০১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারত আগেই জানতো পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি হচ্ছে

পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি

পাকিস্তান ও সৌদি আরব বুধবার এক যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয়েছে, যে কোনো একটি দেশের ওপর আগ্রাসন চালানো হলে সেটি উভয় দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ইসরায়েল কাতারে হামাস নেতাদের ওপর সামরিক হামলা চালানোর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতও সামনে আসে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারত এই চুক্তিকে ঘিরে জানিয়েছে, তারা নিজেদের জাতীয় স্বার্থ ও সর্বাত্মক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার বলেন, “ভারত ও সৌদি আরবের কৌশলগত অংশীদারিত্ব বহুমাত্রিক এবং গত কয়েক বছরে তা অনেক গভীর হয়েছে। আমরা আশা করি এই অংশীদারিত্বে উভয়ের স্বার্থ ও সংবেদনশীলতা বিবেচনায় রাখা হবে।”

আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট

এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় আরব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণ, বিশেষ করে ইরান ও কাতারে হামলা, আঞ্চলিক নিরাপত্তায় নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যদি ভারতের বিরুদ্ধে এই চুক্তি ব্যবহার করে, তবে তা নয়াদিল্লির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পাকিস্তান-সৌদি ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও ভারতের ভূমিকা

সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্ক রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে ঋণ ও সাহায্য দিয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে সৌদি আরবের কৌশলগত সম্পর্কও গত এক দশকে গভীর হয়েছে। দুই দেশ সেনা ও নৌবাহিনীর যৌথ মহড়া শুরু করেছে সম্প্রতি।

ভারত আগে থেকেই জানত পরিকল্পনার কথা

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আগে থেকেই জানত পাকিস্তান ও সৌদি আরব এ ধরনের চুক্তি করতে পারে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুক্তির ফলে জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় কী প্রভাব পড়তে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনেকের মতে, ইসরায়েলের কাতারে হামলার কারণে এই চুক্তি দ্রুত কার্যকর হয়েছে।

চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশিত নয়

চুক্তির পূর্ণাঙ্গ পাঠ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। যৌথ বিবৃতিতে কেবল ‘সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা’র উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে আইনগতভাবে এই বাধ্যবাধকতার প্রকৃতি মূল্যায়ন করা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

অন্যান্য দেশের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও কাতার এই চুক্তিতে যুক্ত হতে পারে কিনা—এ প্রশ্নে জয়সওয়াল বলেন, ভারতের এই দুই দেশের সঙ্গে বিস্তৃত সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে কথা বলেছেন। একই সময়ে ইউএইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রীম আল হাশিমি নয়াদিল্লিতে এসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এই প্রতিরক্ষা চুক্তিতে অন্যান্য আরব দেশ যোগ দিতে চাইলে দরজা খোলা রয়েছে। কোনো শর্ত নেই যা তাদের প্রবেশে বাধা দেবে। টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের যা আছে, আমাদের সক্ষমতা, সবই এই চুক্তির অধীনে কাজে লাগবে।”

ভারত আগেই জানতো পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি হচ্ছে

১১:২৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি

পাকিস্তান ও সৌদি আরব বুধবার এক যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয়েছে, যে কোনো একটি দেশের ওপর আগ্রাসন চালানো হলে সেটি উভয় দেশের ওপর আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ইসরায়েল কাতারে হামাস নেতাদের ওপর সামরিক হামলা চালানোর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতও সামনে আসে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারত এই চুক্তিকে ঘিরে জানিয়েছে, তারা নিজেদের জাতীয় স্বার্থ ও সর্বাত্মক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার বলেন, “ভারত ও সৌদি আরবের কৌশলগত অংশীদারিত্ব বহুমাত্রিক এবং গত কয়েক বছরে তা অনেক গভীর হয়েছে। আমরা আশা করি এই অংশীদারিত্বে উভয়ের স্বার্থ ও সংবেদনশীলতা বিবেচনায় রাখা হবে।”

আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট

এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় আরব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণ, বিশেষ করে ইরান ও কাতারে হামলা, আঞ্চলিক নিরাপত্তায় নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যদি ভারতের বিরুদ্ধে এই চুক্তি ব্যবহার করে, তবে তা নয়াদিল্লির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পাকিস্তান-সৌদি ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও ভারতের ভূমিকা

সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্ক রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে ঋণ ও সাহায্য দিয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে সৌদি আরবের কৌশলগত সম্পর্কও গত এক দশকে গভীর হয়েছে। দুই দেশ সেনা ও নৌবাহিনীর যৌথ মহড়া শুরু করেছে সম্প্রতি।

ভারত আগে থেকেই জানত পরিকল্পনার কথা

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আগে থেকেই জানত পাকিস্তান ও সৌদি আরব এ ধরনের চুক্তি করতে পারে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুক্তির ফলে জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় কী প্রভাব পড়তে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনেকের মতে, ইসরায়েলের কাতারে হামলার কারণে এই চুক্তি দ্রুত কার্যকর হয়েছে।

চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশিত নয়

চুক্তির পূর্ণাঙ্গ পাঠ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। যৌথ বিবৃতিতে কেবল ‘সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা’র উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে আইনগতভাবে এই বাধ্যবাধকতার প্রকৃতি মূল্যায়ন করা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

অন্যান্য দেশের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও কাতার এই চুক্তিতে যুক্ত হতে পারে কিনা—এ প্রশ্নে জয়সওয়াল বলেন, ভারতের এই দুই দেশের সঙ্গে বিস্তৃত সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে কথা বলেছেন। একই সময়ে ইউএইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রীম আল হাশিমি নয়াদিল্লিতে এসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এই প্রতিরক্ষা চুক্তিতে অন্যান্য আরব দেশ যোগ দিতে চাইলে দরজা খোলা রয়েছে। কোনো শর্ত নেই যা তাদের প্রবেশে বাধা দেবে। টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের যা আছে, আমাদের সক্ষমতা, সবই এই চুক্তির অধীনে কাজে লাগবে।”