব্য কিছু রক্ষণশীল আইনপ্রণেতার বিরক্তির কারণ হয়েছে। টেক্সাসের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান চিপ রয় লিখেছেন, “‘ঘৃণাবাচক বক্তব্য’ ধারণাটাই আসলে বামপন্থী ও স্বৈরাচারীদের হাতিয়ার, রক্ষণশীলদের নয়।”
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বাকস্বাধীনতা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সমালোচকদের মতে, প্রশাসন বিরোধীদের দমন করছে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করছে। সমর্থকদের মতে, এ পদক্ষেপ রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য জরুরি।